প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৪ঠা নভেম্বর, ২০২২
সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সরকারি তথ্যেই জানা যাচ্ছে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা বিগত ৬ বছরের সমস্ত পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে, রাজ্যের সংক্রামক রোগের উৎকর্ষ কেন্দ্র আই ডি হাসপাতালের স্বাস্থ্য প্রশাসক,
ডাঃ অনির্বাণ হাজরার গভীর বেদনাদায়ক, দুঃখজনক মৃত্যু আজকে আমাদের দেখতে হয়েছে।
বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়েই ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ে। এই সময়টা সবাইকে যেমন সতর্ক থাকতে হবে, একই ভাবে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারও যথাযত ব্যবস্থা নেবে এটাই দস্তুর। ঘরে আগুন লাগার পর জল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি জনস্বাস্থ্যের নিয়মের পরিপন্থী।
কোভিড কালের মতোই, চিকিৎসক সমাজ এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা, সরকারকে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে সতর্ক করলেও,নেতা মন্ত্রীরা এই গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যস্ত ছিলেন পুজোর উদ্বোধনে, বিসর্জনের কার্নিভালে। জেলায় এবং মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের মিটিং গুলোতে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে, শাসকপন্থী চিকিৎসকদের মেডিক্যাল কাউন্সিল নির্বাচনের প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে আমরা দেখেছি।
সময়ে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সব হাসপাতালে ফিভার ক্লিনিক চলছে না, পরীক্ষা হচ্ছে না, হলেও সময়মতো রিপোর্ট আসছে না, ডেঙ্গু চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্লেটলেটের আকাল সর্বত্র, বেডের অভাবে বেসরকারি ক্ষেত্রে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, ফিরে আসছে অজানা জ্বরের তকমা এবং তথ্য প্রকাশ করার দায়ে চিকিৎসকের সাসপেন্ড হয়ে যাওয়ার দুঃসহ স্মৃতি। ডেঙ্গু যখন ভয়ঙ্কর মহামারীর আকার নিয়েছে, মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘতর হচ্ছে তখন সরকার, আবারো তথ্য ধামাচাপা দিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর খতিয়ান কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। দুই ২৪ পরগনা, কোলকাতা, হুগলী, হাওড়া, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা। গত এক সপ্তাহে কলকাতার পনেরটি ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা হুহু করে বেড়েছে, বেড়েছে জেলাগুলিতেও।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার, স্বাস্থ্য দপ্তর, সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলোকে অবিলম্বে মশা ও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতি ব্লকে ও শহরের প্রতি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু পরীক্ষার পরিকাঠামো, জেলা, মহকুমা, স্টেট জেনেরাল হাসপাতাল,পুর হাসপাতালেএবং মেডিক্যাল কলেজ গুলোতে ফিভার ওয়ার্ড চালু করতে হবে। আরও অনেক রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ কেন্দ্র তৈরির পাশাপাশি প্রতি জেলায় আরো চিকিৎসা-পতঙ্গবিদ্ নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি আমরা। এবিষয়ে আলোচনার জন্য চিকিৎসক সংগঠনগুলোর সঙ্গে অবিলম্বে সরকার জরুরি বৈঠকে বসুক, এই দাবিও আমরা রাখছি।
ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ
ডাঃ হীরালাল কোঙার
যুগ্ম আহ্বায়ক, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ