প্যাচপেচে গরমে রোগের জ্বালা শীতের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি। তার উপর বিভিন্ন পোকা মাকড়ের উৎপাতও এই সময় বাড়তে থাকে। ফলে এইসময় চিকিৎসাপ্রার্থী রোগীর ভিড়ে পোকামাকড়ের কামড়ের রোগীর সংখ্যাও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেশি। প্রত্যেকের জিজ্ঞাসা থাকে ,পোকামাকড়ের কামড়ে প্রাথমিক ভাবে কি করা উচিত?
প্রথমত: বোলতা, ভীমরুল, মৌমাছি যাই-ই কামড়ে থাক না কেন, সেই পোকার বিষ যেহেতু আমাদের শরীরের রক্তসংবহনতন্ত্রের সাহায্যে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে, তাই প্রাথমিক ভাবে রক্তসংবাহী শিরা, উপশিরাকে সংকুচিত করে দিলেই বিষের ছড়িয়ে পড়া প্রাথমিক ভাবে রোধ করা যায়। ছোট্টবেলায় পড়েছি, ঠান্ডায় বস্তুর সংকোচন আর গরমে প্রসারণ ঘটে। সেই নিয়ম মেনে কামড়ানোর জায়গায় বরফ চেপে রাখলেই রক্তপ্রবাহীর সংকোচন বিষের ছড়িয়ে পড়া প্রাথমিক ভাবে আটকে দেবে। অধিকাংশ পোকামাকড় যেহেতু হুল ফুটিয়ে বিষ ঢোকায়, তাই কামড়ানোর জায়গায় যদি হুল ফুটে থাকে সেটি চিমটি দিয়ে বের করে দিলে বিষের উৎস থেকে নিরন্তর বিষের প্রবাহ বন্ধ হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর্ব সাঙ্গ হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হবে। কারণ ছড়িয়ে পড়া বিষ দু’ভাবে শরীরকে আক্রমণ করে। প্রথমত কামড়ের জায়গায় স্থানীয় ভাবে প্রদাহের প্রতিক্রিয়া। লাল হয়ে ফুলে যাওয়া,ব্যথা, চুলকুনি ইত্যাদি যার প্রাথমিক লক্ষ্ম।
দ্বিতীয়ত কামড়ের জায়গা থেকে রক্তসংবাহী শিরা, ধমনীর মাধ্যমে সম্পূর্ণ শরীরে বিষ ছড়িয়ে পড়লে তার প্রকোপ মারাত্মক হতে পারে। হঠাৎ রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যার মধ্যে কিছু প্রতিক্রিয়া আবার প্রাণঘাতী। ল্যারিঞ্জিয়াল ইডিমা হয়ে শ্বাসরোধ হতেও যেমন দেখেছি তেমনি বোলতার কামড়ে কিডনি বিকল হতেও দেখেছি। তাই প্রাথমিক চিকিৎসার পর চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী। চিকিৎসক প্রয়োজন বোধে অ্যান্টিঅ্যালার্জিক, অ্যান্টিইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ প্রয়োগ করবেন।কিছুক্ষেত্রে নজরদারি রেখে অ্যাড্রিনালিন ইঞ্জেকশনও দিতে হতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তুলবে রোগীকে।
এছাড়াও গরমের সময় পেডেরিন গোত্রের একধরনের গুবরে পোকার সংস্পর্শে এসে ত্বকের প্রদাহ নিয়ে চিকিৎসাপ্রার্থী হন অনেকেই। গ্রামবাংলায় একে “পোকায় চাটা” বলে। প্রাথমিক ভাবে সাবান দিয়ে জায়গাটি ধুয়ে নিয়ে বরফ দিয়ে চেপে রাখা জরুরী। তারপর অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিস্টামিনিক, টপিক্যাল স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হতে পারে।
মার্চ-এপ্রিল থেকে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর হলো ভারতীয় ট্যারেন্টুলা মাকড়সার প্রজননের সময়। এ সময় এরা খুবই উগ্র থাকে।পশ্চিমবাংলায় এসময় প্রধানত দুই ধরনের বিষাক্ত ট্যারেন্টুলার কামড়ের রোগী পাওয়া যায়। দক্ষিণবাংলায় কাইলোব্র্যাকিস, উত্তরবাংলায় সেলেনকসোমিয়া। এদের কামড় মূলত সেলুলাইটিসের মত ভয়ংকর প্রদাহ সৃষ্টি করে। এদের লোম থেকে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়াও ঘটে। দুয়ের সমন্বয়ে ভোগান্তি চরম আকার নেয়। তাই ট্যারেন্টুলার কামড়ে প্রাথমিক ভাবে জায়গাটি সাবান জলে পরিষ্কার করে বরফের সেঁক নেওয়ার পরই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।