ভাবো… ভাবো.. ভাবা প্রাকটিস করো।
এই কথাটি কে বলেছিল সবাই জানে।
গভীর অর্থবহ এই কথাটির বহুল ব্যবহার দেখেছি আমরা নানা সময়ে, নানা উপলক্ষ্যে।
হয়তো আরো বহু উপলক্ষ্যে আমরা দেখব এই কথাটির ব্যবহার।
একটি বিষয় লক্ষণীয় – আমরা সুযোগ পেলেই কাউকে অযাচিত উপদেশ দেওয়ার জন্য কিংবা ‘তুই তো গবেট/ মাথামোটা’ টাইপের ভাবনা থেকে, ‘তুই যদি ভাবিস হয়তো বুঝতে পারবি’, ‘তুই যেহেতু এই এই অবস্থায় আছিস, এটা তোর বোঝার কথা’
এই রকম বিশ্বাস ছাড়া এই কথাটির ব্যবহার করি না বললেই চলে।
মানে হলো – আমরা কখনো ভাবি না বা ভাবতে চাই না যাকে আমি কিছু করতে বা শুনতে বলছি, সে আমার চেয়ে বেশি শুনতে/ বুঝতে পারে/সমান বুঝতে পারে/বেশি ভাবতে পারে/সমান ভাবতে পারে।
আমরা মানতে চাই না – তার বোঝা/ভাবনা আমার সমান/বেশি কার্যকরী হতে পারে।
যদিও এই কথাটির ব্যবহার হওয়া উচিত ছিল নিরপেক্ষ ভাবে।
ভাই, আমি এটা ভেবেছি। আমি এটা ভাবি।
তুই ভাববি কিনা ভেবে দ্যাখ।
এই অর্থে কথাটি ব্যবহৃত হলে, ঠিক কতটা সফল সংলাপ হয়ে উঠত এটি?
হতে পারত কি আদৌ?
মনে হয় না।
অতএব, আমরা এটিকে উপরে বর্ণিত বিশ্বাস থেকেই ব্যবহার করেছি, করি, করব।
আর এখানেই একটি বড় ফাঁদ পাতা আছে। সেই ফাঁদ টি হলো- ভাবনা দ্বারা মানুষ কে প্রভাবিত করার চেষ্টা। যেটা মানুষের সহজাত।
প্রত্যেকটি মানুষ আলাদা, তার ভাবনা চিন্তা র পদ্ধতি আলাদা, ভাবনা র ফলাফল ও আলাদা – এটি যদি আমরা মেনে নিতে যাই, কাজের বেলায় দেখতে চাই, তাহলে বেশ সমস্যা হয়।
কারণ,
অন্য কারো স্বাধীন চিন্তা ভাবনা কে কোন না কোন ভাবে প্রভাবিত করার ওপর আমাদের সফলতা নির্ভর করে।
যদি ভেবে দেখি- ধর্ম, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি – প্রায় সবকিছুতেই আমরা চাই অন্য কারো ভাবনাকে প্রভাবিত করতে।
যেনতেন প্রকারে আমাদের লক্ষ্য থাকে কাউকে কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে বাধ্য করব।
তারপর তাকে নিজের দলে নেব।
একান্তই যদি না পারি, তাকে বিরোধী বলে দেগে দেব।
এর ফলাফল কী?
আমরা মুখে যতই বলি- আমি বিরোধী হলেও তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষা করব,
তোমার ভাবনার মূল্য দেব বা তোমার ভাবনা আমি ও ভেবে দেখব, কাজের বেলায় এটি হয়ে ওঠে না।
কেউ সরাসরি, কেউ একটু হালকা পাতলা প্রলেপ দিয়ে আমরা আসলে যেটা চাই- আমরা ভাবনা দ্বারা তুমি প্রভাবিত হও!
অতএব, ভাবো… ভাবো… ভাবা প্রাকটিস করো…
ইতিগজ আমার মত করে! তোমার মত করে নয়!
আমাদের সমাজে যত যত ‘মহান’ মানুষ দেখি, যেসব নিষ্পাপ বাবুদের আত্মোপলব্ধি/পরোপলব্ধি মাঝে মাঝেই ফেসবুকের মাধ্যমে চলে আসে টাইমলাইনে, কিছু না বললেও পড়ে ফেলি নিজের হরিদাস পাল মার্কা অযোগ্যতা ঢাকতে বা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আপডেটেড থাকতে,
কখনো একটু আধটু রেখে ঢেকে, কখনো নগ্ন নির্যাস ঢেলে তারা যে বিষয়টি বলতে চান – তার ভেতরে কেন জানি না এই সহজ বিষয় টি আমি বারবার খুঁজে পাই!
তুমি ভাবো… তবে অবশ্যই আমার মত করে!
খালি একটা ধন্ধ কিছুতেই কাটে না-
এরা কেন সহজে বোঝেন না যে, মানুষ কে স্বাধীন ভাবে দেখতে চাইলে প্রথমে তার নিজের ভাবনা কে ভাবতে বা প্রকাশ করতে দিতে হবে!!
এটা না ভাবলে এটা হয়ে পারে, ওটা না ভাবলে ওটা হতে পারে- এই ধরনের ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক যারা শোনাতে আসেন, এবং ভাবতে বলেন, তাদের হাত ধরে সমাজে যে হরেক রকম স্বৈরাচার যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে,
এটা ভেবে দেখলে কেমন হয়?
কী বলেন বাবুরা?









