১৪ জুন , রবিবার
ঠিক যখনই রোববারের দুপুরে ডাল সবজি আর একটুকরো আলু মুখে পুরতে যাচ্ছেন অজস্র ভারতীয়, থেমে যাচ্ছে তাদের মুখের গ্রাস।
ঠিক যখনই একটা সতেরো বছরের ছেলে ‘কাই পো চে’ দেখে ভাবছে সুশান্ত সিং রাজপুত হবে, থেমে যাচ্ছে তার স্বপ্ন ।
ঠিক যখনই একটা বায়োপিক ফিল্ম বানাবেন বলে এক বলিউড পরিচালক ধোনির বায়োপিক দেখছেন , খবরটা পেয়ে শিউরে উঠছেন তিনি।
ঠিক যখনই অজস্র মেয়ে নিজেকে শ্রদ্ধা কাপুরের জায়গায় বসিয়ে ‘ছিঁচোরে’র সুশান্ত প্রেমিককে দেখছে, গুঁড়িয়ে যাচ্ছে ওদের হৃদয় ।
ঠিক যখনই ব্রেকাপ হবার পর ত্রিশ বছরের তরুণ ভাবছে, এতদিনের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেল! না হয় আরেকবার ফোন করা যাক আজ দুপুরে প্রাক্তনীকে, কেঁপে যাচ্ছে ওর মোবাইল ধরা হাত।
মাত্র চৌত্রিশ বছর বয়স! আজ খানখান হয়ে যাচ্ছে বলিউডের প্রেমপাগল কতো তরুণীর হৃদয়।
পঁচিশ বছর আগে এমনই অনেক যুবককে হাউ হাউ করে কাঁদিয়েছিলেন আরেকজন।
দিব্যা ভারতী।
দিওয়ানার ‘দিব্যা’ আর ছিঁচোড়ের ‘সুশান্ত’।
একই প্রেমিক সত্বার এদিক ওদিক।
এ বছরে অনেক মানুষকে আমরা হারিয়েছি। অনেক প্রতিভাবানকে। ইরফানের মতো জননায়ক, ঋষি কাপুরের মতো কাপুর ঘরাণার আভিজাত্য, অনেক সঙ্গীতশিল্পী, প্রবাদপ্রতিম চিকিৎসকরা, কোভিড শহীদ স্বাস্থ্যকর্মীরা।
কিন্তু এভাবে চলে যায় নাকি কেউ?
একটু কথা বলুন, বকুন, হাবিজাবি। যা খুশি। নাচুন, কাঁদুন, ছবি আঁকুন, যেমন খুশি তেমন সাজুন।
প্লিজ পালিয়ে যাবেন না জীবন থেকে। আমি আছি অন্তত। আমার মতো অনেক চিকিৎসক আছেন, মনোবিদ আছেন, সাহিত্যিক আছেন, শিল্পী আছেন, সংবেদনশীল মানুষ আছেন। আমরা শুনতে চাই। বলুন না কীসের কষ্ট! একবার বলেই দেখুন না!
যাঁরা হাওড়া ব্রিজে ওঠা মহিলাকে নিয়ে হাসিতামাশা করছিলেন, এখন একটু ভাবুন তো কতো কষ্ট বুকে চেপে রাখেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতরা।
এভাবেই কি রাজকাহিনী শেষ হয়ে যায়?
প্যানডেমিক কেটে যাবে। একদিন এই ঝড় কেটে যাবে। কেউ সুশান্ত সিং হবেন না প্লিজ। দেখুন তাকিয়ে আশেপাশে, কেউ হয়তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। কেউ নিশ্চয়ই আপনার কথা শুনতে চায়। কেউ নিশ্চয়ই আপনার হাত দুটো ছোঁবে বলে অপেক্ষা করছে কবে কেটে যাবে এই ক্রান্তিকাল।
ভালবাসার ভাইরাস ছড়িয়ে দিন হু হু করে। মাস্কের বাইরে চোখে চোখে কথা হোক। অনলাইনে কথা হোক। সংক্রামক হোক ভালবাসা । হোক ছোঁয়াচে।
আপনারা এভাবে পালিয়ে যাবেন না প্লিজ!