সমগ্র বিশ্ব এখন কাঁপছে করোনা ভাইরাসের ত্রাসে। মৃত্যুর সংখ্যা লক্ষের বেশী। বহু রোগীকে ভর্তি হতে হচ্ছে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। লাগছে অক্সিজেন। সংখ্যায় কম হলেও কারো কারো লাগছে ভেন্টিলেটর। এমতাবস্থায় চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা পাগলপ্রায় কিছু একটা করার জন্য, যাতে এই মৃত্যু মিছিল কিছুটা হলেও কমানো যায়। নানা রকম ওষুধ (হাইড্রক্সিক্লোরো কুইন/ রেমডিসিভির/ ওসেলটামেভির/ এজিথ্রোমাইসিন/ লপিনার/ অল্প ডোজের কর্টিকোস্টেরয়েড/) নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা হলেও কোনোটাই নিশ্চিত ভাবে করোনা সারাতে পারে এমন প্রমাণ নেই।
এই অন্ধকারে একটু আশার আলো দেখিয়েছেন অ্যান ক্যাথেরিন কানিংহাম ও তাঁর সহযোগীরা। তাঁরা বেছে নিয়েছেন পুরানো এক পদ্ধতিকে নতুন আঙ্গিকে। সেরে যাওয়া কোভিড ১৯ রোগীর প্লাজমা বা রক্তরসকে ব্যবহার করেছেন নতুন রোগীর শরীরে।
শুধু বিদেশেই নয় আমাদের দেশেও কেরালার শ্রী চিত্র তিরুনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল সাইন্সেস এন্ড টেকনোলজি (SCTIMST)-তেও ব্যবহার হচ্ছে এই পদ্ধতি।
আই সি এম আর-এর এথিকস কমিটি এবং ড্রাগ কন্ট্রোল ডিরেকটরেট অনুমোদন দিয়েছে এই পরীক্ষা চালানোর জন্য।
পরীক্ষামূলকভাবে এই পদ্ধতিতে দুটি ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা এইচ আই ভি বা হেপাটাইটিস বি নেই জেনে নিয়ে ১৪ দিনের আগেই রোগীর শরীরে দেওয়া হয়। কিছু মরণাপন্ন রোগিকে দিয়ে তাঁরা দেখেছেন ভাইরাল লোড ও মৃত্যুহার অনেকটাই কমেছে। সেরকম কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও লক্ষ্য করা যায় নি।
চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ কোম্পানী খুব গুরুতর ১০ জন রোগীকে এই পদ্ধতিতে সুস্থ করে তুলেছে। এতেই দেখা দিয়েছে নুতন আশার আলো।
কি ভাবে কাজ করে? কোভিড ১৯ সেরে যাওয়া রোগীর শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয় সেই এন্টিবডি SARS COV2 ভাইরাল পার্টিকেলকে নিউট্রালাইজ করে দেয়। ফলে তারা আর নতুন কোষকে আক্রমণ করতে পারে না। এছাড়া কমপ্লিমেন্ট এক্টিভেশন ,ফ্যাগোসাইটোসিসের মাধ্যমেও ভাইরাসটিকে নষ্ট করে দেয়।
এই পদ্ধতিতে সামান্য কিছুটা হলেও রক্ত জমাট বাঁধার অসুবিধার ঝুঁকি থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যতক্ষণ না পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট ওষুধ বা ভ্যাকসিন বের হয় ততক্ষন প্লাজমা থেরাপি একটি সময়োপযোগী চিকিৎসা পদ্ধতি। আরো অনেক রোগীকে সারাতে পারলে তবেই আমরা বলতে পারব কতটা নিরাপদ ও কার্যকরী এই পদ্ধতি। আমাদের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে দ্রুত কারোনামুক্ত করার জন্যএই মানবসভ্যতাকে ।