এক একদিন ভাবি,
শুধুই ভাবি!
বলতে গেলে প্রতিদিনই ভাবি-
এমন একটি অসম্ভব কবিতা লিখবো- যার পরে আর লেখার মতো কোন কবিতা থাকবে না কারো কাছে!
একটি এমন কবিতা লিখবো,
যা কোন কবিই কল্পনা করেনি কখনো।
একটি এমন … একটি এমন অলৌকিক কবিতা লিখবো- যা আমারই লেখার কথা ছিল না কোনকালেই!
কত বার ভেবেছি- সেই কবিতা হবে আমার মায়ের মতো- যুক্তিতর্কহীন ভালোবাসার একচ্ছত্র আধিপত্যে ভরা;
অথবা বাবার মতো- অটল আদর্শ আর যমের মতো ভয়ে ঠাসা;
অথবা দিদির অহেতুক কানমলা আর উপচে পড়া ভালোবাসায় ভরা;
উৎকোচের বিনিময়ে ছোট
বোনের নিঃসঙ্কোচ ভরসার স্থান,
ভাইয়ের লুকানো পাপের আশ্রয়,
দাদার চড় থাপ্পড় মারার পর বুকে জড়িয়ে ধরার অদম্য আকুতি।
সেই কবিতার শব্দ হবে
অকারণে দেখনদারি করা এক উচ্ছল কিশোরীর ঘুঙুর,
ছন্দ হবে পুজার অঞ্জলির মন্ত্র শেষে ছুঁড়ে দেয়া প্রথম চিরকুট এর মতো,
মাত্রা হবে এক দুঃসাহসী যুবতীর সন্ধিহান প্রেম আর লোকলজ্জা,
লাইন হবে –
এক অর্ধাঙ্গিনীর অতিরিক্ত অধিকারের মতো।
মাঠ পেরিয়ে পূর্ণিমা রাতে ঘাটের পাশে বসা বাঁশি বাজানো এক উঠতি যুবকের সুর হবে,
সামনের রাস্তা পেরিয়ে যাওয়া অধুনা প্রাক্তন হওয়া প্রেমিকার স্মৃতি গাঁথা থাকবে চিনচিনে ব্যথা হয়ে,
আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ সংসারী যুবকের
হঠাৎ একদিন কারো হাত ধরে ফের বুকের ভেতর নিরুদ্দেশ হবার বোহেমিয়ান ছ্যাবলামি থাকবে সেই কবিতায়।
অথবা নিতান্তই সাদামাটা ছাপোষা গৃহস্থের ঘরকন্নার কথা!
কতবার কত কি যে ভেবেছি, তার ইয়ত্তা নেই-
সেই কবিতায় পাড়া পড়শি থেকে শুরু একটা জীবনকালের সম্ভাব্য সকল শত্রু মিত্র- সবাই থাকবে।
রাজনীতি সমাজনীতি অর্থনীতি ইতিহাস ধর্ম ব্যারিকেড বিদ্রোহ লাশ- পরতে পরতে ঠাসা থাকবে বারুদের মতো।
সেই কবিতায় এক এক করে লিখে রাখবো ভুলে যাওয়া, থেকে যাওয়া সব বন্ধুদের …
হঠাৎ অবাক বিস্ময়ে তাঁরা আবিষ্কার করবে- এই রে! এই কবিতা তো আমার ও, আমাদের ও!
কবিতা পড়ে আমার বাবার মতন শিক্ষক আশীর্বাদ করবেন – বড় হও!
মায়ের মতো শিক্ষিকা বলবেন- চল আমার সঙ্গে। আজ তোর জন্য নারকেলের নাড়ু বানিয়েছি।
সেই কবিতা লিখতে লিখতে আমি হারিয়ে ফেলবো নিজেকে।
সেই কবিতা পড়তে পড়তে পাঠক হয়ে যাবে কবি অথবা কবিতা।
সেই কবিতা আবৃত্তি করতে করতে … আবৃত্তিকার দাবি করবে- এ কবিতা একান্তই আমার! কবিও আমিই!
মন্ত্রমুগ্ধের মতো শ্রোতা সেই কবিতা শুনতে শুনতে দাবি করে বসবে- এ কবিতা আমার লেখা।
একসময় সব শ্রোতা হয়ে যাবে দর্শক-
সেই কবিতা
ফুল হবে, ফল হবে, পাখপাখালি হয়ে উড়ে যাবে গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে….
সমভূমি ছেড়ে মালভূমি হয়ে মরুভূমির মরুদ্যানে বিশ্রাম নেবে সেই কবিতা।
তারপর
উড়ে যেতে শুরু করবে মেঘের কোলে ঘেঁষে,
সেই কবিতা একসময় অঝোর বৃষ্টি হবে,
ঝর্ণা হবে,
পাহাড়ের গায়ে চঞ্চল প্রেমিকার মতো লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই কবিতা নদী হবে,
কুল ভাঙবে …
সেই কবিতা একদিন সোচ্চারে ঘোষণা করবে – আমার নাম।
বলবে- সমুদ্রই একমাত্র প্রেমিক আমার।
মৃত্যুশোক ভুলে লবণাক্ত অশ্রু মুছে বাষ্পায়িত হবো-
আমিই তো মেঘ হবো বৃষ্টি হবো ঝর্ণা হবো নদী হবো পরজন্মে ফের!
ভেবে ভেবে কুল কিনারা পাইনি এখনো।
যে কবিতা অসম্ভব, এখনো অব্দি তাকে কোথাও খুঁজে পাইনি আমি।
পাইনি বলেই- লিখতে পারিনি!
লিখতে পারিনি বলেই- সবাই কবিতা লিখছেন,
আর আমি
কবিতার নামে এইসব গাঁজাখুরি গল্প লিখে যাচ্ছি … এখনো!