হয়তো অনেকেই জানেন। হয়তো অনেকেই জানেন না। প্যারেইডোলিয়া (Pareidolia) হলো সম্পর্কহীন কোন কিছুতে অর্থপূর্ণ কিছু খুঁজে পাওয়া।
সহজ উদাহরণ: আপনি কোন কিছুর দিকে খানিকটা সময় তাকিয়ে থাকুন। দেখবেন – সেখানে আপনার পূর্বপরিচিত কোন কিছুর অবয়বের সঙ্গে মিল দেখতে পাবেন।
এটি একটি বিভ্রম। আমাদের মস্তিষ্কে এরকম ক্ষণস্থায়ী বিভ্রম সবারই হয়।
বেশিক্ষণ সেটা নিয়ে ভাবলে মনে হবে- ওটা সত্যিই পরিচিত মুখ বা অবয়ব।
অনেক সময় আমরা কোন পাথরে মানুষের মুখের অবয়ব খুঁজে পাই।
অনেক সময় আমরা সাদা কোন কিছুতে ভূত দেখি। চাঁদের বুড়িও এরকম একটি ঘটনা।
সহজ একটি উদাহরণ হলো – গোল স্মাইলি। ওরকম একটা গোলের মধ্যে তিনটি দাগ দেখলে আমরা মানুষের মুখমণ্ডল কল্পনা করে নিই। আর এই বিষয়টি নিয়ে ভণ্ডরা যুগে যুগে নানা রকম ব্যবসা করেছে। অন্ধবিশ্বাসী অনুরাগীরা সেগুলোতে বিশ্বাস করেছে।
শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীর বহু উন্নত দেশেও এরকম পাথরে ভগবান, গাছের গুঁড়িতে ভগবান, মেঘে মাতা মেরী অন্য কোথাও যীশু খ্রীষ্ট – এসব খুঁজে পেয়েছে। মানুষ কোনদিনই প্রশ্ন করে না এসব নিয়ে। ঠিক এই কারণেই অশিক্ষিত ভণ্ডরা নিজের বিভিন্ন ভাবে ভঙ্গি ও কর্মকাণ্ড দ্বারা মানুষের মনে বিভ্রম তৈরি করে।
কিন্তু এই বিষয়টি অনেক সময় আমাদের খুব সাহায্য করে। চিত্রশিল্পীরা যখন কোন ছবি আঁকেন, তাঁরা রঙের নানান রকম ব্যবহার করে নানান অবয়ব তৈরি করেন।
আমরা মেডিকেল সায়েন্সে বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে নিয়ে বিভিন্ন রোগ ডায়াগনসিস করি। যেমন ধরুন – আমাদের ব্রেন স্টেমের একটি অসুখ হয়, যখন অ্যাবনর্মাল জায়গাটা দেখতে ত্রিশূলের মত হয় বলে আমরা তাকে বলি Trident sign। এরকম অজস্র উদাহরণ আছে।
সেগুলো খুব সহজে আমাদের ব্রেন মনে রাখে বলে, আমাদের কাজ সহজ হয়ে যায়। এবার আপনি যদি বলেন – সেখানে শিব ঠাকুর আছেন, তাহলেই দেখবেন – ফাঁদে পড়ার জন্য মানুষের অভাব নেই!! ব্যবসা জমে যাবে!
এমনও হতে পারে শুধু দেখা নয়, অন্যান্য সেন্স যেমন কানে শোনার ক্ষেত্রে ও একই ঘটনা ঘটতে পারে। হঠাৎ কোন কিছুর শব্দের ভেতর পরিচিত গানের তাল খুঁজে পেতে পারেন।
দুটি উদাহরণ দিই এই বিষয়ে – সিঙ্গাপুরে Monkey God বলে গাছের গুঁড়িতে এরকম এক ভগবান তৈরি হয়ে গিয়েছিল রাতারাতি ২০০৭ সালে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পর ধোঁয়ার ভেতর অনেকে শয়তানের চেহারা আবিষ্কার করেছিল!!
এইটুকু বলার যে- বিজ্ঞান কে ভণ্ডরা কিভাবে ব্যবহার করে সেটা শিখুন।
প্রশ্ন করার অভ্যাস তৈরি করুন। একটাই তো মানুষ জন্ম …. না হয় লোকের চোখে একটু তেরিয়াই হলেন!! চুপচাপ সব কিছু মেনে নিয়ে তো পাথরও যুগ যুগ ধরে পড়ে থাকে।
শেষে একটি মজার গল্প বলি এই নিয়ে – আগেকার দিনের সিনেমায় দেখেছেন আশা করি – নায়ক বা নায়িকা একজন আরেকজনের বিরহে গাছপালা পশুপাখি ইত্যাদির মধ্যেও প্রিয়তম/প্রিয়তমা কে দেখতে পেত বা অনুভব করতো। মানে যেদিকে তাকাই তোমাকেই দেখি শুধু …হে হে
আজকাল আর কেউ এইরকম প্যারেইডোলিয়াতে বিশ্বাস করে না ….ভাগ্যিস। 
ছবিতেঃ রোমানিয়ান স্ফিংস