২০ মে, ২০২০, কেটে গেছে তিন সপ্তাহের সামান্য বেশী সময়। স্বাস্থ্যকর্মী আর সমমনোভাবাপন্ন একদল মানুষের প্রচেষ্টা আর সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে দক্ষিণ বাঙলার বিভিন্ন জেলায় হয়ে গেল প্রায় ৭৫ এর বেশি ত্রাণ ও মেডিক্যাল সহায়তার কাজ।
সেই নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টার কাজে, আজ UNICEF এর সহযোগিতায় ক্যাম্প হলো দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর ২ ব্লকের দুই জায়গায়।
গতকাল, ১২ই মে বিকেলেই ৬ জন চিকিৎসকের টিম রওনা দিয়ে রাত কাটালাম রায়দিঘিতে।
আজ সকালে জলখাবার সেরে দুটো টিমে ভাগ হয়ে বেরিয়ে পড়া- ভাদুড়িদা, সিদ্ধার্থদা আর দীপ্রসত্ত্বর গন্তব্য কাঞ্চনদীঘি ; পুণ্যদা, কৌস্তভ আর আমার কাজ পড়ল নন্দকুমারপুর গ্রামপঞ্চায়েতের নন্দকুমারপুর ঊচ্চবিদ্যালয়ে।
UNICEF-এর ডিস্ট্রিক্ট মনিটর মতিউরকে নিয়ে রায়দীঘি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যখন পৌঁছেছি ততক্ষণে আকাশ ভেঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। সেখানেই আলাপ বি এম ও এইচ প্রশান্ত হালদারের সাথে। চা খেয়ে ওষুধপত্র নিতে নিতে বৃষ্টির ঝাঁজ ততক্ষণে কিছুটা হলেও কম, অতঃপর যাত্রা শুরু।
কাঞ্চনদীঘির রিপোর্টের দায়িত্ব ওখানকার টিমের দীপ্রসত্ত্বের উপর।
১৯৪০ সালে স্থাপিত নন্দকুমারপুর ঊচ্চবিদ্যালয় কয়েকদিন আগেও ছিল আম্ফান ত্রাণ শিবির, প্রায় ৩০০০ গ্রামবাসীর মাথা গোঁজার ঠাঁই। মৃদঙ্গভাঙা নদীর পাড়ে এই অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে শুনলাম অনেক। তবে কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে ধান কাটা হয়েছিল কিছুদিন আগেই। নোনা জল তিন ফসলি জমি ভাসিয়ে দিলেও এবারের ফসল বেঁচেছে অনেকটা।
এই অঞ্চলেই আছে পরিযায়ী মানুষের জন্য একটা কোয়ারেন্টিন সেন্টার। শুনলাম ৯ জন আছেন এখনো, কোনো পজিটিভ কেস নেই এখানে, তাই বোধহয় মাস্ক ব্যবহারের বিশেষ আগ্রহ দেখা গেল না।
এদিকে ডাক্তার, ভলান্টিয়ার, এএনএম, আশাদিদিমনিরা হাজির, অথচ পেশেন্ট মাত্র গুটি কয়েক। তখনও হাল্কা বৃষ্টি, ভাবলাম সেটাই কারণ। একটু এদিক সেদিক ঘুরতে গিয়ে বুঝলাম কারণটা অন্য। কেউ বোধহয় রটিয়েছে কলকাতার ডাক্তারবাবুরা এসেছেন সন্দেহজনক করোনা রোগী সনাক্ত করতে!
অগত্যা আরেক প্রস্থ ঝটিকা প্রচার আর মাইকিং, ফলও মিলল। তিন জনে মিলে দেখে ফেললাম ৭৫ জন রোগী। ব্যথা, যন্ত্রণা, সাধারণ দুর্বলতা, চর্ম রোগ, কিছু ক্রনিক অসুখের রোগী বেশী, কয়েকজন পেটের রোগ ও গ্যাস অম্বলের রোগী দেখা হলো। জলবাহিত ডায়েরিয়ার রোগী প্রায় নেইই, আশাদিদিমনিরা বললেন সাইক্লোনের পর পরেই বেশ কিছু আন্ত্রিক রোগী ওনারা সাধারণ চিকিত্সায় সারিয়ে তুলতে পেরেছেন।
বিগত কয়েক বছরের সাইক্লোন এখানকার মানুষকে অনেকটাই স্বাবলম্বী হতে শিখিয়েছে। নদী বাঁধ ভেঙে পড়ার সাথে সাথেই নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে সাময়িক ভাবে সারিয়েছে, বিদ্যুত এসেছে প্রায় দিন সাতেক পর। পানীয় জল সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক, যদিও নদীর তীরবর্তী এলাকায় এখনো কিছু বাড়িতে কাজ শেষ হয়নি।
খাওয়া দাওয়া করে রওনা হলাম কলকাতার দিকে।
ফেরার পথে ডায়মন্ড হারবারে নদীর ধারের দোকানে ডিমের ডেভিল, আলুর চপ আর চা যেন অমৃত!
আজকের রিপোর্ট এইটুকুই।
কাল সকালে আবার এক নতুন জায়গা, ধারাবাহিক প্রচেষ্টার আর এক গন্তব্য , হাসনাবাদ।
পৃথিবীর গভীর অসুখ এখন, কিন্তু সারিয়ে তুলবো আমরাই, একসাথেই!