কাঁধে ব্যথা। শেষ ৩ মাসে ব্যথাটা বেড়েছে। অনেকক্ষণ কাঁধে কিছু বয়ে নিয়ে গেলে যেমন ব্যথা হয়, অনেকক্ষণ কেউ কাঁধে হাত রাখলে যেমন ব্যথা হয়, সেইরকম। আগে কোনও আত্মীয় বন্ধুকে চিরকালের জন্য বিদায় জানাতে হলে কাঁধে করে বহন করে নিয়ে যাওয়া হতো। সেই যাত্রা পথে ভেসে উঠত ভালবাসা, মান-অভিমানের কোলাজ। চিরকালের জন্য হারিয়ে ফেলার হাহাকার। যে কাঁধে হাত রেখে সে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটত সেই কাঁধই তার ভার বইছে। সেই একই কাঁধের ব্যথা, ফিরে ফিরে আসছে গত ৯ মাসে। কমপক্ষে ৭৭৬ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি এই ক’মাসে। রোজই আমাদের আত্মীয় বিয়োগ। কেউ পেশাদার জীবনের শেষ প্রান্তে,কেউ সবে পেশাদার জীবন শুরু করেছিল।৬ মাসের শিশু হারালো তার বাবাকে,৭০ বছরের বৃদ্ধার সাথে চিরও বিচ্ছেদ হল তার একমাত্র সন্তানের – দু ক্ষেত্রেই হারিয়ে গেলো সংসারের ভার বওয়ার কাঁধটা।
প্রতিটি সহকর্মীর মৃত্যুর খবর, প্রতিটা চলে যাওয়া ডাক্তারের ছবির তলায় RIP লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে তাঁদের দেহ বহন করে নিয়ে চলেছি আমরা সবাই মিলে। যোদ্ধারা বীরের মতো যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করলে স্বর্গে যায়। এই যোদ্ধারা বীরের থেকেও বীর, নিজের মৃত্যু যে কোনও সময় আসতে পারে জেনেও তারা অন্যকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যস্ত। নিজের পরিজনেরা বিপদে পড়তে পারে জেনেও তারা বেরিয়ে পড়েন এই মহামারীর সঙ্গে লড়াই করতে। এরা তো দেবশিশু। নিজের কাজ শেষ করে স্বর্গে ফিরে যাচ্ছে। পাশে দাঁড়ানো সহযোদ্ধারা যারা বয়ে নিয়ে গেল তারা মৃত্যু দেখেও পিপিই পরে আবার যুদ্ধে নামে, কোনও কিছুর প্রত্যাশা না করে। তাদের চোখ দিয়ে রক্ত গড়ায়, হৃদয় দিয়ে কান্না। কোনোটাই দেখা যায় না।আর কাজের মধ্যে দিয়ে আমরা তাদের খুঁজে পাই।
এ মোর হৃদয়ের বিজন আকাশে
তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে ,
গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে
তাহার পানে চাই দু বাহু বাড়ায়ে।
জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে
বন্ধু হে আমার রয়েছো দাঁড়ায়ে।