২০১৫ সালে জার্মানীর এক কনসেনট্রেশন ক্যাম্প দেখতে গেছি। গ্যাস চেম্বার, ইনসিনারেটর। ঠাসঠাসি, গাদাগাদি বাঙ্কার। আমরা এক-একটা জিনিস দেখছি, আর ভীষণ অবাক হচ্ছি। আর সেই বিষয়ে মতামত দিচ্ছি।বলছি হিটলার কত নৃশংস ছিল!
তখন আমাদের জার্মান গাইড মাইকেল হেস বলল, ‘আপনারা ভাবছেন হিটলার এত নৃশংস ছিল! কিন্তু শুধু কি সে আর তার সাগরেদ নাৎসী পার্টি মিলে এত ভয়াবহ ঘটনা ঘটিয়েছিল? কখনো ভেবে দেখেছেন কি, সেটা সম্ভব কি না? ভাবেন নি।’
দেখলাম, সত্যিই এভাবে ভাবিনি। গ্যাস চেম্বারের জন্য গ্যাস তৈরী করত ‘বেয়ার’ কোম্পানি। তারা অবশ্যই জানত যে, এই গ্যাস দিয়ে মানুষ মারা হবে। কিন্তু তারা এটা বন্ধ করে নি। কারণ, ব্যবসায়িক স্বার্থ। হিটলার আত্মহত্যা করেছিল। নাৎসীপার্টির বিচার হয়েছিল। কিন্তু বেয়ার কোম্পানীর কিচ্ছু হয় নি। তারা বহাল তবিয়তে এখনো বজায় রয়েছে।
তেমনি যারা ইনসিনারেটর তৈরি করেছিল, বিক্রি করেছিল – তারাও জানত এই যন্ত্রে কাদের মারা হবে! খ্রিষ্টানদের তো কবর দেওয়া হয়!
এরা সব ছিল নাৎসী পার্টির নিষ্ক্রিয় সমর্থক। এরাই ছিল ভয়াবহ সেই সিষ্টেমের মেরুদন্ড।
তেমনি আর জি করের সাম্প্রতিক ঘটনায় শুধু সরাসরি অভিযুক্তরাই নয়, একদল নিষ্ক্রিয় সমর্থকদের ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা সামনে আসে না। কিন্তু নিষ্ক্রিয়ভাবে পেছন থেকে এই সিন্ডিকেটকে সমর্থন করে যায়। এরা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের, বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের উচ্চপদস্থ কিছু লোক- যারা এই সিন্ডিকেটকে রক্ষা করতে, এর মাধ্যমে চরম দুর্নীতি ও অত্যাচার চালিয়ে যেতে নীরব অথচ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা প্রায় কখনই সামনে আসে না। কিন্তু হীরকের রাজা বিপদে পড়লে, বড় মাথা ধরা পড়ার মত পরিস্থিতি তৈরি হলে এরা দু’হাতে আগলে দাঁড়ায়।
কিন্তু কেন? কিসের লাভে, কিসের লোভে?
কীসের ভয়ে? দুর্গম জায়গায় ট্রান্সফার? সাসপেনশন? শাস্তির ভয়ে?
কতটা শাস্তি? কতটা প্রাপ্তি? কতটাই বা এর ব্যাপ্তি – কে জানে!
শুধু জানি-
বিবেক এদের বন্ধক রাখা আছে।