Skip to content
Facebook Twitter Google-plus Youtube Microphone
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Menu
  • Home
  • About Us
  • Contact Us
Swasthyer Britte Archive
Search
Generic filters
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Menu
  • আরোগ্যের সন্ধানে
  • ডক্টর অন কল
  • ছবিতে চিকিৎসা
  • মা ও শিশু
  • মন নিয়ে
  • ডক্টরস’ ডায়ালগ
  • ঘরোয়া চিকিৎসা
  • শরীর যখন সম্পদ
  • ডক্টর’স ডায়েরি
  • স্বাস্থ্য আন্দোলন
  • সরকারি কড়চা
  • বাংলার মুখ
  • বহির্বিশ্ব
  • তাহাদের কথা
  • অন্ধকারের উৎস হতে
  • সম্পাদকীয়
  • ইতিহাসের সরণি
Search
Generic filters

হাবিব’স

IMG_20200731_233636
Dr. Ritam Joarder

Dr. Ritam Joarder

Radiation Oncologist
My Other Posts
  • August 1, 2020
  • 8:58 am
  • One Comment

অনেকেই জানেন। তবু যাঁরা জানেন না তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলে রাখি, “হাবিব’স” ভারতের একটি জনপ্রিয় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন খুচরো বিপণী। কিসের বিপণী? আজ্ঞে বিশ্বাস না করলেও বলি, ক্ষৌরকর্মের! ঝাঁ চকচকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্টোরে সুবেশা তরুণ তরুণীরা আপনাকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবে, আপনার মাথা মুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। কাজ শেষ হলে মাথা হালকা আর মেজাজ এত ফুরফুরে হয়ে বেরিয়ে আসবেন যে পকেট কতটা হালকা হয়েছে টের-টিও পাবেন না। ইউক্যালিপটাস গাছ আর আদি ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়ের কোন শাখা না থাকলেও, সারা ভারতে এই বিপণীর প্রায় সাড়ে আটশো শাখা আছে।

তবে ‘নরসুন্দর’ বলতে যে চিরাচরিত ধুলোমাখা ছবিটা আপনার মনের এক কোনে চাপা পড়ে আছে, অর্থাৎ সেই ধবধবে ক্ষার কাচা ধুতি পরা এক স্বল্পকেশ প্রৌঢ় তাঁর কাঠের বাক্স খুলে অ্যালুমিনিয়ামের সবুজ ছ্যাতলা পড়া বাটি, পিতলের কাঁচি আর ক্ষুর বাগিয়ে
বসলেন,আর আপনিও খবরের কাগজের মাঝখানে করা গোল ফুটো দিয়ে মাথা গলিয়ে আপনার ‘চির উন্নত শির’ তাঁ- সামনে বিনা বাক্যব্যয়ে সমর্পণ করলেন, হাবিব’স- এর আজকের সার্ভিস তার থেকে কয়েক আলোকবর্ষ এগিয়ে। এরা জাতে নাপিত, তালে ঠিক! তাই নাপিত বলে এদের হতচ্ছেদ্দা করবেন না, বরং বলুন ‘হেয়ার ড্রেসার’ বা ‘কেশবিন্যাস-শিল্পী’। তিনপুরুষের কারবার মশাই, বুঝলেন তো! আর খরিদ্দার যে সে লোক নন, স্বয়ং ভাইসরয় লর্ড মাউন্টব্যাটেন থেকে শুরু করে চাচা নেহেরু, মায় আমাদের প্রিয় কালাম সাহেবও।

এবার ভাবছেন এই ভর সন্ধ্যেবেলা আমি হঠাৎ হাবিব’স এত গুণগান করছি কেন? আজ্ঞে না আমি এদের কাছে যাই না, কারণ পকেটের সে রেস্ত আমার নেই। তাই আমাকে ওরা ডিসকাউন্ট কুপন দেয় না, মোবাইল মেসেজ অবধি পাঠায় না। কিন্তু এর পরে যে গল্পটা বলতে চলেছি তার সাথে হাবিব’স এর একটা বিশেষ সম্পর্ক আছে, সেকারণেই এই গৌরচন্দ্রিকার অবতারণা। আসলে এক প্রিয় বন্ধুর অনুরোধ ছিল এই করোনা মহামারীর অতি দুঃসময়ে কোন বিষাদের গল্প না ফেঁদে একটা ধনাত্মক (পজিটিভ) কিছু শোনাতে। তাহলে সেটাই শুরু করা যাক আপাতত।

********
এটা সেই সময়ের কথা যখন ডাইনোসর যুগ শেষ হয়ে গেছে কিন্তু করোনা যুগ শুরু হয় নি। সে সময় মানুষ পৃথিবীর নানা স্থানে অবাধে বিচরণ করতে পারতো (পাসপোর্ট ভিসা সহ)। ততদিনে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখেছে, চাকার ব্যবহার শিখেছে কিন্তু থুতনির তলায় মাস্ক পড়া শিখতে তখনও কয়েক মাস দেরী। তবু মানুষ সুখী ছিল, নির্ভাবনায় একে অপরের পিন্ডি চটকাতো আর আর সপ্তাহে ছদিন আমাদের হাসপাতালের বহির্বিভাগের ছোট্ট ঘরখানায় সকাল দশটায় এমন একটা অবস্থা তৈরী করত যাকে ইতিহাসে বলা হয়েছে ‘মাৎসান্যায়’।

এমনই এক বসন্ত দিনে যখন সামনে রাখা ফাইলের পাহাড় ঘিরে পাঁচজন ডাক্তার পাঁচন গেলা বাংলার পাঁচের মত মুখ করে রোগীদের সাথে তরজা-গানের লড়াই চালাচ্ছি, উল্টোদিকে এসে দাঁড়ালেন এক পঞ্চবিংশতিবর্ষীয়া যুবতী। বয়েজ কাট চুল, জিনস আর ম্যাচিং শার্টের এই মূর্তি নেহাতই অপরিচিত নন। আগেও দেখেছি, বেশ কয়েকবার। আজ অবশ্য একেবারে সরাসরি তাকিয়ে হাসলাম। আমার দিকে তাকিয়ে উনিও একটা মৃদু হাসি ফিরিয়ে দিলেন। মনে মনে ভাবলাম ওর ফাইলটা আজ আমার কাছে এলেই ভালো হত, কিছু কথা জানার ছিল। যাই হোক কিছু একটা ভেবে মনটা বেশ হ্যাপি হ্যাপি হয়ে উঠেছিল। তাই সাতপাঁচ আর না ভেবে জানার কথাগুলো জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। বলাই বাহুল্য আশেপাশের সিনিয়র জুনিয়র সবাই সব শুনতেও পেল। তা সে শুনুক গে যাক!

এই অবধি পড়ে কেউ কেউ হয়তো নাক সিঁটকালেন, ‘রামো ছিঃ ছিঃ! একি ডাক্তার? কোথায় শুদ্ধ চিত্তে মন দিয়ে রোগীর সেবা করবে। তা নয়তো কি সব উদ্ভট চিন্তা!’ অথবা কেউ টানটান হয়ে বসে ভাবলেন ‘বাঃ বেশ একটা রোমান্টিক দিকে যাচ্ছে তো’। ভদ্রমহোদয় ও মহোদয়াগণ ,হতেই পারে আপনি যা ভাবছেন সেটাই ঠিক। অথবা আপনি ভুল, অন্যরা ঠিক। অথবা উভয়েই ভুল। কিন্তু সেটা জানতে হলে আমার সাথে আপনাদেরও বেশ কয়েক মাস পিছিয়ে যেতে হবে।

একদিন সকালে ইনডোর ফিমেল ওয়ার্ডে রাউন্ড দিচ্ছি, সাথে অনিচ্ছুক নিরুপায় কয়টি স্যাঙ্গাতও আছে। তিন নাম্বার বেডের কাছে গিয়ে দেখলাম এক বছর পঁচিশের যুবতী বেডে বসে। তার মুখ ফ্যাকাশে, মলিন। এই বয়সে মাথায় প্রায় একটিও চুল নেই, আর সেটা কতটা কষ্টদায়ক তার মুখের দিকে তাকালেই টের পাওয়া যায়। ট্রিটমেন্টের ইতিহাস ঘেঁটে মনে পড়ল ওর ওভারিতে ক্যান্সার, অপারেশন হয়েছে। এরপরের ধাপ অর্থাৎ কেমোথেরাপি চলছে। আর দুবার হলেই আপাতত এই চিকিৎসা যন্ত্রণা থেকে তার মুক্তি। এক্ষেত্রে বলে রাখি ওর কেমোথেরাপিটা সপ্তাহে সপ্তাহে ভেঙ্গে দিতে হত প্রতিটি সাইকেলেই। এটাই ওর চিকিৎসার নিয়ম। আপনাদের নিজের বা কোন পরিচিতের অন্যরকম ভাবে এই চিকিৎসা হয়ে থাকলে তুলনা করে ঘাবড়াবেন না। এক এক জনের রোগ অনুযায়ী চিকিৎসার নিয়ম আলাদা।

তা আমাদের রোগিণীটিকে কিছু রুটিন প্রশ্ন করে দুএকটা হুঁ-হ্যাঁ আর মাথা নাড়া-চাড়া কিছু উত্তর পেলাম না। নিদেন পক্ষে একটা গ্যাসের ওষুধ বা ভিটামিন লিখে দেওয়ার বাঙালীর যে চিরকালীন আর্তি তাও নয়। ও বোধহয় ততদিনের যাবতীয় অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বুঝে গিয়েছিল যে, সব রোগ গ্যাস মাথায় উঠে গিয়ে হয় না।

আমাদের প্ল্যান ছিল সেদিনের কেমো দিয়ে এক-দুদিনের মধ্যে মেয়েটিকে ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু আমাদের প্ল্যানের ওপরে কলম চালানোর জন্য ওপরে কেউ বসে আছে কি না সেকি ছাই আমরা আদৌ জানতাম? যেদিন ডিসচার্জ দেওয়ার কথা সেদিনই মেয়েটির এলো ধুম জ্বর। অতএব ‘গাঁওবালো, ডিসচার্জ ক্যান্সেল’। আমরা নতুন করে জ্বরের ট্রিটমেন্ট শুরু করলাম। সাথে পচা ডাক্তারদের মতো কিছু টেস্টও করতে পাঠালাম। যথারীতি যা আশংকা করছিলাম তাই রিপোর্টে আসল, রক্তের সব ধরনের কণিকা আর হিমোগ্লোবিন সব কমে গেছে। এমনিতে এসবে আমরা ঘাবড়াই না। ওসব দেখে দেখে গা সয়ে গেছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘাবড়ালাম, কারণ এত অল্প বয়সে এই কেমোথেরাপিতে এরকমটা সাধারণত হয় না। তার সাথে গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে জুটল আরেকটা খারাপ রিপোর্ট, ওর রক্তের যাবতীয় যা লবণ আছে (মানে রোগীর আত্মীয় পরিজনকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম বোঝাতে আমরা ঐ ‘লবণ’ ই বলি) সব এক ধার সে কমে গেছে। বেশ সে না হয় হল, মাধ্যমিকে একবছর ইতিহাসের এর প্রশ্ন না হয় কিছু কম কমন পড়ল, তা বলে ছেড়ে আসা তো যায় না। স্যার বলেছেন খাতা ভরিয়ে আসতে হবে। অতএব আমরা সব ধরনের চেষ্টা শুরু করলাম। চামড়ার তলায় ইন্জেকশন, রক্ত, প্লেটলেটস, অ্যান্টিবায়োটিকস, আর ঘন ঘন একে অন্যকে ফোন কিছুই বাকী রইল না। কিন্তু আমাদের সব চেষ্টার মুখে ছাই দিয়ে রোগিণীটির শারীরিক অবস্থা আর ও খারাপ হতে লাগল।

এই অবধি গল্পের যে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের সাথে কারোর আলাপ করানো হয় নি, সে হল মেয়েটির দিদি। গত কয়েকমাসে ওর চিকিৎসা আর গত কয়েক দিনের ক্রমাগত খারাপ হতে থাকা শরীরের পাশে সর্বদা ছায়া সঙ্গী হয়ে থেকেছে যে। আক্ষরিক অর্থেই ছায়াসঙ্গী, কারণ প্রতিটি মুহূর্তেই সে এমন নীরবে কাজ করে যায় যে তার অস্তিত্ব টের পাওয়া মুশকিল।

ধীরে ধীরে আমাদের সব চেষ্টা যে বিফলে যাচ্ছে বেশ টের পাচ্ছিলাম। প্যাকেট প্যাকেট রক্ত আর প্লেটলেটস দিয়ে কিছু বাড়ছে না। ভালো ভালো অ্যান্টিবায়োটিকস দিয়ে জ্বর কমছে না। সোডিয়াম কারেকশন হয় তো ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম কমে যায়। কোনদিক সামলে কোনদিক ঠিক করব সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না। এরপর শুরু হল ব্লিডিং আর শ্বাস কষ্ট। মেয়েটি আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে পড়তে লাগল। তার মুখ শুকিয়ে গেছিল, চোখ কোটরে ঢুকে গিয়েছিল এই অল্প সময়েই। আমাদের রোজকার রাউন্ডের আলোচনা, সকলের গম্ভীর মুখ আর নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে সে বোধকরি বুঝতে পারছিল, কি পরিণতি অপেক্ষা করছে তার জন্য।

অন্যান্য বিভাগের ডাক্তাররা আগেই দেখে গিয়েছিলেন। তাদের পরামর্শ মেনে যাবতীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হল। কিন্তু উন্নতির এতটুকু লেশমাত্র দেখা গেল না। আমরাও ক্রমে হতাশ হতে লাগলাম, বিরক্ত হতে লাগলাম। আমি আমার জুনিয়রকে, সে তার জুনিয়রকে বকাঝকা করে ফেলল। আসলে হঠাৎ একজন এত কম বয়সী রোগী, যার বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল, সে বাঁচবে কিনা সেই অবস্থায় এসে পৌঁছানো, এটা আমাদেরই মানতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল।

অবশেষে সেই দিন এল, যেদিন বিকেল এর রাউন্ডে গিয়ে দেখি মেয়েটির জ্ঞান নেই, গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, সারা গায়ে ব্লিডিং-এর অজস্র স্পট, আর প্রেসারও অনেকটাই কম, সাথে রীতিমত শ্বাসকষ্ট হচ্ছে অক্সিজেন দেওয়া সত্ত্বেও। ততদিনে আমাদের তূণীরের সব তীর প্রয়োগ করা হয়ে গিয়েছে। জেনারেল ওয়ার্ডে নতুন করে কিছু দেওয়ার ছিল না। এদিকে আই সি ইউ-এও বেড নেই,বারকয়েক খোঁজ নেওয়া হয়েছে। মেয়েটির দিদিকে একপাশে ডাকলাম। জানালাম ওর শারীরিক অবস্থার কথা এবং আমাদের এই আশঙ্কার কথা যে যেকোন মুহূর্তে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে,তাই বাড়ির লোকদের ফোন করে ডেকে নিতে। এই প্রথম ওর দিদির মুখে আমরা প্রতিক্রিয়া দেখলাম,আর সেটা ছিল দুচোখ বেয়ে নেমে আসা জলের ধারা।

বাইরে অন্ধকার জমাট বেঁধে আসছিল, আর আমাদের মনের ভিতরেও। ক্যান্টিনে চা এর কাপ হাতে আমরা ক’জন এটাই আলোচনা করছিলাম, যে ঠিক কি হল? কেন এত কিছু করেও কিছু রেসপন্স পাওয়া গেল না? আমরা সবাই যখন মন খারাপ করে কেউ বাড়ি, কেউ হোস্টেলে ফিরছি তখন সবাই নিশ্চিত ছিলাম পরের দিন সকালে গিয়ে দেখব ইনডোর ফিমেল ওয়ার্ডের তিন নম্বর বেডটা খালি।

কিন্তু পরের দিন কি হবে আজ অবধি কেই বা আন্দাজ করতে পেরেছে? সেদিন রাতে খারাপ খবর নিয়ে কোন ফোন এল না। বরং পরের দিন সকালে গিয়ে দেখি তিন নম্বর বেডের বাসিন্দা চোখ মেলেছেন, তাঁর জ্বর কমেছে, প্রেসারটাও নর্মালের প্রায় কাছাকাছি। অবশ্য এতে ওঁর দিদির চোখ খানিকটা উজ্বল হয়ে উঠলেও, আমাদের মনে বিন্দুমাত্র আশা জাগে নি। এসব মিরাকল নভেল-সিনেমায় হয়। বাস্তবে এরকম রোগী সাধারনত খারাপের দিকেই ঢলে পড়েন। তবে আমাদের যাবতীয় অনুমানকে ভুল প্রমাণ করে এরপরের কয়েকদিন তার অবস্থার একটু একটু করে আরও উন্নতি হতে লাগল। চাকা যখন উল্টো দিকে ঘুরেছে, আমরাই বা হাত গুটিয়ে বসে থাকি কেন? অতএব নতুন উদ্যমে লেগে পড়া গেল। অবশেষে আরও হপ্তা খানেকের পরে তিন নম্বর বেডের মালকিন বেডে উঠে বসলেন। ততদিনে সে আমার কাছে তুমি থেকে ‘তুই’ হয়েছে। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা করতে করতে প্রায়শই আপনি-গুলো তুমি আর তুমি-গুলো তুই হয়ে যায়। এগুলো কোনো হিপোক্রেটিক ওথ অথবা কনজিউমার প্রোটেকশন অ্যাক্টের প্যারাগ্রাফ কোথাও লেখা থাকে না, আপনা আপনিই হয়ে যায়!

এরপরে প্রায় মাস তিনেক কেটে গেছে। আউটডোরে একদিন হাজির মেয়েটি, সাথে সবসময়ের সঙ্গী তার দিদি। তার হাতে একটা রিপোর্ট ,আর সেই রিপোর্টে লেখা আছে তার ভাগ্য। আমরাও একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম এই রিপোর্টটা নিয়ে। যদিও সে যমের বাড়ির দোরগোড়া থেকে ফিরে এসেছে, কিন্তু তার ক্যান্সারের চিকিৎসার শেষটুকু যে আর শেষ করা যায় নি। আর ক্যান্সার যে এসব গাফিলতিকে ক্ষমা করে না, তা আমাদের থেকে ভালো আর কে জানে? রিপোর্টটা মন দিয়ে পড়লাম, আমার মুখ আস্তে আস্তে গম্ভীর হল। আমার পাশের ডাক্তারের হাতে দিলাম আর গম্ভীর মুখে বললাম ‘দ্যাখ কি লেখা আছে। এবারে কি করবি বল?’

সে পড়ল, আর আমার দিকে খানিকটা অবাক চোখে তাকাল। বাকীরাও তাকাল, তারপর প্রত্যেকের হাতে হাতে ঘুরল সেই রিপোর্ট। সবাই একে একে সেটা পড়ল, আর প্রত্যেকেই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল। সবশেষে আমি তাকালাম, ওদের দিকে। ওদের মানে মেয়েটি আর তার দিদির দিকে। পাথরের মত কঠিন মুখে মেয়েটি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু কিচ্ছুটি জানতে চায় নি‌। ওর দিদি একরাশ উৎকন্ঠা নিয়ে প্রশ্ন করল ‘স্যার রিপোর্ট কিরকম? খুব খারাপ না?’

আমি ওর প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। বরং মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তুই কি কোন কাজ করিস?’

সে এতক্ষণে মুখ খুলল, এবং গলা একটুও না কাঁপিয়ে বলল, ‘করতাম। ট্রিটমেন্ট শুরুর পরে আর করতে পারিনি। ঠিক হয়ে গেলে আবার করব।’

এবার আমি রিপোর্টের দিকে আরেকবার তাকিয়ে হাসিমুখে বললাম, ‘তাহলে এবার করতে পারবি, তোর ব্লাড রিপোর্ট আর স্ক্যান রিপোর্ট অনুযায়ী তুই সেরে গিয়েছিস। তবে রেগুলার চেক আপ করাতে হবে কিন্তু।’

এত আনন্দের খবর শুনে ওর কাছ থেকে যে উচ্ছাস আশা করেছিলাম সেসব কিছুই দেখা গেল না। সে শুধু আলতো হেসে মাথা নাড়ল। পাশ থেকে ওর দিদি চোখের জল মুছতে মুছতে বলল, ‘স্যার আপনার গম্ভীর মুখ দেখে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এরকম মজা আর করবেন না।’

সত্যিই হয়তো অমনটা করা আমাদের উচিত হয় নি। কিন্তু ঐ রিপোর্টটা দেখে আমরা সকলেই এত খুশী হয়েছিলাম, যে এইটুকু দুষ্টুমি করার সুযোগ ছাড়িনি সেদিন।

এরপরে আবার তিনমাস পরের কথা। যখন ডাইনোসর যুগ কেটে গেছে আর করোনাযুগ তখনও শুরু হয় নি। সেই সময় একদিন আউটডোরে এল সেই মেয়েটি, এবারে একা। একটা ফাইল দেখতে দেখতে হঠাৎ খেয়াল করলাম ওকে। ততদিনে ওর মাথাভরা চুল। তবে লম্বা নয়, ছেলেদের মতো ছোট। জিনস আর শার্টে দিব্যি স্মার্ট লাগছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম, ও আমার দিকে তাকিয়ে একটা হাসিতে প্রত্যুত্তর জানাল। আমার মনে হচ্ছিল ওর ফাইলটা আমার কাছে এলে জানতে চাইতাম এখন কেমন আছে? কোন চাকরী পেয়েছে কিনা? ওর দিদি কেমন আছেন? অবশেষে সাতপাঁচ না ভেবে,জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি রে কেমন আছিস? জব করছিস কিছু? হেয়ার কাট-টা তো দারুণ হয়েছে।’

সে এই প্রথম একগাল হেসে উত্তর দিল, ‘ভালো আছি। একটা চাকরী করছি দুমাস হল। হাবিব’স এ’।

*****

আমরা প্রত্যেকে আজ করোনার ভয়ে দিশাহারা। সবাই প্রতি মুহূর্তে এটাই ভাবছি যে, এই রোগ হলে কি করব? কিভাবে সামলাবো পরিবারকে? সামাজিক অসহযোগিতাকে? কোথায় ভর্তি করব?

অনেকের বয়স্ক মা-বাবা হাসপাতালে ভর্তি। তাদের কারোর ডায়াবেটিস, কারোর হার্টের অসুখ। কারোর জ্বর কমছে না, তো কেউ ভেন্টিলেশনে। সবসময় মনে হচ্ছে এই বুঝি সব শেষ। এই বুঝি আর প্রিয়জনকে দেখতে পাব না। চারিদিকে দিনরাত শুধু নেতিবাচক আলোচনায় আমদের মন ক্লান্ত, হতাশ। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই হয়তো এর থেকেও অনেক কঠিন সময় এসেছে, যেটাকে আমরা পেরিয়ে এসেছি তাই ভুলে গিয়েছি। এর থেকেও কঠিন সময় হয়, যখন বাঁচার ক্ষীণ আশাটুকুও থাকে না। সবাই হাল ছেড়ে দেয়। সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তার পরেই এমন একটা কিছু ঘটে যেটা আমরা ভাবি নি, আশা করি নি। মানুষ বেঁচে ফেরে যুদ্ধ থেকে, পরমাণু বোমার আঘাতে নিশ্চিহ্ন-প্রায় হিরোশিমা নাগাসাকি থেকে, হাসপাতালের আই সি ইউ থেকেও।

তাই আর মৃত্যুর আশঙ্কার আলোচনা নয়, বরং তার থেকে বেঁচে ফেরার গল্প হোক। হেরে যাওয়া নয়, জিতে আসার গল্প হোক। প্রত্যেকদিন নতুন ক’জন আক্রান্ত হলেন বা মারা গেলেন সেই গল্প নয়, বরং কজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন সেই গল্প হোক। যে গল্প গুলো বাঁচার ভরসা দেয়, মনের জোর বাড়ায় আগামী কয়েক মাস শুধু সেই সব গল্প হোক।

এই বোনটার মত মৃত্যুকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, ক্যান্সারকে দশ গোল দিয়ে, হাবিব’স এর নতুন হেয়ার কাটের আরেকটা গল্প হোক।

(ওর নাম লিখলাম না। নামে কি আসে যায়।)

PrevPreviousকরোনা সাগরে
Nextধরা পড়েছে, ধরা পড়েছেNext
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Partha Das
Partha Das
2 years ago

অসাধারন।

0
Reply

সম্পর্কিত পোস্ট

গ্রামের বাড়ি

March 19, 2023 No Comments

১৪ দিন দশেক পরে দেবাঙ্কন এসে হাজির। বলল, “তোদের কফি ধ্বংস করতে এলাম। বাপরে বাপ, যা গেল! যাক, চার্জশিট হয়ে গেছে। সাংঘাতিক কনস্পিরেসি। সোমেশ্বর নাথ

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

March 18, 2023 No Comments

খবরের কাগজে কত খবরই তো আসে। বড় একটা অবাক হই না। কিন্তু একখানা খবর পড়ে একেবারে চমকে গেলাম। কলকাতার একটি নামকরা কর্পোরেট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে

রম্য: হোলিকা দহন

March 17, 2023 No Comments

দখিনা হাওয়া জবুথবু শীতের শরীরকে দেয় দোলা। শুকনো পাতা ঘূর্ণি বাতাসে ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে যায়। দিন বাড়ে। বয়সও। ধরে রাখা যায় কি তাকে? যায় না।

ব্যক্তিগত সখ আর অভ্যাস

March 16, 2023 No Comments

কয়েকজনকে আমার সানুনয় অনুরোধ করা আছে, ফেসবুকে নতুন লেখা দিলেই আমাকে জানাতে। তেমনই একজন কাছের লেখক সোমা ব্যানার্জি দিদি। তাঁর শেষের তাঁর নিজেরই কিছু ব্যক্তিগত

অথ বাথরুম কথা

March 15, 2023 No Comments

এমা, কি ঘেন্নার কথা মা গো! এতকাল মাগনার ফেসবুকে তবু ইনিয়ে বিনিয়ে দু চাট্টে বস্তাপচা গপ্পো লিখছিল, এ যে একেবারে বাত্তুৃম নিয়ে টানাটানি! আরে, গাইনোর

সাম্প্রতিক পোস্ট

গ্রামের বাড়ি

Dr. Aniruddha Deb March 19, 2023

মহিলাদের জন্য মহিলা টেকনিশিয়ান!

Dr. Bishan Basu March 18, 2023

রম্য: হোলিকা দহন

Dr. Chinmay Nath March 17, 2023

ব্যক্তিগত সখ আর অভ্যাস

Dr. Arunachal Datta Choudhury March 16, 2023

অথ বাথরুম কথা

Dr. Partha Bhattacharya March 15, 2023

An Initiative of Swasthyer Britto society

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

Contact Us

Editorial Committee:
Dr. Punyabrata Gun
Dr. Jayanta Das
Dr. Chinmay Nath
Dr. Indranil Saha
Dr. Aindril Bhowmik
Executive Editor: Piyali Dey Biswas

Address: 

Shramajibi Swasthya Udyog
HA 44, Salt Lake, Sector-3, Kolkata-700097

Leave an audio message

নীচে Justori র মাধ্যমে আমাদের সদস্য হন  – নিজে বলুন আপনার প্রশ্ন, মতামত – সরাসরি উত্তর পান ডাক্তারের কাছ থেকে

Total Visitor

428123
Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

Copyright © 2019 by Doctors’ Dialogue

wpDiscuz

আমাদের লক্ষ্য সবার জন্য স্বাস্থ্য আর সবার জন্য চিকিৎসা পরিষেবা। আমাদের আশা, এই লক্ষ্যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও আপামর মানুষ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের আলোচনা ও কর্মকাণ্ডের একটি মঞ্চ হয়ে উঠবে ডক্টরস ডায়ালগ।

[wppb-register]