চলছে রমজান মাস। অনেক গর্ভবতী মহিলাই এখন রোজা করছেন। একথা ঠিক, শরীর ঠিক থাকলে এই অবস্থায় রোজা করা যেতেই পারে। আর করতে না পারলেও অসুবিধা নেই। কারণ ইসলাম ধর্মে বলা আছে কেউ প্রেগন্যান্সির জন্য রোজা রাখতে না পারলে পরে বাচ্চা জন্মানোর পরেও শরীর ঠিক হলে তখন তা করতে পারেন।
কিন্তু একান্তই যাঁরা রোজা করছেন তাঁদের শরীরের দিকে সব সময় নজর দিতে হবে। কারণ প্রেগন্যান্সির বিভিন্ন স্টেজে বিভিন্ন রকম সমস্যা হতে পারে। যাঁদের ফার্স্ট ট্রাইমস্টার বা প্রথম তিন মাস চলছে তাঁদের বমির সমস্যা খুব সাধারণ। শারীরিক কারণ ও সারাদিন না খেয়ে থাকার জন্যও বমির প্রবণতা বাড়তে পারে। তখন শরীরে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এরকম হলে রোজা না করাই ভাল। আর ডিহাইড্রেশনের উপসর্গ হিসাবে শরীর ঝিমিয়ে পড়া, চোখে অন্ধকার দেখা দেওয়া, অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া, প্রস্রাবের রঙ গাঢ় ও দুর্গন্ধযুক্ত হওয়া এমনকী অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে। এমন হলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভাঙতে হবে আর দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়াও রোজকার খাবার যাতে সুষম হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সেকেন্ড ট্রাইমস্টার অর্থাৎ ৪-৬ মাসের সময় সন্তান বড় হতে থাকে বলে পেট বড় হয়। অনেক ক্ষণ না খেয়ে থাকার জন্য এ সময় অনেকের রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘোরা এমনকী অজ্ঞান হওয়ারও সমস্যা দেখা দিতে পারে। এরকম হলে বেশি করে জল খেতে হবে। মানসিক চাপ এড়িয়ে চলতে হবে। মায়ের পুষ্টির দিকে সবচেয়ে বেশি খেয়াল রাখা দরকার। যদি আলট্রাসাউন্ডে বাচ্চার গ্রোথ আশানুরূপ দেখা না যায় অথবা মায়ের ওজন না বাড়ে কিংবা খাবারে রুচি না থাকে তাহলে একটুও সময় নষ্ট না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এছাড়া অনেক মায়ের এ সময়ে কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় যেমন অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন বা অ্যানিমিয়া। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে যদি ইনসুলিন নিয়েও সুগার নিয়ন্ত্রণে না আসে, বা ওষুধ খেয়েও রক্তচাপ কমানো না যায় তাহলে রোজা রাখা একেবারেই উচিত নয়। রক্তশূন্যতার জন্য যাঁদের আয়রন সাপ্লিমেন্ট বেশি খেতে হয় তাঁদেরও রোজা রাখার আগে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।
রোজা রাখার পর যদি হঠাত বমি, চোখ অন্ধকার হয়ে যায় কিংবা ব্লাড সুগার কমে যায় তাহলে রোজা ভাঙতে পারে।
শুধু মায়ের নয়, বাচ্চার কোনও সমস্যা হলেও রোজা ভাঙতে হবে। গর্ভের বাচ্চা ১২ ঘন্টায় ১০-১২ বার নড়াচড়া করে। যদি এর থেকে কম নড়ে বা নড়াচড়া দুর্বল হয় বা অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করেন তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
কী করবেন আর কী করবেন না
- বেশি করে জল ও তরল খাবার খাবেন।
- নোনতা জাতীয় খাবারও এড়িয়ে চলুন।
- অন্যান্য খাবার ও পানীয়র থেকে ফলের ওপর জোর বেশি দেবেন।
- খেজুর খাওয়া খুব ভাল। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ে। খাবারে রাখতে হবে ছানাও। এতে প্রোটিনের চাহিদা মিটবে।
- খুব ক্লান্তি, বুক ধড়ফড় করা, বমিভাব, পেটে কোনও ক্র্যাম্প অনুভব করলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
- বেশি মিষ্টি খাবার বা চা, কফি খাওয়া চলবে না।
- ওটস, বিনস ও নুন ছাড়া বাদাম খাওয়া দরকার।
- খুব বেশি পরিশ্রম করবেন না, মানসিক চাপও যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।