হিন্দ সিনেমার উল্টো ফুটে সুবর্ণ বণিক সভাঘর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নই নেই। বরং মাথার ওপর পুরনো দিনের ক্যাঁচকেঁচে সিলিং ফ্যান। দেওয়ালে জিভ বার করা কালো কালো পেটমোটা স্যুইচ। এখানে সেখানে মাকড়সার ঝুল। টেবিলে সাজানো ডজন দুয়েক বিভিন্ন বাংলা বই। প্রায় সব ক’টাই লেখা কোনো না কোনো চিকিৎসকের। কেউই ফুলটাইম লেখক নন। ডাক্তারির ফাঁকে ফোঁকরে হাত মকশো করা পার্টি। দামও অবিশ্বাস্য রকমের কম। কারণ প্রকাশকদের দৌরাত্ম্যে বিরক্ত মধ্যমগ্রামের এক লেখক-ডাক্তার নিজস্ব প্রকাশনীই খুলে বসেছেন। লাভের চেয়ে বন্ধুদের লাই পেলেই যিনি ধন্য।
আমার মতো স্বল্পধৈর্য্যের লেখকরাও হতাশ নন। কবে কী ফেসবুকে লিখেছিলাম নিজেরই মনে নেই। পুণ্যদার গুণে আর ঐন্দ্রিলের বদান্যতায় এরকম একান্ন জনের লেখা কড়া মলাটে বাঁধা পড়েছে। বইয়ের নাম ডক্টর্স ডায়েরি। এ বছর তার দ্বিতীয় সংকলন। সভাঘরে তখন শ’খানেক লোকের ব্যস্ত আনাগোনা। বই বিক্রি। বই সই। হৈ হৈ কান্ড বইচই ব্যাপার। কোনো ছ্যাঁকালাগা সেলিব্রিটি নেই তবু যেন চাঁদের হাট।
এরই মধ্যে মঞ্চ থেকে ডাক পড়ে গেল। স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে “ঘন্টা খানেক সঙ্গে বিষাণ” টাইপের একটা আলোচনা। দু’ চারটে ফুট কাটলাম। শ্রোতাদের কিছু কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করলাম। স্বাস্থ্যসাথী, আয়ুষ্মান ভারত ইত্যাদি স্বাস্থ্যবীমা যে “সবার জন্য স্বাস্থ্য” এনে দিতে পারে না সে ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য রাখা হলো।
তারপর মঞ্চ থেকে নেমে দু’চারটে সই সংগ্রহ করেই চটপট পিঠটান। সঙ্গী সোহম। চোখের ডাক্তার। বহুত দিনের বন্ধু।
তারপর শুরু হলো আমার আসল বাঙালীয়ানা। দেখবেন একটা বড় দেওয়াল ঘড়ির ছবি লটকেছি এই লেখাটার সাথে। ঘড়িতে লেখাগুলো আবার পুরো বাংলা হরফে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এর চেয়ে ভালো ছবি আর কী হতে পারে! আর সেই আড়াইশ’ বছরের পুরনো ঘড়ি যদি থাকে এক বাঙালীর মিষ্টির দোকানে! এতক্ষণে নিশ্চয় আমার বাংলা ভক্তি নিয়ে কাউকে কাউকে পেড়ে ফেলেছি। এবার আসল সত্যিটা বলি।
সন্ধ্যে বেলায় ঠিক এই সময় বৌবাজার ভীমনাগে নামে গরম গরম ক্ষীরের চপগুলো। দাঁতে কাটতে না কাটতেই মিলিয়ে যায় জিভে। জলভরার মতো চটচটে রসও চলকে পড়ে না জামায়। আহ্ সে কী সোয়াদ! দোকানে গিয়ে যাকে আশা করেছিলাম তাকেই পেলাম। আমার অনুষ্ঠানের সঞ্চালক বিষাণ বসু। আর ও থাকবে নাই বা কেনো? ওই পেটুকটাই তো আমাকে ধরিয়েছে ক্ষীরের চপের নেশাটা!
যাই হোক আপাতত ছবিগুলোই দেখুন। সুযোগ পেলে না হয় খাওয়ানো যাবে ক্ষীরের চপ। আপাতত: আমাদের বই দু’ একটা কেনার অনুরোধ রেখে ক্ষান্ত হই। প্রণতি প্রকাশনীর ফোন নম্বর দরকার হলে বলবেন। 