গতকাল 29 শে জুন 2020 রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা আধিকারিক এক জেনারেল অর্ডারে মেডিকেল কলেজ এবং কলেজ অফ মেডিসিন ও সাগর দত্ত হাসপাতালের ইন্টার্নদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়ে দিলেন অন্যান্য মেডিকেল কলেজগুলোতে।
কালকেই এম সি আই এর পরিদর্শন শেষ হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের রূপ প্রকাশ করে ফেলল রাজ্য সরকার।
দুটো মেডিকেল কলেজই করোনা চিকিৎসার টারশিয়ারি কেন্দ্র হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল আগেই। মেডিকেল কলেজে করোনা নয় এমন রোগীর ভর্তি বন্ধ, এম বি বি এস, এম এস-এমডি, ডিএম-এম সি এইচ প্রশিক্ষণার্থীদের পঠন-পাঠন এবং হাতে কলমে প্রশিক্ষণ বন্ধ তিন মাসের ও বেশি সময় হল। ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছিল। আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
ক্ষোভ প্রশমিত করার জন্য সরকার কি না করেছে!! জুনিয়র ডাক্তারদের বহুদিনের প্রাপ্য বকেয়া ভাতা বৃদ্ধি করে বলা হলো করোনা যুদ্ধে তাদের ভূমিকাকে সম্মান জানাতে এই ভাতা বৃদ্ধি। (আসলে এই ভাতাবৃদ্ধির কথা ছিল ২০১৯-এর নভেম্বর নাগাদ।)
ডাক্তারদের সংগঠনগুলোকে নবান্ন সভাঘরে বৈঠকে ডাকা হল। তারা পঠন-পাঠন নিয়ে তাদের উদ্বেগের কথা বললেন, সমাধানের পথ বাতলালেন, আশ্বাস দেওয়া হল সেই মতো কাজ করা হবে।
মেডিকেল কলেজের পিজিটিরা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। জানালেন করোনা চিকিৎসা করতে তাদের আপত্তি নেই, কিন্তু পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা শুরু হোক। পঠন পাঠন এবং প্রশিক্ষণ শুরু হোক অবিলম্বে। তারা প্রস্তাব দিলেন কেবল মেডিকেল কলেজ বা সাগর দত্ত নয়, সব মেডিকেল কলেজেই একটি করে ব্লক নির্দিষ্ট থাকুক করোনা চিকিৎসার জন্য, বাকি অংশে নিয়মিত কাজ চলুক। প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন তিনি প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে সহমত, আলোচনার বিবরণ তিনি জানাবেন মুখ্যমন্ত্রীকে, আশা করা যায় সমস্যার সমাধান হবে।
এমনকি মেডিকেল কলেজের কলেজ কাউন্সিল, সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে যা গঠিত, সেও প্রস্তাব করেছে করোনা চিকিৎসার পাশাপাশি নন কোভিড চিকিৎসা শুরু করার, পঠন পাঠন ও প্রশিক্ষণ পুনরায় আরম্ভ করার।
কিন্তু সরকারের কি ভূমিকা?
১। নন-কোভিড রোগী মেডিকেল কলেজে যাতে ভর্তি হতে না পারে তার জন্য ডিপার্টমেন্টগুলিতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় স্টাফ দিচ্ছে না।
২। ডিপার্টমেন্টগুলির সত্তা অবলুপ্ত করা হচ্ছে।
৩। বিভাগীয় প্রধানদের পরামর্শ না শুনে একতরফা পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়ে কলেজ কাউন্সিলকে প্রহসনে পরিণত করা হচ্ছ এবং জটিলতা তৈরী করা হচ্ছে।
৪। করোনা চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ হলো না।
৫। পঠন পাঠন প্রশিক্ষণের যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিল পিজিটিরা ও কলেজ কাউন্সিল সেরকম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হলো না।
৬। আড়াইশো জন ইন্টার্নকে অন্য মেডিকেল কলেজে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠিয়ে লোক বল অনেকটা কমিয়ে ফেলা হলো।
৭। মানুষজনের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে পয়লা জুলাই চিকিৎসক দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হলো। সবাই ছুটি পাবেন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া।
আজ মেডিকেল কলেজে কলেজ কাউন্সিলের সভা হবে। কলেজ কাউন্সিল কি সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেবেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে হয়তো স্টাম্প লাগাবে জনবিরোধী বলে। তাদের মাইনে বাড়ানো হয়েছে, চিকিৎসক দিবসকে ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়েছে–তার পরেও আন্দোলন?!
কি হতে চলেছে তা দেখবার জন্য বুঝবার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
একচক্ষু হরিণের মতো শুধু covid 19 এর দিকে নজর রেখে চললে আর কিছুদিনের মধ্যেই অন্যান্য অসুস্থতা জনিত মৃত্যু করোনা মৃত্যুকে ছাপিয়ে যাবে। কিন্তু অন্য কারণে মৃত্যুর এখন ত কোনো তথ্যই নেই। গত বছরেই পশ্চিমবঙ্গে এই সময়ে দৈনিক/মাসিক মৃত্যুর সংখ্যা ও সেসবের কারণের তথ্য কি বলে? প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুণ অবস্থার জন্য ভোগান্তি কম হচ্ছে না।