আমিনুল্লা বিবির পেটে ব্যাথা, কিছু খেতে পারছেন না আজ বেশ কিছুদিন ধরে। ওনার ছেলে ভর্তি ছিল মেডিকেল কলেজের সার্জারি ডিপার্টমেন্টে ৫ মাস আগে।তিনি কোলকাতা বলতে বোঝেন হাওড়া, তারপর একটা নীল বাড়ির সামনে থেকে কয়েকটা বাস ছাড়ে সেখানে তিনি বলেন মেডিকেল যাবো, আসেন আবার ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফেরেন। আজ তিনি এসেছিলেন ডাক্তার দেখাতে। লিফলেট বিলির সময় তাঁর কাছে যাওয়া হলে তিনি হলেন “মেডিকেলে আপনারা দেখব্যান নাই আর?”
বাঁকুড়া থেকে এসেছিলেন বাদল বাউরি। তাঁর ছেলের থ্যালাসেমিয়া। ৩ বছর ধরে মেডিকেল কলেজ থেকেই ব্লাড নিচ্ছেন তাঁরা, হঠাৎ লক ডাউন হয়ে যাওয়াতে ব্লাড পাচ্ছেন না সময় মত। বাঁকুড়ার এক পাড়াগ্রামে ভাগচাষীর কাজ করে কোনভাবে দিন চলে তার।
এসেছিলেন নমিতা বাগ,সরকারি চাকুরিজীবী। ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরে পড়ে বেশ কিছুদিন আগে, লকডাউনে ওটির টাইম না পাওয়ায় ক্যান্সার বেড়ে গেছে, এক ছেলে। নিয়ে এসেছিলেন আজ তাকে, মাধ্যমিক দেবে। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় বলছিল।
এদের কারোর করোনা হয় নি। কিন্তু এনাদের স্বাস্থ্য, হঠাৎ কিছু হয়ে গেলে বাড়ির লোকের খবর সেগুলো আমরা জানতে পারি না।
করোনার স্ট্যাটিস্টিক্স আসে। কিন্তু এই স্ট্যাট আমরা কোন ওয়েবসাইটে দেখতে পাই না। কোল্যাটারাল ড্যামেজ? একটা মানুষের জীবন, তার সাথে জড়িয়ে থাকা একটা ফ্যামিলি, তাদের রোজকার কথা,বাড়ি ফেরত ক্যান্সার পেশেন্ট মায়ের চিকিৎসা না পাওয়ার গল্প কোন স্ট্যাটিস্টিক্সে লেখা থাকে না।
যে দিনমজুর, ভাগচাষী ১ মাসে একবারই কোলকাতা এসে চিকিৎসা করার টাকা পাড়ার মুদিখানার থেকে ধার চেয়ে আনেন তাঁর করোনা হয় না, পেপটিক আলসার হয় কিন্তু তিনি রেফার বুঝতে পারেন না। তিনি জানেন না হাসপাতাল চেঞ্জ করে অন্য হাসপাতালে গেলে তিনি সেখানে চিকিৎসা করিয়ে উঠতে পারবেন কিনা। এটাই আমার দেশ,এরাই আমাদের সমাজ।
মেডিকেল কলেজের আন্দোলন ডাক্তারদের নয়। এই সব মানুষগুলোর। যারা পুরুলিয়া, মালদা থেকে আসেন যাদের একটা ওটির ডেট পেতে যে কোন টার্শিয়ারি সেন্টারে মাসে পর মাস লেগে যায় এই স্বাস্থ্যব্যবস্থায়। এই আন্দোলন তাঁদের।
আজ তারা এসেছিলেন আমাদের ক্যাম্পে। বসেছিলেন অনেকক্ষন। তারা সরকার বোঝেন না, তারা জেলার থেকে বাসে করে এসে সভার মাঠ ভরান একটা ভালো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পাবেন এই আশায় কিন্তু আজ তারা আর সভায় যেতে পারেন নি। এসেছিলেন মেডিকেল কলেজের ডাক্তারদের তাদের স্বার্থে আন্দোলনে পাশে দাঁড়াতে। এক নতুন প্রতিরোধ গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে। আর সেই প্রতিরোধ ডাক্তারদের নয়,মানুষের।
এই আন্দোলন সরকার বিরোধী নয়। এই আন্দোলন আসলে সরকারের পলিশির বিরুদ্ধে। নতুন এই মডেল গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে যেখানে ইন্টারমিক্সিং না করেই কোভিড এবং নন কোভিড রোগীরা চিকিৎসা পাবেন সেই উদ্দেশ্যে আর আমরা মনে করি সেই মডেল কোন আমলা নয়, আমরা যারা এই ব্যবস্থার সব থেকে নিচু তলার কর্মী, ডাক্তার, আমরাই সেই মডেল সব থেকে ভালো বানাতে পারি।
অবস্থান চলছে তার সাথে কোভিডের চিকিৎসাও চলছে মেডিকেল কলেজে, আমরা বসে আছি সরকারের দিকে চেয়ে, শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, মানুষের স্বার্থে ❤
#unlockMCK
#InclusiveNOTExclusive
#DoctorsForPeople