বিশ্বজুড়ে মহামারী বা প্যানডেমিক আকার ধারণ করেছে নোভেল করোনা ভাইরাস-১৯ এর সংক্রমণ। স্বাভাবিকভাবেই এই নতুন ভাইরাস কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আতঙ্কিত প্রেগন্যান্ট মহিলারা। এ বিষয়ে লন্ডনের The Royal College of Obstetricians and Gynaecologists বা আরসিওজির গাইডলাইন কী বলেছে সে বিষয়ে জেনে নিন।
নোভেল করোনা ভাইরাস-১৯ গর্ভবতী মহিলাদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি। কারণ এটা একেবারেই নতুন ভাইরাস। আর প্রেগন্যান্ট মহিলাদের যেহেতু হালকা বা একটু বেশি মাত্রায় ঠান্ডা লাগা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ দেখা দেয় তাই এ সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে কোনও প্রেগন্যান্ট মহিলার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
তবে প্রেগন্যান্ট মহিলাদের অন্যান্য মহিলাদের তুলনায় যে কোনও সংক্রমণের আশংকা অনেক বেশি থাকে। আর যদি কারও হার্ট বা ফুসফুসের সমস্যা যেমন হাঁপানি থাকে তাহলে করোনা সংক্রমণ হলে জটিলতা আরও বেড়ে যায়।
মায়ের এই সংক্রমণ হলে গর্ভস্থ সন্তানের কি কোনও সমস্যা হতে পারে?
এই ভাইরাস একেবারেই নতুন বলে এর সম্পর্কে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। এখনও জানা যায়নি এর জন্য মিসক্যারেজ হতে পারে কিনা। জানা যায়নি, এই ভাইরাস মায়ের থেকে তার গর্ভের সন্তানের মধ্যে স্থানান্তরিত হতে পারে কিনা বা সেই কারণে শিশুর কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে কিনা। চিনে করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া মহিলাদের প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি হতে দেখা গেছে। তবে তা করোনা ভাইরাসের জন্য না কি অন্য কোনও কারণে সে সম্পর্কে কোনও তথ্য প্রমাণ হাতে নেই। কাজেই অযথা আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।
নোভেল করোনা ভাইরাস-১৯ সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার উপায় কী?
প্রধান কাজ হল হাত ধোয়া। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে ফিরে তো অবশ্যই হাত ধুতে হবে। এতে শুধু করোনা নয়, অনেক ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা যাবে।
যদি কারও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় তাহলে কী করণীয়?
যদি কোনও প্রেগন্যান্ট মহিলার করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় কিংবা তিনি যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকেন অথবা করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি যে জায়গায় খুব বেশি তেমন কোনও জায়গায় থাকেন তাহলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করা দরকার।
কী ধরনের পরীক্ষা করা হয়?
কারও এই ভাইরাস সংক্রমণ হয়েছে সন্দেহ হলে প্রথমেই নিজেকে আলাদা করে রাখতে হবে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে লালা, কফ বা রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
করোনা ভাইরাস পজিটিভ হলে কী করণীয়?
যদি করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অল্পস্বল্প বা যদি কোনও উপসর্গ না থাকে তাহলে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা চলতে পারে। তবে লক্ষণ বেশি দেখা দিলে হাসপাতালে থেকেই চিকিৎসা করা দরকার।
অসুখ সন্দেহ হলেই কেন আলাদাভাবে রাখা দরকার?
• অন্য করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে আলাদা থাকার জন্য
• দেশের মধ্যে বা বাইরে যেখানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি তাদের থেকে নিরাপদে থাকার জন্য
কীভাবে আলাদা থাকতে হবে?
• প্রেগন্যান্ট মহিলাদের আলাদা থাকতে বললে অন্তত ১৪ দিন বাড়ির মধ্যে থাকা দরকার। এজন্য আরও যা যা করা দরকার তাহল-
• স্কুল, কর্মক্ষেত্র বা পাবলিক প্লেস এড়িয়ে যাওয়া
• বাস, ট্রেন বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করা
• ঘরের ভিতর থাকার সময় বাইরের বা ঘরের অন্যান্য সদস্যদের সেই ঘরে ঢুকতে না দেওয়া।
• ঘরে যাতে আলোবাতাস চলাচল করে সেদিকে খেয়াল রাখা
• নিজের ব্যবহারের তোয়ালে, গামছা, বাসন যাতে অন্য কেউ ব্যবহার না করে সেদিকে খেয়াল রাখা
আলাদা থাকার সময় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ রাখা দরকার?
নিজের চিকিৎসককে জানানো দরকার তার অসুখের কথা। ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে জেনে নিতে হবে কীভাবে সেই মহিলার রুটিন চেক-আপ করা হবে। রোগীকে অন্য কোনও জায়গা যেখানে অত বেশি রোগী থাকবে না সেখানে চেক-আপ করা হতে পারে।
অসুখ থেকে সেরে ওঠার পর কী করণীয়?
সাবধানতা হিসাবে সেরে ওঠার ১৪ দিন পরে আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান করতে হবে। এর মাধ্যমে শিশুর শারীরিক অবস্থা জানা সম্ভব হবে। আর মা পুরোপুরি সেরে ওঠার পর তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে সেই সন্তানের সংক্রমণের কোনও আশঙ্কা থাকে না।
করোনায় আক্রান্ত অবস্থায় যদি প্রেগন্যান্ট মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে কী করণীয়?
অসুখ থেকে সেরে না ওঠা পর্যন্ত ডেলিভারি না করানোরই চেষ্টা করা হয়। খুব জরুরি হলে আলাদা কথা। তবে করোনার চিকিৎসা চলাকালীন নিজের ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলা দরকার।
নবজাতকের কি করোনার পরীক্ষা করার দরকার হয়?
মায়ের করোনা সংক্রমণ থাকলে সতর্কতা হিসেবে নবজাতকেরও এই সংক্রমণ আছে কিনা তা পরীক্ষা করার দরকার হতে পারে। গর্ভস্থ সন্তানের মায়ের থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায় কি না তা এখনও জানা যায়নি।
মায়ের করোনা ভাইরসের সংক্রমণ থাকলে বা সংক্রমণ আছে বলে সন্দেহ হলে কি সন্তানকে কাছে রাখা যায়?
শিশু সুস্থ থাকলে ও ডাক্তারবাবু পরামর্শ দিলে সন্তানকে মায়ের সঙ্গে রাখা যেতেই পারে। চিন, যেখানে সবচেয়ে বেশি এই রোগ ছড়িয়েছে সেখানেও ১৪ দিন পরে রোগীর কাছে তার সন্তানকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সন্তানকে কি স্তন্যপান করানো উচিত?
অবশ্যই করানো যায়। কারণ এখনও তেমন কোনও তথ্য নেই যে বুকের দুধের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রামিত হতে পারে। বরং বুকের দুধের অনেক উপকারী দিক আছে। বিশেষত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বলে এই দুধ শিশুকে খাওয়ানো জরুরি। এই রোগ মূলত ছড়ায় হাঁচি, কাশির মাধ্যমে। সে দিক থেকে সতর্ক থাকলে কোনও সমস্যা হবে না। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য যে যে বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার তা হল,
• বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর আগে ভালো করে হাত ধুয়ে নেওয়া
• মুখে মাস্ক পরে নেওয়া।