খোকাখুকি আর মাসিপিসি
★★★★★★★★★★★★
বামদিক নয় কেবল| ডাইনে– বাঁয়ে– ঈশান কোণে– আমার থেকে দূর দুরান্তে যে সব প্রতিবন্ধী বাচ্চারা আছে তাদের সুস্থতার জন্য জ্ঞানবুদ্ধি মত কয়েকটি সতর্কতামূলক কথা বলব| ইচ্ছে করেই “প্রতিবন্ধী” শব্দটা ব্যবহার করলাম| সারা পৃথিবীব্যাপী মহামারীর সময়– সর্বস্তরের বাবা মাকে বোঝাতে গেলে এই particular শব্দটির ব্যবহার দরকার| কারণ সম্প্রতি প্রচলিত “বিশেষভাবে সক্ষম” এই শব্দের ব্যবহারে এখন কেবল লেখিকা ময়ূরীর আত্মশ্লাঘা চরিতার্থ হবে মাত্র| প্রত্যন্ত গ্রামের একটি প্রতিবন্ধী শিশুর কৃষক বাবা কিংবা গুড়বিক্রেতা মা বিভ্রান্ত হবেন খুব| তাই বললাম প্রতিবন্ধী শিশু|
★★★
বলি দৃষ্টিহীন ও বধির শিশুর কথা| শিক্ষিকা হিসেবে বলতে পারি — এই দুই ধরনের প্রতিবন্ধীর sensory deprivation থাকলেও এরা কিন্তু নিজের দ্রব্য , স্বাস্থ্য , চলাফেরা , সুরক্ষা নিয়ে ছোট থেকেই অতিমাত্রায় এবং একটু বিশেষ ভাবেই সতর্ক থাকে।- যদি বাচ্চাটা ছোট থেকে special educator-এর proper guidance-এ থাকে।| তাই এদের নিয়ে এই মুহূর্তে বাবা মার আলাদাভাবে খুব innovative কিছু করার নেই| বরং দৈনন্দিন রুটিন যা সে অলরেডি অভ্যাস করে ফেলেছে– তাতে খুব পরিবর্তন আনবেন না| আনতে গেলে দেখা বা শোনা থেকে বঞ্চিত বাচ্চা ঘাবড়ে গিয়ে পরিচ্ছন্নতার জরুরি পন্থা গুলিয়ে ফেলতে পারে| তাই চালু রাখুন তাদের পড়ার অভ্যেস| খেলা একা একা ভালো লাগে না কারোরই| তাই বধিরদের খেলার বদলে নাচ এবং দৃষ্টিহীনদের গান করান| গান শোনা এবং শুনে গাওয়া| দেখবেন ওরা কেমন আনন্দ পাচ্ছে| আর নিয়মিত খেলনাপাতি স্যানিটাইজেশনের উদ্বেগও কাটছে আপনার| যাদের বড় চুল তাদেরকে টাইট করে উঁচু পনিটেল করে দিন| আর যারা আমার মত বাঁদর-ব্যাটাদের একদম ন্যাড়া করে দিন তো! – বাড়ির স্যানিটাইজড কাঁচি দিয়ে| বাচ্চাদের মনমত পুষ্টিকর খাবার দিন| গ্রামের মায়েরা আলুকাবলিতে দিন অনেকটা পাতিলেবু| একটু ঝাল ঝাল করে| দেখেছি মুখের স্বাদ বদল বধিরদের বাড়তি এক আহলাদ দেয়| আর ভালোবাসে এরা –মাংস ডিম কেক (তথ্য– আমার ক্লাসে পর্যবেক্ষণ)| এত করেও কিন্তু কিছদিন পরে ওরা অস্থির হবে আরো| বিশেষ করে বধির শিশু| তখন লাগিয়ে দিন directed activity তে | সেটা কী রকম ? ধরুন — চিনি , কাটা লেবু , জল তিনটি জিনিষ ওর পরিষ্কার হাতে দিয়ে আকারে ইঙ্গিতে দেখান কীভাবে শরবত করতে হবে| কতটা চিনির সাথে জল মেশাতে হবে, লেবু হাতের কতটা চিপকে রস বার করতে হবে| দেখবেন– কাজটি করার আনন্দে লাফাচ্ছে ওরা| প্লাস কাজটাও শিখছে| গবেষণা বলছে– এক একটি এক্টিভিটি বা সোজা বাংলায় কাজ কমপ্লিট করতে পারলে পরের কাজ ওরা নিজেরাই খোঁজে ও এবার মাকে নির্দেশ করতে থাকে কাজটি শেখাবার জন্য।।এটি দ্বিপাক্ষিক আদানপ্রদান| বোর হওয়ার চান্স খুব কম|
★★★
এবার চিকিৎসকদের নির্দেশগুলো একটু ওদের মত করে বুঝিয়ে দিন| দৃষ্টিহীন তো কথা শুনেই বুঝবে– মনে রাখবে| তবে ছোট বাচ্চা তো– ওর হাতের কাছে একটি সাবান, একটি পরিষ্কার towel রেখে দিন| হাত ধরে নিয়ে যাবার মোটেই চেষ্টা করবেন না কল কিংবা বাথরুমে| Verbal instruction কিংবা মৌখিক নির্দেশ দিন| নিশ্চিন্ত হোন– জন্মগত দৃষ্টিহীনকে নিজের বাড়ির স্থান কোণ এত চেনাতে হয় না| আর পরে যারা দৃষ্টিহীন হয়েছে তাদের মুখে মুখে সাবধান করুন| ধরুন — আপনার বাচ্চাটার হাতের কাছে তার খবরের কাগজ বা অন্য কোনো এমন জিনিস রয়েছে যেটা থেকে সংক্রমণ হতে পারে ঝট করে সরিয়ে নিন ওকে কিছু না বলেই| কারণ বারবার যদি বলেন — তুমি ভুল জিনিষ ধরে ফেলছ তাহলে কিন্তু over protective মনস্তত্ত্বের জন্য ও বেশি ভুল করে ফেলবে| “হঠাৎ দৃষ্টিহীন” (জন্মের বেশ কিছুদিন পর যারা চোখ হারিয়েছে )-দের জন্য বাছুন একেবারে কম ফার্নিচারের একটি পরিষ্কার ঘর| অন্তত চারবার সাবানজলে কেবল মা পরিষ্কার করুন তার ঘর | আর গান শোনার জন্য উঁচু তাকে একটি music system| তাতে যেন অডিও গান ও গল্প দুইই শোনার ব্যবস্থা থাকে| সেটাও পরিষ্কার করবেন মা| মা না থাকলে only one caregiver | চোখজনিত ওষুধগুলো ও কোনো একটি ভিটামিন ট্যাবলেট সংগ্ৰহ করে নিন বাবাকে দিয়ে| চিকিৎসকের মতে এইসময় বা এই রোগে ভিটামিন C ও D দরকার | মা বা caregiver বেরোবেন না একদম| প্রতিদিন পরিষ্কার জামা পরান| দরকার হলে দিনে দুবার| কারণ জামাটা গেলাসের জল কিংবা দুধ কিংবা দুপুরের ভাত পড়ে কতটা নোংরা হচ্ছে ও কিন্তু বুঝতে পারবে না| ক্রিম ওকে দিয়েই মাখান|
★★★
বধির শিশুর মায়েদের খাটনি একটু কম হবে এই নির্দেশ বোঝানোর ব্যাপারে– জেসচার পশ্চার, picture বা ছবি এঁকে একবার শুধু বুঝিয়ে দিন ও কী কী করবে আর কী কী করবে না| দেখবেন মায়ের হাতে আঁকা ছবি দেখে কত আগ্রহ নিয়ে শুনবে আপনার কথা| গ্রামের মায়েদের বলি– অনেক কাজ করতে হয় আপনাদের খেতখামারে| তাই বাচ্চাকে আকারে ইঙ্গিতে বোঝান কী করা উচিত নয়| প্রসেসটা হল মোটামুটি এইরকম –রাস্তার ওপরে একটি নোংরা কাগজ ফেলে নিজে স্পর্শ করতে যান| আপনার হাত যখন পৌঁছে গেছে কাগজের প্রায় কাছে তখন ঝপ করে হাত সরিয়ে নিন| আঙ্গুল না-এর মত করে নেড়ে নেড়ে বোঝান– এটা নয়– এটা করো না| মুখেও বলবেন| তবে সেটা আলাদাভাবে নয়| ওই ভঙ্গিগুলো যখন করতে লাগবেন ঠিক তখনই একসাথে করতে হবে আপনার verbal বা মুখে নিষেধ করা| বধির বাচ্চা আপনার ঠোঁটের ওঠাপড়া দেখে ঠিক বুঝবে আপনার কথা| এখন তো অনেকের hearing aid আছে| তারা খানিকটা শুনতেও পাবে| ব্যাস হয়ে গেল –Oral ,Aural and Total Communication| মানে বধিরকে সবদিক দিয়ে বোঝাবার প্রক্রিয়া| ও হ্যাঁ, দেখুন ভুলেই গেছি বলতে — কাগজ ছোঁয়ার অভিনয়ের পর একদম ছোটদের করে দেখাবেন — দূষিত স্পর্শে কী হয়! নিজের দুটো হাত একটা আরেকটার ওপর রেখে কাঁপুনি, কাশি, হাঁচি, ইয়া লম্বু জিভ বার করে মা কালী হয়ে মরে যাওয়া– প্রত্যেকটা পর্যায় অভিনয় করবেন | আবার এই কাজগুলো না করলে ও যে বেঁচে উঠবে বা হেব্বি খুশি থাকবে সেটাও হাস্যমুখে কখনো বা নাচের মুদ্রায় বোঝান | ক্রমাগত– যতক্ষণ না ও আয়ত্ত্ব করে | অবশ্যই বধিরদের ক্ষেত্রে মনে করে রোজ টিভির সামনে বসাবে| একদম ছোটদেরও বসাবেন| কে ? দেখুন– ও হয়ত শুনতে পাবে না| বুঝতেও পারবে না দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি| কিন্তু সংবাদদাতাদের কন্ঠনালীর ওঠাপড়া, চোখ মাঝে মাঝে বিস্ফারিত হওয়া এসব visual input একজন শ্রবণ প্রতিবন্ধীর মধ্যে বাড়তি উত্তেজনা আনবে| ওর মনে হবে– কিছু একটা ভয়ানক হচ্ছে জাস্ট আমার চারপাশটায় | আবেগ তৈরি হবে | আর সেটাই হবে ওর বাঁচার জোর | ওর প্রাণ |
★★★
নিজের সন্তানদের অক্ষম বললাম সবার সামনে| ক্ষমা করে দিস রে| উপায় নেই রে আমার| খুব মন খারাপ লাগলে দ্যাখ ভোরের পাখি, সূর্য | গুণে যা রাতের তারা | আবার জানলা ধরলি ? ছুঁলি তো লোহার শিক ? পেটাব এবার | ফাঁক দিয়ে দ্যাখ । তাতেও উল্কা পাবি।
EXCELLENT KHUB SACHETON KORE TOLAR MOTO LEKHA
ভালো লেখা। দরকারি লেখা। অনেকের কাজে লাগবে। এরকম বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করেছেন বলে লেখা এত মর্মস্পর্শী। এরকম লেখা আরও দরকার
লেখা ভীষণ রকম প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ভরা। শুধু তথ্য বলি কি করে। ময়ূরী মিত্র নিজের অভিজ্ঞতা, ভাবনা, উপলদ্ধি দিয়ে এই লেখাটি লিখেছেন যা বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশুকে বোঝা ও বোঝানো শিশুর মা-বাবা কে সহায়তা করবে। এই শিশু দের সময়ে দিন। সুরক্ষিত রাখুন।
সহজ সুন্দর করে বোঝানো। সকলের জানা দরকার। আমিও জানলাম। ধন্যবাদ লেখিকাকে।