ডাক্তারি করতে গিয়ে নতুন নতুন রোগী আর নানা রোগে মৃত্যু দেখা একরকম রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। স্বাভাবিকভাবেই বেশিরভাগ লোকের ধারণা, এই সব বিষয় আর আমাদের মনে কোনও প্রভাব ফেলে না। কারণ আমরা এই মৃত্যু দেখে অভ্যস্ত। আমাদের কাজ শুরুর প্রথম দিন থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় এসব দুঃখ, কষ্ট যেন আমাদের স্পর্শ করতে পারে না। যদিও শুনতে যতই ভাল লাগুক না কেন, বাস্তবিক পক্ষে তা খুবই কঠিন। আবেগের প্রকাশ দুর্বলতার লক্ষণ বলে যতই বোঝানো হোক না কেন তা মেনে নেওয়া মুশকিল। এই কারণে আমরা বেশিরভাগই পেশাগত জীবনকে ব্যক্তিগত জীবন থেকে আলাদা করতে ব্যর্থ হই।
কিছু মৃত্যু হয়তো তেমন ভাবে নাড়ায় না,সিস্টার ডিসি দিন লিখে দি। তারপরে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়া। আবার কোনও কোনও মৃত্যু এমন নাড়িয়ে দেয় যে অনেক রাত ঘুমোতে পারা যায় না। কোনও রোগী সারা জীবন মনে থেকে যায়। বছরের পর বছর ভোগায় কিছু করতে না পারার অন্তর গ্লানিতে। তাই কোন এক হাউস স্টাফ ডেথ সার্টিফিকেট লিখে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখে, দু চোখ জলে ভিজে যায়, কোনো ডাক্তার তার ঘুমন্ত ছেলের কপালে হাত বুলাতে বুলাতে সদ্য সন্তান হারা বাবা মার কথা ভেবে তাকে আঁকড়ে ধরে। আপন মনে গেয়ে ওঠে-
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা- কিছু সব আছে আছে আছে –
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই , নিশিদিন কাঁদি তাই।
আসলে একজন রোগীকে বাঁচাতে না পারার দুঃখের কারণে আমরা নিরানব্বইটা রোগীকে সুস্থ করার আনন্দ উপভোগ করতে পারিনা। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে মনোকষ্টে ভুগতে শুরু করি। দুঃখ প্রকাশ না করার এই ট্যাবু ভেঙে আমাদেরই বেরিয়ে আসতে হবে। বুঝতে হবে মৃত্যু মানেই আমাদের হেরে যাওয়া নয়, মৃত্যুকে স্বীকার করতে হবে।এই হারানোর মধ্যে দিয়ে আমাদের নতুন করে শুরু করার রসদ খুঁজে পেতে হবে।
এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দু বাহু বাড়ায়ে।