৯ ই আগস্ট আর জি কর কান্ডের পর যে দ্রোহ শুরু হয়েছিল, আজো তা প্রবাহমান। ১৪ ই আগস্ট নারীদের রাত দখল, অজস্র মিটিং, মিছিল, সমাবেশ, মানববন্ধন হয়েছে, যার তুলনা মেলা ভার। জুনিয়র ডাক্তার দের দশদফা দাবীর আন্দোলন, লালবাজার অভিযান, স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান, অনশন আন্দোলন কর্মসূচি ব্যাপক প্রভাব ফেলে সমাজে। এক নতুন ধারার আন্দোলন গোটা রাজ্য জুড়ে গড়ে ওঠে।
এই ধরনের বাতাবরন যখন তৈরী হয়, স্বাভাবিক ভাবেই সমাজ জুড়ে অসংখ্য মতামত উঠে আসে। সেটাই স্বাভাবিক। আন্দোলনের পক্ষে যেমন মতামত থাকে, বিপক্ষেও থাকে। এই তর্কটা ভালো। বাস্তব আন্দোলনের সাথে তর্ক থাকলে চিন্তার প্রসার ঘটে। আন্দোলনও নতুন ভাবনায় জারিত হয়। এই রকম দু একটি বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলা যেতে পারে।
একটা মত আসছে যে, জুনিয়র ডাক্তারদের এই আন্দোলনে কি করা উচিত ছিল? কি ভুল ছিল? ইত্যাদি। আমি এই প্রশ্নে আলোচনা করতে খুব একটা আগ্রহী নই। কারন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আমার অবস্থান বারবার রেখেছি। এই দ্রোহের সময় তারা আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্টতাতে নিয়ে যেতে পেরেছেন। এবং তাতে চলমান গণ আন্দোলন গতিশীল হয়েছে। আন্দোলন করার খোলা ময়দান ছিল ও আছে। যারা জুনিয়র ডাক্তারদের কি করা উচিত ছিল বলছেন তারা তাদের’ ‘সঠিক’ ভাবনাচিন্তা ও কর্মসূচি নিয়ে মানুষের এই দ্রোহকে শক্তিশালী করুন।আমরা সেই আশায় থাকি।
একটা প্রশ্ন উঠে এসেছে, আন্দোলনে লাভ ক্ষতির কি হলো? আসলে এই লাভ ক্ষতির পরিমাপটা করবো কি ভাবে? এই চলমান আন্দোলন তো কতগুলো রাজনৈতিক সামাজিক প্রশ্নকে সামনে এনেছে।অভয়াকে নৃশংস ভাবে খুন ও ধর্ষণের ঘটনা মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এক বিশাল গণআন্দোলন গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্তরের মানুষ সেই প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করেছে। সেখান থেকে অনেক মৌলিক বিষয় উঠে এসেছে। এখন এটা কি ঘটনা, যে, এই আন্দোলনকে এই রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল ট্যাকল করে তার পক্ষে নিয়ে গিয়েছে? অনেকেই বলবে, না, তা হয়নি। বা, যে আন্দোলন চলছে তা কি শেষ হয়ে গেছে? সেখানেও অনেকে উত্তর দেবেন, না, তাও হয়নি। তাহলে লাভ-ক্ষতির প্রশ্নটা আসবে কিভাবে? এই ধরনের গণআন্দোলন কখনো চূড়ায় উঠবে, কখনো প্রথাগত ভাবে চলবে । কখন এটা আবার চূড়ায় উঠবে, সেটা আন্দোলনের কোর্সেই নির্ধারিত হবে। আগাম বলা সম্ভবপর নয়। আন্দোলন চলমান, এটুকুই যথেষ্ট।
একটা প্রশ্ন আসতে পারে, ভোটে কি হবে? যদি এই রাজ্যের উপনির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসে, এটুকু বলতে পারি সাধারণভাবে এই রাজ্যে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটিই সুবিধা পায়। তার অনেক কারণ থাকে। কিছু ব্যতিক্রম ও ঘটে। আর যদি ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ধরি, সেতো অনেক দেরী আছে। আগামীদিনে এই রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে উঠবে কিনা, সেটা ভোটে প্রভাব ফেলবে কিনা, এতো আগে সেটা বলা যায় না। ফলে এই আন্দোলনে লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন টা হিসাব করাই সম্ভব নয়।
আরো নানান প্রশ্ন উঠে আসছে এই আন্দোলনকে নিয়ে। আগেই বলেছি, সেটাই স্বাভাবিক। সময় পেলে সে সব নিয়েও কথা বলা যাবে।
লেখক: কুশল দেবনাথ