তত জুতের হয়নি। তবু স্রেফ তিনি বলেছেন বলে সে এই বালিশটি বানিয়েছে। আজ নয় কাল, এটির পেটেন্ট তিনি নেবেনই, সে জানে। তিনি জগদীশ বোসের মত বোকা নন। সেই আবিষ্কার এই রাজ্যের পাঁচশটা আইআইটির অনুমোদন পাবে। বইয়ের রয়ালটি, ছবি বিক্রির টাকার সঙ্গে এই পেটেন্টের টাকাটি যোগ হবে। পরে এই ময়দানেই বক্তৃতায় শোনা যাবে। পরীক্ষায় স্ট্যান্ড করলে, সম্বর্ধনায় হাফ ডজন কাশ-বালিশ দেওয়া হবে। উচ্চারণের দোষে কাশ-বালিশকে পাশ বালিশ বলে ফেললে, অনুভূতি আহত হবার দায়ে তিনশ তেতাল্লিশটা থানায় মানহানির এফআইআর দায়ের হবে।
সেই কথা থাক। আপাতত সে খোলা ময়দানে চিত হয়ে শুয়ে নিজের তৈরি কাশ ফুলের এক বালিশ মাথায় দিয়ে, আকাশ দেখছে। নীল শরত আকাশে সাদা মেঘের প্রাসাদ।
বিল্ডিং ক্যাসল ইন এয়ার না কী যেন পড়েছিল ছেলেবেলায়। সেই দুধসাদা সাততলা প্রাসাদে অনেক ঘর। বাড়ির সবাইকে দু তিনখানা ঘর দেবে সে। প্রাসাদে থাকবে সিঁড়ি লিফট আর এসক্যালেটর তিন রকমই, এই রকমের আলিশান প্রাসাদে যে রকম থাকা নিয়ম।
তার মা না পিসি কে যেন ঘুগনি বানিয়ে দেবে। নতুন রকম মশলা দিয়ে। বালি-কয়লা-পাথর দিয়ে তৈরি সেই ঘুগনির দারুণ স্বাদ। দুর্দান্ত বিক্রি। ঘুগনি বিক্রি করতে দুবাই ব্যাঙ্কক যাবে সে। তেমন হলে ঘুগনি বেচা টাকা রাখতে কুসুম আর তার বোন ফুলমতিকেও সেসব দেশে পাঠাবে না হয়।
তার দেওয়া ঘরে মামা মামীরা কেউ আসতে চাইবে না। আসবে কেন? প্রত্যেকেই তো নীলাকাশের এক একটা প্লট পেয়ে গেছে।
কুসুম কে? ওঃ বলিনি বুঝি? কুসুম হচ্ছে সেই যে, সেই একজন। ঘরেতে এল না সে যে, মনে তার নিত্য আসা যাওয়া। ছেলে এখন কুসুমকে বেলা বলে ডাকে। অঞ্জনদা কুসুমের নাম বদলে বেলা রেখেছেন।
তার সেই রাজপ্রসাদের ব্যালকনিতে সে কুসুমের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এমন সময়ে টিভিতে বলা নিম্নচাপটা আকাশে ভিড় করে এল। হাওয়ায় তৈরি মেঘের সাতমহলা প্রাসাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙ্গে পড়ল।
সে এখন সটান পড়ছে। পড়ছে পড়ছে পড়ছেই। মাটি ছুঁলো তার মাথা। ব্যথা? হ্যাঁ, ব্যথা তো হচ্ছেই। সকালে না খেয়ে বেরিয়েছিল। মাথা ধরেই ছিল। গরম রক্তে সারা মুখ মাখামাখি।
স্বপ্ন ভাঙতে বুঝল, রক্ত নয়, হাতের ঠেলায় গরম লাল চা ভর্তি ফ্লাস্কটা গড়িয়ে পড়েছে মুখের ওপর।
উনি হাজার টাকা জোগাড় করে ব্যবসা শুরু করতে বলেছিলেন। চা বিস্কুট নিয়ে বেরোতে বলেছিলেন।
গরম চায়ে ভিজে কাশফুলের আশাভর্তি বালিশটা চুপসে গেছে তার।
বাতাস তীব্র হচ্ছে। ছেলেটা, না আকাশ ফাটিয়ে নয়, ফিস ফিস করে গেয়ে উঠল, ‘চা-কেটলি আমি পেয়ে গেছি… বেলা শুনছ?’