গায়ের রং নির্ভর করে নৃতত্ব, বংশগতি এবং পরিবেশের ওপর !
ফেয়ারনেস ক্রিম বলে বাজারে যা চলে সেটা প্রধানত ধাপ্পা এবং বিজ্ঞাপনী দামামা নির্ভর আর তার অনেকগুলিই আসলে স্টেরয়েড মেশা বিপজ্জনক এবং অবৈজ্ঞানিক ককটেল !
ড্রাগ এবং কসমেটিক এক্টের শিডিউল জে ক্লজ ১৮ তে আছে যে ফর্সা করার দাবি জানিয়ে কোনো ওষুধ বিক্রি করা দূরের কথা বিজ্ঞাপন দেওয়াও যায় না !
অথচ, শুধু বিক্রি নয়, রীতিমত খবরের কাগজে পাতাজোড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে এই সব ক্রিম , যার পুরোটাই অনৈতিক তো বটেই বেআইনিও!
এছাড়া পাওয়া যায় কিছু শক্তিশালী স্টেরয়েড মেশা ককটেল
যেমন মেলাকেয়ার, মেলালাইট এক্সএল, মেলবেস্ট, স্কিনলাইট, স্কীনশাইন, নোস্কার, ইউ বি ফেয়ার ইত্যাদি
এছাড়া প্যান্ডারম প্লাস কসভেট জি এম, লোবেট জিএম, বেটনোভেট জিএম, নুফোর্স জি এম এগুলিও অনেকে মুখে মাখেন ফর্সা হবার উদগ্র ইচ্ছায় !
এই গুলি আসলে একটি এন্টিবায়োটিক, একটি এন্টিফাঙ্গাল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্টেরয়েডের ভয়ঙ্কর ককটেল !
এগুলি প্রাথমিক ভাবে দাদের মলম হিসেবেই তৈরী হয়েছিল, কিন্তু অপব্যবহার হচ্ছে ফর্সা হবার ক্রিম হিসেবে !
এছাড়া বেশ কিছু বিপুল বিজ্ঞাপিত, তথাকথিত আয়ুর্বেদিক ব্র্যান্ডের ক্রিমেও মিলেছে স্টেরয়েড !
এগুলি বা অন্য স্টেরয়েড না জেনে মুখে বা অন্যত্র মাত্রাছাড়া ভাবে মাখলে স্কিন পাতলা হয়ে যায়, লাল হয়ে , রক্তনালী দেখা যায়, ব্রণ বেরোয়, মেয়েদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম বের হয়!
স্টেরয়েড এডিকশন বা নেশার শিকার হয় মানুষটি!
দশ বছর ধরে নিরন্তর আন্দোলন চালানোর পর
২০১৬ সালের ১২ আগস্ট কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যদফতর থেকে রীতিমত গেজেট নোটিফিকেশন করে জানিয়েছেন যে “”all salts, esters, derivatives and preparations containing steroids for topical or external use is now covered by the Schedule”.
শিডিউল মানে শিডিউল এইচ !
কিন্তু তাতে কি আর এলো গেলো !
চুরি, জোচ্চুরি, রাহাজানি, ধর্ষণ, খুন কোনোটাই আইন মেনে করা হয় কি?
মরগ্যান স্ট্যানলির রিপোর্ট বলছে ভারতে প্রায় অর্ধেক(৪৭ %)উপভোক্তা ক্রিম কেনেন ফর্সা হবার বাসনায় !
ধরুন কারো জ্বর হলো, সেটা টাইফয়েড হতে পারে, ম্যালেরিয়া হতে পারে, টিবি অথবা ব্লাড ক্যান্সার, ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়া অনেক কিছু থেকেই হতে পারে তাই তো ?
এখন সেক্ষেত্রে ডাক্তার না দেখিয়ে, জ্বরের সঠিক কারণ না জেনে কেউ যদি একটু ম্যালেরিয়ার ওষুধ, একটু টাইফয়েডের ওষুধ, একটু টিবির ওষুধ, একটু ব্লাড ক্যান্সারের ওষুধ মিশিয়ে খায় এবং খেয়ে চলে কেমন হবে ? তাতে রোগ সারবে কি ? না বেড়ে যাবে ?
সঠিক রোগ নির্ণয় না করে ঐসব প্যান্ডার্ম, ফোর্ডার্ম মার্কা ওষুধ লাগানো ব্যাপারটা ওইরকমই !
ওষুধ মানে কিন্তু শুধু ক্যাপসুল, ট্যাবলেট ইনজেকশন নয়, স্কিনে লাগানোর ক্রিম বা অয়েন্টমেন্টেও যে শক্তিশালী রাসায়নিক থাকতে পারে সেটা বেশীর ভাগ মানুষের খেয়ালই থাকে না!
আর এই অজ্ঞানতা/অবিবেচনা আর অসতর্কতার ফল হচ্ছে ভয়াবহ !
গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এই অবৈজ্ঞানিক ককটেল ওষুধ গুলিতে আবার স্টেরয়েড থাকে !
না জেনে , দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড (বিশেষত মুখে এবং শরীরের চাপা অংশে) অপরিমিত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করলে বিপদ হতেই পারে !
এ হলো খাল কেটে কুমীর আনার মতো অবিবেচকের কাজ!
বোকামি !
স্টেরয়েড ক্রিমের অপব্যবহার আমাদের দেশে প্রধানত তিনভাবে হয়
১. দাদের মলম হিসেবে- যেমন কোয়াড্রিডার্ম, ফোর্ডার্ম, প্যান্ডার্ম, টোটালডার্ম, ক্লোবেন জি, ক্যান্ডিডার্মা, ক্যান্ডিড টোট্যাল, সার্ফাজ এস যেন, বেটনোভেট জি এম, লোবেট জি এম জাতীয় দানবীয় গজকচ্ছপ গোছের ওষুধ
এই সমস্ত ককটেল ক্রিম ভারতবর্ষ ছাড়া কোথাও মেলে না !
দাদের মহামারী দেখা দিয়েছে এই গুলি মেখে !
সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে যাচ্ছে দুরারোগ্য দাদ ! স্কিন ফেটে গিয়ে স্ট্রেচ মার্কের শাখা প্রশাখা ছড়াচ্ছে শরীরে !
2. ফর্সা হবার ক্রিম হিসেবে -যেমন মেলাকেয়ার, মেলালাইট এক্সএল, মেলবেস্ট, স্কিনলাইট, স্কীনশাইন, নোস্কার এগুলির মধ্যে থাকে শক্তিশালী স্টেরয়েড, হাইড্রোকুইনোন নামে একটি ব্লিচ আর ট্রেটিনয়েন নামে একটি ওষুধ.
3. এছাড়া প্যান্ডারম প্লাস কসভেট জি এম, লোবেট জিএম, বেটনোভেট জিএম, নুফোর্স জি এম এগুলিও অনেকে মুখে মাখেন ফর্সা হবার উদগ্র ইচ্ছায় !
এই গুলি আসলে একটি এন্টিবায়োটিক, একটি এন্টিফাঙ্গাল এবং অত্যন্ত শক্তিশালী একটি স্টেরয়েডের ভয়ঙ্কর ককটেল !
এগুলি প্রাথমিক ভাবে দাদের মলম হিসেবেই তৈরী হয়েছিল, কিন্তু অপব্যবহার হচ্ছে ফর্সা হবার ক্রিম হিসেবে !
এগুলি বা অন্য স্টেরয়েড না জেনে মুখে বা অন্যত্র মাত্রাছাড়া ভাবে মাখলে স্কিন পাতলা হয়ে যায়, লাল হয়ে , রক্তনালী দেখা যায়, ব্রণ বেরোয়, মেয়েদের মুখে অবাঞ্ছিত লোম বের হয়!
স্টেরয়েড এডিকশন বা নেশার শিকার হয় মানুষটি!
এই ভয়ঙ্কর সংকটের কিছু ছবি যদি দেখাই তাহলে বোঝা যাবে বিষয়টির সর্বগ্রাসী ভয়াবহতা !
হাতে একটু সময় থাকলে এক নাগাড়ে দেখে ফেলতে পারেন ভিডিও গুলি।
এই ভিডিওগুলি দেখার পর, আশা করি ফর্সা হবার উদগ্র বাসনায় আর কেউ মুখ পোড়াবেন না!
আর দাদের এই সর্বগ্রাসী মহামারীর আগুনে ঘৃতাহুতিও দেবেন না!
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলা খুব জরুরি ।
স্টেরয়েড মানেই কিন্তু খারাপ নয়!
এটি অন্তত প্রয়োজনীয় একটি ওষুধ যা শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শেই ব্যবহার করা যায়।
স্বচিকিৎসা কখনোই নয়!
এই স্টেরয়েড ক্রিমের অপব্যবহার আমাদের দেশের লজ্জা!
অভিশাপ!
আসুন সবাই সচেতন হই!
সবাই সচেতন হলে এই সব স্টেরয়েড ককটেল ক্রিমের দুহাজার কোটি টাকার অপসাম্রাজ্য টা এবার ধ্বসে যাবে!
অনেক অনেক ধন্যবাদ এই সচেতনতামূলক লেখা ও ভিডিওর জন্য।ভালো থাকবেন।