কোভিড রোগীদের লেভেল 4 চিকিৎসার পাশাপাশি নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসাও যাতে কলকাতা মেডিকেল কলেজে শুরু করা যায়, সাধারণ রোগীদের যাতে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত না রাখা হয় সেই দাবিতে মেডিকেলের জুনিয়র ডাক্তারেরা আওয়াজ তুলছেন বেশ কিছুদিন থেকেই।
গত পরশু কলকাতা মেডিকেল কলেজের রেসিডেন্ট ডাক্তার ও ইন্টার্নদের তরফে একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করা হয়। এর আগে প্রিন্সিপাল এবং ডি এম ইর কাছে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়।
#UnlockMCK, #DoctorsForPeople এই শিরোনামে চলতে থাকে আন্দোলন। এর মাঝেই ডঃ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য (স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী) প্রতিনিধিদের সাথে স্বাস্থ্য ভবনে দেখা করতে চান। সেইমত পাঁচজন রেসিডেন্ট ডাক্তার আজ স্বাস্থ্য ভবনে যায়। সেখানে তার সাথে দেখা করে রেসিডেন্ট এবং ইন্টার্নদের যাবতীয় দাবিদাওয়া ও প্রস্তাব তুলে ধরা হয় এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মন দিয়ে সমস্তটাই শোনেন। বেশ কিছু বিষয়ে সহমত জানান।
কোভিড রোগীর পাশাপাশি নন-কোভিড সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা শুরু হলেই একমাত্র মেডিক্যাল কলেজের মতো টার্শিয়ারি স্তরের স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো সম্ভব — এই মর্মেই রেসিডেন্টরা তাঁদের বক্তব্য রাখেন।
মেডিক্যাল কলেজ সাধারণত আউটডোর, অপারেশন, ডে কেয়ার, কেমোথেরাপি, ডায়ালিসিস ইউনিট ইত্যাদি মিলিয়ে কতো রোগীর ভার বহন করে তার তুলনা করে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়। কোভিড এক্সক্লুসিভ হাসপাতাল হবার পর এই সমস্ত সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে, এর ফলে নন-কোভিড রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, এবং এই বিশাল পরিকাঠামোর অপব্যবহার হচ্ছে — এই তথ্য দিয়েই বক্তব্য শুরু করা হয়।
সর্বোপরি, ডাক্তারদের এক বিশাল লোকবল, যাঁরা নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ভার নিতেও ইচ্ছুক, তাঁদের অকর্মণ্য হয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজের ৯টি সুবিশাল বিল্ডিংয়ের মধ্যে কেবল ২টি সম্পূর্ণভাবে এবং ২টি আংশিকভাবে কোভিড চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং বাকি ৫টি বিল্ডিং গত দুমাস ধরে স্রেফ খালি পড়ে আছে। এগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বিল্ডিংয়ের গঠন এবং পরিকাঠামো এমন যে কোভিড চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব নয়।
সুযোগসুবিধা, লোকবল ও পরিকাঠামোর এমন বিশাল অপরিকল্পিত ব্যবহার, নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত থাকা এবং কোভিডসহ সকল রোগীদের চিকিৎসার সদিচ্ছার ওপরেই জুনিয়র ডাক্তারেরা তাদের প্রস্তাবের ক্ষেত্রে মূল জোর দেয়।
বর্তমান মডেলের ফলে আন্ডারগ্রাজুয়েট মেডিকেল ছাত্রদের পঠনপাঠনের ক্ষেত্রেও মেডিক্যাল কলেজের এই কোভিড এক্সক্লুসিভ ব্যবস্থা কীরকম সংকট তৈরি করেছে, সে বিষয়েও তারা বলে।
তারা এখনকার ব্যবস্থায় পরিকল্পনা ও যৌক্তিকতার অভাব তুলে ধরার পাশাপাশি এক বিকল্প মডেল এর পরিকল্পিত প্রস্তাবও দিই।
কীভাবে চতুর্থ তথা সর্বোচ্চ স্তরের একটি কোভিড সেন্টার চলতে পারে, তার একটি খসড়াও জুনিয়র ডাক্তারদের তরফ থেকে তৈরি করা হয়েছে। কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা কীভাবে একসঙ্গে সম্ভব সে সম্পর্কে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট-এ মাফিক ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও, আমরা মেডিক্যাল কলেজের আওতায় থাকা বাকি হাসপাতালগুলোকে (লেডি ডাফরিন হাসপাতাল, মেয়ো হাসপাতাল) দ্বিতীয় বা তৃতীয় লেভেলের কোভিড সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করে কীভাবে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া যায় এবং CT scan, USG, Echocardiography সহ বিভিন্ন পরিষেবা কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের জন্য আলাদাভাবে ব্যবহার করা যায়, সে সম্পর্কেও জুনিয়র ডাক্তারদের পরিকল্পনা বলা হয়।
স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জুনিয়র ডাক্তারদের সব বক্তব্য শোনেন এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে সহমত জানান। তিনি জানান, এইসব বক্তব্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যথাযথ ‘প্ল্যান অফ অ্যাকশন’ নিয়ে কথা বলবেন।
Very good proposal