…..রূপকথা নয় সে নয় । এক অনুসরণীয় উদাহরণ। প্রতিদিনের সংবাদপত্রের পাতায় ভরে থাকা অজস্র নারী নির্যাতনের ঘটনার খবর দেখে দেখে যখন মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছে ঠিক তখনই অন্য একটি খবর অনেক দিনের দাবক্লিষ্ট দিনের পর এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি হয়ে রুখা,শুখা মনজমিনটাকে যেন খানিক ভিজিয়ে দিল। সেই গল্প শোনাবো বলেই আজ হাজির হয়েছি কলম হাতে।আমাদের এবারের গন্তব্য সুদূর রাজস্থান।
রাজস্থানের দক্ষিণ মধ্য ভাগে অবস্থিত রাজসমন্দ জেলার ছোট্ট একটা গ্রাম পিপলান্ত্রি। কেবল রাজ্যের মধ্যে নয় গোটা দেশ জুড়েই রাজস্থান রাজ্যের এই অঞ্চলের পরিচিতি উৎকৃষ্ট মানের মার্বেল পাথরের খনির কারণে। খননের ফলে তৈরি হয় খোলামুখ খনির। স্বাভাবিক ভাবেই ধরিত্রীর কোমল আস্তরণ সরিয়ে ধরিত্রীমাতাকে রিক্ত, নিঃস্ব করে সেই মূল্যবান পাথর তুলে আনতে আনতে তৈরি হয়েছিল বড়ো বড়ো খোদল। পিপলান্ত্রির নাম গিনেস বুকে উঠে গেল খনি থেকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে মার্বেল পাথর তুলে আনার জন্য। এ যেন সেই আজব কাণ্ড! ছিল জমি, হয়ে গেল খানাখন্দে ভরা এক বন্ধুর বন্ধ্যা বেহর ! পকেট ভরলো খনি ব্যবসায়ীদের।
মাটির চরিত্র বদলে গেলে মানুষের জীবনেও নেমে আসে বিপর্যয়। জমি কেন্দ্রিক জীবিকা কৃষি অনুৎপাদনশীল হয়ে পড়ে, কর্মহীন হয়ে যায় জমিজীবি মানুষেরা।পরম যত্নে মাটি আঁকড়ে থাকা বনভূমি উৎখাত হয়, বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া হয় ভয়াবহ – বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, নেমে যায় ব্যবহার যোগ্য ভৌমজলের স্তর, লোপাট হয়ে যায় বন্যপ্রাণ , বাড়তে থাকে খনিজ বর্জ্যের স্তূপ, বাতাস ধূলিময় হয়ে বিপন্ন করে প্রাণি তথা মানুষের জীবন। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা বেড়েই চলে ক্রমশ।
এইসব কর্মকাণ্ডের ফলে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হন মহিলারা বিশেষতঃ গ্রামীণ মহিলারা । এমনিতেই এদেশে নানান বৈষম্যের শিকার হতে হয় আমাদের কন্যা সন্তানদের – ইন্টারনেট সংযোগ , ডিজিটাল ওয়ালেট, দুরন্ত গতিতে চলা বুলেট ট্রেন , ভঙ্গুর পাহাড় কেটে সুরঙ্গ সড়ক – এতো সব চটকদার প্রকল্পের পাশেই সমান্তরাল আঁধার রেখার মতো অবস্থান করে কন্যা ভ্রুণ হত্যা, পরিবারের কন্যা সন্তানদের ন্যূনতম শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা, নাবালিকা বয়সে বিবাহ , চরম লিঙ্গ বৈষম্য ,নারী পাচার,কন্যার বিবাহের সময় যৌতূক প্রদানের নির্লজ্জ সামাজিক কু প্রথা , গার্হস্থ্য হিংসার মতো ঘটনাগুলো। আমরা এসবের সঙ্গে সহাবস্থানে কেমন যেন অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছি এতকাল ধরে। খনি থেকে যথেচ্ছভাবে মার্বেল উত্তোলনের ফলে পিপলান্ত্রি গ্রামের মানুষের জীবনে নেমে আসে এক অভাবিত বিপর্যয়। কৃষি জমি থেকে উৎসন্ন মানুষেরা রুজি রুটির সন্ধানে বাপ পিতামহের ভিটেমাটি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি দিতে বাধ্য হয়। বাড়তে থাকে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী মানুষের পরিযান। এই বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী মানুষজনের সাথে পা মিলিয়ে ছিলেন শ্যামসুন্দর পালিওয়াল। বছর চল্লিশের এক তরতাজা যুবক তখন সে । অন্য আর পাঁচজন প্রতিবেশীর মতো
গ্রাম ছেড়ে সাময়িক ভাবে শহরমুখী হলেও শ্যামের মন পড়ে রইলো তার গ্রামে। শ্যামের বিশ্বাস ছিল যে প্রকৃতি দুহাত উজাড় করে দিয়ে মানুষ তথা সমস্ত জীবকুলকে লালন পালন পরিবর্ধন করে তাকে রিক্ত নিঃস্ব করলে চলবেনা, কেননা তার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। প্রকৃতির দেওয়া জল জমি জঙ্গল রক্ষা করতে হবে আমাদের , কেননা আমরা প্রকৃতির কাছে ঋণী। একে অস্বীকার করার পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর, বিনাশী। এই সময়ে শ্যামের জীবনে ঘটে যায় এক চরম বিপর্যয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ডিহাইড্রেশনের কারণে মারা যায় তাঁর প্রিয়তমা কন্যা কিরণ। সন্তানের এভাবে অকস্মাৎ চলে যাওয়ার ঘটনায় হতবাক বিমূঢ় হয়ে যান শ্যাম। শোকের পর্বেই নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি নেমে পড়েন এক প্রত্যয়ী কর্মযজ্ঞে। তিনি উপলব্ধি করলেন যে কারণে আজ কিরণের চলে যাওয়া তা আগামী দিনে হয়তো আরও অনেক অনেক কিরণের জীবন কেড়ে নেবে। জল জামিন জঙ্গলকে রক্ষা করার পাশাপাশি রক্ষা করতে হবে গ্রামের বেটিদেরও। কন্যারাতো প্রকৃতিরই প্রতিরূপ। তাঁদের উপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে। মেয়ে বলে তাদের কোনোভাবেই অবহেলা করা ঠিক নয় এতে সমাজের বিকাশ ব্যাহত হয়। এমন ভাবনা থেকেই শ্যামসুন্দর শুরু করলেন তাঁর পিপলান্ত্রির পুনর্গঠনের কাজ। প্রয়াতা কন্যা কিরণের স্মৃতি স্মারক হিসেবে একটি গাছের চারা রোপণ করলেন শ্যাম। গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে শ্যাম প্রচার করলেন তাঁর উন্নয়ন প্রকল্পের কথা। বোঝালেন, অনেক হয়েছে, এবার প্রকৃতির ঋণ শোধ করতে হবে। শ্যামসুন্দর পালিওয়ালকে গ্রামের লোকজন সরপঞ্চ হিসেবে নির্বাচিত করায় প্রশাসনের সহায়তা পাওয়া তাঁর পক্ষে অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। তবে শ্যামসুন্দর জানতেন যে কোনো উদ্যোগ তখনই সফলতা অর্জন করবে যখন এলাকার আপামর জনসাধারণ খুব ইতিবাচক ভাবে তাঁর চিন্তাভাবনার সঙ্গে সহযোগিতা করবে । গ্রামের মানুষেরা যদি বুঝতে পারেন যে এই সমস্ত কর্মকান্ডের ফলে তাঁদের যথার্থ কল্যাণ হবে তাহলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অনেক সহজ হয়ে যাবে। বাস্তবে তেমনই ঘটলো।
সরপঞ্চ শ্যামসুন্দরের প্রথম পদক্ষেপ হলো মার্বেল পাথরের খাদানগুলোকে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা এবং বেআইনি খাদানগুলোকে চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া। নিজেদের স্বার্থত্যাগে অনিচ্ছুক খাদানমালিকদের ওপর প্রশাসন ও জনগণের তরফে চাপ সৃষ্টির ফলে ধীরে ধীরে খাদানের অনিয়ন্ত্রিত কাজকর্মকে কমিয়ে আনা সম্ভব হলো। এর ফলে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কমে এলো। এরপর একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন শ্যামসুন্দর তথা পিপলান্ত্রির মানুষেরা। প্রতিটি পরিবারে একটি কন্যা সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সেই পরিবারের পক্ষ থেকে ১১১ কি চারাগাছ রোপণ করা বাধ্যতামূলক করা হলো। গ্রামের অধিবাসীরা সানন্দে রাজি হলো এমন অভিনব প্রস্তাবে। বৃক্ষ রোপন করতে যাবার সময় প্রতিটা নবজাতিকাকে রেশমি কাপড়ে মোড়া ঝুড়িতে শুইয়ে সাড়ম্বরে নিয়ে যাওয়া হয় উৎসব প্রাঙ্গণে যেখানে গাছ লাগানো হবে, তারপর কন্যাদের মঙ্গল কামনায় পালন করা হয় কিছু পার্বণিক সংস্কার।আর এরপর একে একে রোপণ করা হয় গাছের চারাগুলোকে। গাছের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আদরের ছোট মেয়েরাও একটু একটু করে বড় হয়ে উঠবে এই বিষয়টি প্রতিটি পরিবারের সঙ্গে গাছ , পরিবেশকে এক আশ্চর্য বন্ধনে বেঁধে রাখে।
গাছগুলোও যেন হয়ে যায় তাঁদের পরিবারের অচ্ছেদ্য অংশ। আর তাই রাখিবন্ধন উৎসবের সময় গ্রামের মেয়েরা গাছকে রাখী পড়িয়ে তাঁদের ঋণ স্বীকার করে নেয়। এ যেন একালের প্রেক্ষাপটে সুপ্রাচীন তপোবন আদর্শকে ফিরিয়ে আনা।
এইটুকুতেই থেমে থাকেননি শ্যামসুন্দর। সরপঞ্চ হিসেবে তিনি কয়েকটি বিধি নিয়ম লাগু করলেন যা অবশ্য মেনে চলতে হবে পিপলান্ত্রির সমস্ত মানুষকে। কি সেই নিয়ম?
এক) যথেচ্ছ ভাবে পশুচারণ করা যাবে না। নির্দিষ্ট চারণভূমিতেই গবাদিপশুদের চরানো যাবে।
দুই) মদ্যপান সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হলো।
তিন) কন্যা সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে পুত্র ও কন্যার মধ্যে কোনো রকম ভেদাভেদ করা যাবে না।
চার) পঞ্চায়েতের অনুমোদন ছাড়া কোনো অবস্থায় গাছ কাটা চলবে না।
এমন সব অনুশাসন এক সময় প্রচলিত থাকলেও তার গুরুত্ব ধীরে ধীরে অনেকাংশে কমে এসেছিল, আবার তাদের বিধিবদ্ধ করা হলো।
প্রশাসক হিসেবে শ্যাম বুঝতে পেরেছিলেন যে মেয়েদের আর্থিক অবস্থা সুরক্ষিত না হলে প্রচলিত নিয়মের নিগড়ে মানুষজনকে বেশিদিন বেঁধে রাখা যাবেনা।তাই প্রথম থেকেই এই বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর ছিল তাঁর। কন্যার স্মৃতিতে তিনি শুরু করলেন “ কিরণ নিধি যোজনা “ নামের এক আর্থিক পরিকল্পনা। এই প্রকল্প অনুসারে গ্রামের কোনো পরিবারে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ২১০০০ টাকা কন্যাটির নামে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা করা হবে। কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে দিতে হবে ১০০০০টাকা। অর্থাৎ সর্বমোট ( ২১০০০+ ১০০০০ ) ৩১০০০ টাকা কন্যার নামাঙ্কিত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে স্থায়ী মেয়াদি আমানত হিসেবে জমা থাকবে। মেয়েটির বয়স যখন ২০ হবে তখনই সেই টাকা তোলা যাবে। মেয়ের নামে টাকা জমা দেবার সময় অভিভাবকদের তরফে একটা এফিডেভিটে স্বাক্ষর করতে হবে যাতে বলা হয়েছে –
- ভবিষ্যতে কখনও কন্যা ভ্রুণ নষ্ট করা চলবে না।
- নির্দিষ্ট বয়সের আগেই নাবালিকা বয়সে কন্যার বিবাহ দেওয়া যাবে না।
- কন্যার পঠনপাঠনের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
- সন্তানের জন্মের পর লাগানো গাছগাছালির যত্নআত্তি করতে হবে যতদিন না সেগুলো পূর্ণ বয়স্ক বৃক্ষে পরিণত হচ্ছে।
সমাজবিজ্ঞানীদের মতে এই বিধিনিয়ম কার্যকর করার মধ্য দিয়ে নারীদের শুধু নিজেদের পায়ে সসন্মানে দাঁড় করানোর প্রয়াস করা হয়েছে তা নয়, তাঁদের পরিবেশবাদী দর্শনে দীক্ষিত করাও সম্ভব হয়েছে। শ্যামসুন্দর পালিওয়াল প্রবর্তীত পিপলান্ত্রি মডেলের এটাই সবথেকে বড়ো ইতিবাচক দিক । আর এই কারণেই এই কর্মপরিকল্পনাটি দেশ বিদেশের সর্বত্রই উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে। প্রতিটি কন্যাসন্তান পিছু ১১১ টি করে চারাগাছ রোপণের এই অভিনব পরিকল্পনা পিপলান্ত্রির ক্ষয়ে যাওয়া বাস্তুপরিবেশকেও উন্নত করেছে, জীবনদায়ী করেছে। বাতাস এখন অনেক পরিশুদ্ধ, ভৌম জলসীমায় এসেছে পরিবর্তন, একসময় পর্যাপ্ত রুজিরুটির অভাবে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়া মানুষেরা এখন পিপলান্ত্রিতেই পাচ্ছে সম্মানজনক রোজগারের আশ্বাস। সরপঞ্চ পালিওয়াল জী অত্যন্ত দূরদর্শী মানুষ সন্দেহ নেই, কেননা পিপলান্ত্রি পুনরুদ্ধার প্রকল্পের রূপায়ণের মধ্য দিয়েই তিনি জল জমি জঙ্গল বাঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ ও নারী সশক্তিকরণের সূত্রে সমাজের সার্বিক উন্নয়নের একটি কার্যকর পথনির্দেশ দিয়েছেন সকলের জন্য।
পিপলান্ত্রির কথা এই পর্যন্ত পড়ে যদি রাজস্থানের এই গ্রামটিতে যাবার কথা ভাবেন তাহলে আপনাকে সেখানে হাজির হতে হবে আগস্ট মাসে। এইসময় পিপলান্ত্রির মানুষেরা গাছ লাগানোর জন্য হৈ হৈ করে মাঠে নেমে পড়ে। বিগত এক বছরে গ্রামে যতজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে তাদের সংবর্ধনা জানানো হয়। এক বছরে যতজন মানুষ প্রয়াত হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকের কথা মাথায় রেখেও জনপ্রতি ১১টি করে গাছ রোপণ করা হয়।
কী কী গাছ লাগান তাঁরা? গ্রামের মানুষদের গাছের গুরুত্ব সম্পর্কে, তাদের ব্যবহারিক উপযোগিতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন সরপঞ্চ জী। তাঁরই নির্দেশ অনুসারে শিশু, বট, পিপুল, নিম, আম, আমলকি আর বাঁশের মতো অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ গাছকে বেছে নেওয়া হয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি রূপায়ণে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী উদ্ভিদ আ্যালোভেরা গ্রামবাসীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
এইসব গাছপালার ভেষজ ও অর্থমূল্য বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন গ্রামের লোকজন। এখন গ্রামেই স্থাপন করা হয়েছে একটি ভেষজ উপাদান প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট। সেখানেই তৈরি করা হচ্ছে আ্যালোভেরা জেল, আমলকি সালসা যাদের বাজারে চাহিদা রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে প্রায় ৪৫০০০০ গাছ লাগানো হয়েছে পিপলান্ত্রিতে। শুধু অ্যালোভেরার গাছ বসানো হয়েছে ২.৫ মিলিয়ন বা ২৫ লক্ষ। একসময় মার্বেল পাথর উত্তোলনের জন্য বিখ্যাত পিপলান্ত্রি আজ দেশের অন্যতম অ্যালোভেরা জেল উৎপাদনকারী অঞ্চলে পরিণত হয়েছে।আর এই সবই ঘটেছে এক দূরদর্শী সরপঞ্চ ও তার স্বপ্নময় প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য।
পদ্মশ্রী পুরস্কার জয়ী শ্যামসুন্দর তাঁর পুরস্কারের অর্থের সবটাই দিয়ে দিয়েছেন গ্রামের কাজে ব্যয় করার জন্য। পিপলান্ত্রির সাফল্যের কথা শুনে এগিয়ে এসেছে সরকারি এজেন্সীগুলোও। বিদেশ থেকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। এর ফলে আর্থিক ভাবে লাভবান হয়েছে পঞ্চায়েত ও গ্রামের খেটে খাওয়া পরিবারের সদস্যরা। গ্রামেই তৈরি হয়েছে স্কুল , স্বাস্থ্যপরিষেবা কেন্দ্র। বর্ষার জল ধরে রাখতে তৈরি করা হয়েছে ওয়াটার হারভেস্টিঙ্ প্লান্ট, বসেছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট – যার দৌলতে নলবাহিত জলের সুবিধা উপভোগ করছে সকল পিপলান্ত্রিবাসী। ঢাল বরাবর বাঁধ তৈরি করে ধরে রাখা বর্ষার জল দিয়ে বছরভর চলছে দানা শস্য ও শাকসবজি ফলমূল চাষ।
পিপলান্ত্রির সাফল্যের কথা ছড়িয়ে গেছে রাজস্থানের সীমানা ছাড়িয়ে বহু দূরের মানুষজনের কাছে। লেখা হয়েছে বই । তৈরি করা হয়েছে চলচ্চিত্র। আজ পিপলান্ত্রির একশো শতাংশ মহিলা সাক্ষর , গ্রামের লিঙ্গ অনুপাত ৯৯০:১০০০ যেখানে রাজ্যের লিঙ্গ অনুপাত ৯২৯:১০০০ ( ২০১১ আদম সুমারি ) অনুযায়ী। গ্রামের মেয়েরা আজ নিজেদের স্কুটিতে চেপে কলেজ যাচ্ছে। এই সবই গভীর তৃপ্তি দেয় শ্যামসুন্দর জী কে। তবে তিনি জানান এখনও অনেক অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে তাঁকে এক ক্লান্তিহীন শ্রমণের মতো।অনেক অনেক খরচ করে রাজস্থান বেড়াতে যাই আমরা। পিপলান্ত্রির কথা ওখানকার ট্যুর অপারেটররা জানেন কিনা জানিনা। তবে ভবিষ্যতে ওখানে গেলে সরপঞ্চ শ্যামসুন্দরের সাজানো গোছানো বাগানে একবার ঘুরে আসুন। ভালো লাগবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারি। আমি যাব, আপনারও আসুন।
ভালো লাগলো ৷
এও এক বিপ্লব।নীরব ক্লান্তিহীন লড়াইয়ের ফসল এমনই হয়। এই গ্রামের কথা ছড়িয়ে দেবার অনুরোধ রইলো।
Osadharon ❤️🔥