পয়সা| খুব পয়সা আজকাল বাঙালির হাতে| শিবের প্রেমলিঙ্গে কিলো কিলো ছানা মাখানো থেকে শুরু করে বসন্তপঞ্চমীর গ্রন্থমেলায় বুদ্ধিদীপ্ত নারীবাজি — বাঙালি কতভাবেই না খরচ করছে হাতে আসা উপরি|
পয়সা খরচের উপযোগিতা বা নান্দনিক প্রেক্ষিত নিয়ে আজকাল আর ভাবি না| অতিরিক্ত যে কোনো কিছুই জীবনকে অশোভন করে — এ অমোঘ সত্যকে নিরুপায়ভাবে মেনে নিচ্ছি ক্রমশ| কিন্তু কিছুদিন যাবত ফেসবুক ও হোয়াটস আপে এমন সব সুসজ্জিত কেকের ছবি ও বিজ্ঞাপন দেখছি, যে না বলে পারছি না|
কারণ কেক মূলত শিশুর রেগুলার টিফিন এবং তার জন্মদিনের বিশেষ আনন্দের ভোজ্য হিসেবে গণ্য হয়| আগে কম হতো, এখন বেশি হয়| নরম লুচি আলু ছেঁচকির পরিবর্তে কেকের ক্রিমে ছত্রখান হয়ে থাকে শিশুর টিফিন বাক্স| তাই এর সাথে মূলত শিশুর স্বাস্থ্য ও মনের প্রসন্নতা জড়িয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন|
প্রথম প্রথম নানা রঙের নানা শেপের কেক আমার ভালোই লাগত| আমার স্কুলের বাচ্চাদের জন্য কিনতামও ফ্রুট কেক| কখনো চকলেট কেক| কিন্তু ইদানিং কালে দুটো কেকের ছবি আমায় হতভম্ব করে দিয়েছে| একটি বিশাল আকারের রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ও তার তলায় গীতাঞ্জলি লেখা একটি বইয়ের শেপের কেক এবং একটি পাঁচ-দশ রঙের কুঁচি ফ্রিল দেয়া মিষ্টি পুতুল কেক| এই কেকগুলোকে কাটবে শিশুরা ? কেটে আনন্দ পাবে?
আচ্ছা বেশ —জন্মদিনের শিশু আপনাদের কথামত ছুরি চালালো তারই মত মিষ্টি এক পুতুলের সারা শরীরে! কিন্তু মনের আনন্দটুকু সে পাবে তো পুতুল ভক্ষণে? চব্বিশ বছর একটি প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের স্কুলে কাজ করে বুঝেছি — সুন্দর কিছু চোখের সামনে নষ্ট হলে কখনো কোনো শিশু খুশি হয় না| বরং পরিবারের মধ্যে বিশেষ করে বাবা-মায়ের sensivity র অভাব শিশুকে ক্রোধী ও কর্কশ করে তোলে| জানেন, ক্লাসে সবচেয়ে মিষ্টি মেয়েটাকে একবার চড় মারতে হাত তুলেছিলাম| পাশের intellectually challenged বাচ্চাটা হাত চেপে ধরে রূঢ় ধমক মেরেছিল আমাকে| বহুদিন সে কথা বলেনি তার প্রিয় দিদিমনির সাথে|
তাহলে বুঝুন –একটি স্বাভাবিক শিশুর মনে মিষ্টি পুতুল কাটার কী প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে! ?পুতুলের ফ্রকে গাদা গাদা কৃত্রিম রঙ ব্যবহারের কথা ছেড়েই দিলাম| যে হারে KFC চলে তাতে বাচ্চার স্বাস্থ্য নিয়ে বাপ মা কেউ ভাবেন বলে মনে হয় না| কাজেই এ সব কেক খেলে শিশুর স্বাস্থ্যের কতটা হানি হতে পারে এ প্রসঙ্গ বাদ দিচ্ছি না হয়|
আচ্ছা এবার ধরুন আপনার বাচ্চা আপনার প্ল্যান করা বিপুল বাজেটের জন্মদিনে বেশ কুচি কুচি করে কেটে ফেলল রবীন্দ্রনাথকে| আর তারপর সারা পৃথিবীর সেরা সম্পদ গীতাঞ্জলিকে! টপ করে গিলেও ফেলল বিশ্বকবিকে! তারপর বড় হলে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন রবীন্দ্রনাথকে? সবচেয়ে বড় কথা, বাবা মা নিজেদের কী ব্যাখ্যা দেবেন তাঁদের যুবক পুত্রের কাছে? অর্থবান ছাড়া আর কোন পরিচয়ই বা খাড়া হয়েছে আপনাদের শিশুর বৃদ্ধিকালে! সাবাস! সাবাস ইস্টুপিড বাঙালি! সাবাস তোমার কেকশিল্পের বিনির্মাণ! Sorry sorry বাঁদরামি! মানুষকে মানুষের খাদ্য বা খাদক বানাবার বাঁদরামি!
●●●●●●●●
সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখাটা আবার দিলাম| কি করেছি বারবার দেব| দেখলাম কালীপুজোয় কোনো বাড়িতে কাটা হচ্ছে ছোট্ট একটুকরো লাল টসটসে জিভ বার করা মিষ্টি কালী কেক —- হতচ্ছাড়া বাপ মা| অভাগা আগামী নাগরিক]
আর এবার? বাজারে করোনা সন্দেশ। বাচ্চা বুড়ো সবাই চিবোচ্ছে মারনাস্ত্র—– যা শেষ করে দিয়েছে পৃথিবীর লক্ষ্য বান্ধব কে। চিবো আরাম করে। জিভ দিয়ে টেনে নিয়ে জীবাণুর মিষ্টি রস।
” ভালো লাগবে —খা “|
করোনা সন্দেশের ছবি সৌজন্যে গার্গী সান্যাল।
খুব সত্যি কথা। মানুষের রূচি বোধ কোন পর্যায়ে নেমে গেছে।
আমার ঘেন্না করছে , আর কিছু বলার নেই
কিছু বলার নেই। কয়েকদিন আগে দেখলাম শিশুর আদলে কেক। দেখেই মনে হচ্ছে ঘুমন্ত শিশু, উলঙ্গ। তাকে কাটবে কে? কাটা সম্ভব? শিউরে উঠে সরিয়ে দিয়েছি যাতে আর চোখের সামনে না আসে। মানুষ নিজেই নারকীয় উল্লাসে মাতে আনন্দের জন্য। করোনা ভাইরাসও তার কাছে আনন্দের উপকরণ হবে এতে আমি অবাক হচ্ছি না।
খুব ভালো লেখা। মর্মে গিয়ে ঘা মেরেছে।
মানুষের মন থেকে হুঁশ আস্তে আস্তে উবে যাচ্ছে।ছানা,দুধ,দই মাখানো খাওয়ানো চলছে । কয়েকদিন আগে দেখলাম ফেসবুকে শিলের উপর নোড়া দাঁড় করিয়ে ছবি পোস্ট তাই নিয়ে হইচই। শিশুর মনে ভালোবাসার বদলে নিষ্ঠুরতার বীজ বপন করে দিচ্ছে। এটা ঠিক এ বিষয়ে বাঙালিরা অন্যদের থেকে কয়েক পা এগিয়ে। অবক্ষয়ের শুরুর ঘন্টা বেজে গেছে।হায় বাঙালি হায় !!!
অসম্ভব ভালো লেখা। এই বিষয়টি আমি অনেক দিন ধরেই ভেবেছি, না, ঠিক শিশুদের কথা মনে করে নয়, নিজের মানসিকতা দিয়ে। এধরনের কেক, মানুষ কাটতে পারে কিভাবে ! খাওয়া তো আরও দূরের কথা।
করোনা ভাইরাসের এই চেহারাটি আজ সংবাদ মাধ্যমের কল্যানে সর্বজনবিদিত। ছবিতে/টিভিতে দেখলেই গায়ের মধ্যে একটা ভয় মিশ্রিত অনুভূতি শিরশির করে ওঠে। তাই দিয়ে কোথাও কোথাও মিস্টি তৈরি হয়েছিল, শুনেছিলাম, এখন দেখছি কেক ও। মানুষের রুচি এখন নিম্নগামী।
Amar Chattopadhyayআগে পড়েছি। কোভিডের অংশ জুড়ে দিয়ে পাঁচ সিক্কার চড় হয়েছে। গার্গীর ছবিও মাত্রা যোগ করেছে।
কোন ধোঁয়াশা নেই। পরিচ্ছন্ন লেখা। যদি সর্বক্ষেত্রে ‘ সমকালীন ‘ এর ঝোঁক বাদ দিয়ে বোধ কে আশ্রয় করি তাহলে তোমার লেখা সার্থক। লিখে যাও, সব না হলেও কিছু হবে।