রোগীর নাম গল্পের স্বার্থেই কিঞ্চিৎ পরে বলবো। এই মহাশয় বছর দেড়েক আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন দুটো পা ফুলিয়ে। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় ওনার দুই পায়ে শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার জন্য পা ফুলে যাচ্ছে। আরো কিছু খুবই ব্যয়সাপেক্ষ পরীক্ষার মাধ্যমে (সরকারি বদান্যতায় হাসপাতালেই উপলব্ধ) প্রমাণিত হয়, ওনার আপলা সিনড্রোম নামক এক রোগ হয়েছে, যার জন্য দীর্ঘকাল যাবৎ ওনাকে রক্ত তরল রাখার ঔষধ খেয়ে যেতে হবে।
এই যুবকের পা কেন ফুললো, সেটা বাংলার প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা দেখেই বলে দিতে পারেন নি, ভর্তি রেখে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়েছিল। আজকালকার ডাক্তারেরা নাড়ি টিপে, রোগীকে পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয়ের পারদর্শিতা হারিয়েছেন, যা এদেশের আয়ুর্বেদ বৈদ্যগণ সহজেই করে ফেলতেন। এখনকার ডাক্তারেরা দশ টাকার ঔষধ দিতে দশ লাখ টাকার পরীক্ষা করিয়ে ফেলেন- সবই ব্যবসা আর কি! যাই হোক কী আর করা যাবে!!
এর পর রোগীর তিনবার আউটডোর ভিসিটের প্রমাণ পাওয়া যায়, যার প্রত্যেকটাতেই ওনাকে ‘পিটি/ আই এন আর’ পরীক্ষা করতে বলা হলেও উনি করিয়ে আনেন নি (অজ্ঞাত কারণে), স্বভাবতই ওনার ঔষধের মাত্রা বাড়ানো/ কমানো সম্ভব হয়নি। তারপর এলো কোভিড…
লকডাউনের কারণে উনি আসতে পারেননি। এর পর উনি দ্বারস্থ হলেন নাড়ি টিপে, পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন পথ্য দিয়ে অসুখ সারিয়ে তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যের। উনি বললেন ওনার শরীরে ক্যানসারের বীজ ঢুকেছে। সেই ক্যানসার দূরীকরণে ওনার দেওয়া ঔষধপত্রের ছবি রইলো সাথে।
এই ঔষধের মধ্যে অন্যতম হলো হার’বাল’ গোমূত্র। মাত্র ৩৭৫ টাকার এই ঔষুধ তৈরি হয়েছে গোমূত্র, তুলসী পাতা এবং এলাচ সহযোগে। দাম দেখে ঘাবড়াবেন না। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই সস্তার। একটু গোমূত্রের উপাদানগুলো দেখুন- গোল্ড আছে গোল্ড!! সোনার দোকানে গিয়ে ৩৭৫ টাকায় সোনা পাবেন? আর গুণাগুণ দেখুন একবার। আপনাদের সুবিধার্থে আমিই লিস্ট বানিয়ে দিচ্ছি-
১. মাইক্রোবস, ফাংগাস, ব্যাক্টেরিয়া (এরা মাইক্রোবস নয়) ইত্যাদির বিরুদ্ধে কাজ করে।
২. অপরিশুদ্ধ জিনিসপত্র বের করে দেয় দেহ থেকে। তাই গোমূত্র খেয়ে ডায়রিয়া হলে সেটা নাকি খুব ভালো লক্ষণ।
৩. ক্যানসার, এইডসে কাজ করে।
৪. বার্ধক্য দূর করে।
৫. চিন্তা দূর করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
৬. পরিপাকতন্ত্রকে ঠিক করে, কৃমি থাকলে মেরে দেয়।
৭. উচ্চ রক্তচাপ, মধুমেহ, রক্তাল্পতা, জন্ডিস……
৮. হৃদ-রক্ত সংবহনতন্ত্র, শ্বসন তন্ত্র, যকৃৎ, বৃক্ক সব কিছুকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে।
৯. এমনকি মুখেও.. থাক আর ভাবতে পারছিনা!!
সত্যি বলছি লাখ টাকা দিলেও তথাকথিত
‘অ্যালোপ্যাথি’তে এই রকম ‘ব্রড স্পেকট্রাম’ ঔষধ নেই, সেখানে মাত্র ৩৭৫ টাকায়… এই অ্যালোপ্যাথির ডাক্তারগুলো দেশটাকে শ্যাষ করে দিলো গো, আমাদের আয়ুর্বেদই সেরা’…
যাইহোক দিনের শেষে বদ্দা আবার হাসপাতালে ফিরে এসেছেন। বদ্দার ঠ্যাংয়ের ছবি রইলো, এখন অপারেশন ছাড়া গতি নেই।
দোষ বদ্দার নয়, দোষ বদ্দার কপালের, হয়তো আমাদেরও, তবে সবচেয়ে বেশি দোষ আমাদের দেশের। বৈদিক যুগে বিশ্বসেরা আমরা, আজ সেই যুগের দোহাই দিয়ে কুসংস্কারে ডুবে রয়েছি, দেশের সরকারও সেই পথেই আমাদের নামিয়ে নিয়ে চলেছে, আমরাও অন্ধকারের সরণি ধরে চলেছি- কোন অভিমুখে জানি না।
ভাবলাম দেশের হিন্দুরা সত্যিই “খাতরে মে হ্যায়”, পরে দেখলাম রোগীর নাম তারিক মোল্লা (নাম পরিবর্তিত)। বুঝলাম হিন্দু না, পুরো দেশটাই “খাতরে মে হ্যায়” ???…..
??? দারুন।