ডা ঘটকঃ শৌণক তোমার ডান কানের নিচের অংশ ফুলে মুখের চেহারাটাই তো পুরো বদলে গেছে।
শৌণকঃ হ্যাঁ কাকু, দেখো না কাল ঘুম থেকে ওঠার পরই প্রথম এমন খেয়াল করলাম। আর খুব ব্যথাও করছে। চিবিয়ে খেতে গেলে ব্যথা বাড়ছে। বড় করে হাঁ ও করতে পারছিনা। গায়ে জ্বরও আছে। ভীষণ মাথা ও ব্যথা। খাওয়ার ইচ্ছে একদম নেই। আর খুব দুর্বল লাগছে। স্কুল যেতে একটুও ইচ্ছা করছে না।
ডা ঘটকঃ এইসময় এমনিতেও তোমার স্কুল যাওয়া ঠিক না। স্কুলে কোন বন্ধুর কি এরকম হয়েছিল?
শৌণকঃ হ্যাঁ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অপ্রতিমের ই তো দিন দশেক আগে এমন হয়েছিল। এছাড়াও অন্য তিন চারজন ক্লাসমেটেরও এরকম হয়েছে।
ডা ঘটকঃ কানের নিচে আমাদের প্যারোটিড নামের দুটি লালাগ্রন্থি দু দিকে থাকে। সেই গ্ল্যান্ডদুটিতে কোন কারণে ইনফেকশন হয়ে গেলে তাকে প্যারোটাইটিস বলে। দেখা গেছে যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাম্পস ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। তাই ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে প্যারোটাইটিস বলা হয় সাধারণভাবে তাকেই মাম্পস বলা হয়। তবে এটা মাম্পস ভাইরাস ছাড়া অন্যান্য ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া দিয়েও হলে হতে পারে।
শৌণকঃঃ এটা কি কাকু তাহলে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড অপ্রতিমের থেকেই আমার হয়েছে?
ডা ঘটকঃ সে সম্ভাবনা তো একদম উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই রোগটি সাধারণত লালা এবং ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। কথা বলার সময় অথবা হাঁচি বা কাশির সময় এই ড্রপলেটের উৎপত্তি হয়।বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয়ে সেই ড্রপলেটই শ্বাসের সঙ্গে অন্যের শরীরে প্রবেশ করে এই রোগ তৈরি করে। এছাড়াও একই ওয়াটার বট্ল বা একই চামচ ব্যবহার করায় লালার সংস্পর্শ থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে।
শৌণকঃ ভ্যাকসিন এর মাধ্যমে কি এই রোগ আটকানো যায়?
ডা ঘটকঃ হ্যাঁ, মাম্পসের জন্য আলাদা কোন ভ্যাকসিন হয় না, এম এম আর বা এম আর-এর যে ভ্যাকসিন পাওয়া যায় তার মধ্যেই হাম ও রবেলার সাথে মামস এর ভ্যাক্সিন থাকে। দেখা গেছে একটা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে ৮০% আর দুটোর পর প্রায় ৯০% রোগটাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
শৌণকঃ আমিতো খালি হামের টিকাই নিয়েছি তাই হয়ত রোগটা হয়ে গেল।
ডা ঘটকঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছ, সেটা একটা কারণ হতে পারে।
শৌণকঃ কাকু এখন তো খুব কষ্ট হচ্ছে। কি ওষুধ খাব?
ডা ঘটকঃঃ দেখো এগুলো তো ভাইরাস ঘটিত রোগ।কিছুদিন পরে নিজের থেকেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি খালি ব্যথা কমার জন্য একটু প্যারাসিটামল ওষুধ দিলাম। এটাই জ্বর আর ব্যথা দুটোতেই কাজে দেবে। তুমি প্রচুর পরিমাণে জল খেতে চেষ্টা কর। এই রোগে মুখের লালা কমে যায়, তাই একটু বেশি করে জল খেতে হয়। খাওয়াটা একটু গলা, নরম করে খেতে চেষ্টা কর। বেশি চিবোতে গেলে ব্যথা কিন্তু বাড়বে। খেতে সবকিছুই পার শুধু টক খাওয়ার টা না খাওয়াই ভাল। এতে গালের ব্যথা বাড়তে পারে। যা কিছুই খাও তারপরে মুখটা হালকা গরম জলে একটু লবণ দিয়ে অথবা কোন তরল মাউথ ওয়াশ জলের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কুলকুচো করে নিলে ভালো হয়। খুব ব্যথা করলে একটু ঠাণ্ডা সেঁক নিতে পার।
শৌণকঃঃ আচ্ছা কাকু ,অপ্রতিমের মাম্পসের সাথে সাথে একটা অন্ডকোষে খুব ব্যথা হয়েছিল। আমারও কি এমন হওে পারে?
ডা ঘটকঃ তোমার মত বয়ঃসন্ধির কাছাকাছি থাকা ছেলেদের এটা প্রায়শই দেখা যায়। একে বলে অরকাইটিস। এর ফলে একটা অন্ডকোষ পরে একটু ছোট হয়ে গেলেও যেতে পারে। কিন্তু তাতে ভবিষ্যতে বন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।এছাড়া মেয়েদেরও ডিম্বাশয় ফুলে যায় এবং ব্যথা হয়। তাকে উফরাইটিস বলে। এর কারণে তলপেটে অনেক সময় ব্যথা হয়। এছাড়াও অগ্ন্যাশয়ের ইনফেকশন হলে হতে পারে, সে ক্ষেত্রে পেটের উপর অংশে ভীষণ যন্ত্রণা হয়। যদি এমনটা হয় তাহলে অবশ্যই আমায় জানাবে। সাময়িকভাবে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি অন্যান্য অনেক সমস্যা হলে হতে পারে। তবে তার সংখ্যাটা বেশ কম।
শৌণকঃ পরের সপ্তাহে তো আমার পরীক্ষা। স্কুল যেতে পারব তো?
ডা ঘটকঃ হ্যাঁ হ্যাঁ। গাল ফোলা শুরু হওয়ার ৫-৭ দিন পর থেকে তুমি স্কুলে গেলে যেতে পারো। তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে ১০ দিন থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে।