দশকের পর দশক ধরে দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিনিয়ত নারকীয় সব নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের খবর সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসছে আর আমরা শিউরে উঠছি। যতটুকু খবর উঠে আসছে তার চাইতে অনেক বেশি অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। সেগুলি হয় রাজনৈতিক মদতপুষ্ট এবং / অথবা প্রভাবশালী অপরাধীদের ভয়ে অসহায় নির্যাতিতা ও তাদের পরিবারগুলি চেপে যাচ্ছে নতুবা অপরাধ – মাফিয়া চক্র রাজনৈতিক নেতা – পুলিশ – প্রশাসন এমনকি বিচার ব্যবস্থার সাহায্যে সেগুলি হাপিশ করে দিচ্ছে।
আন্তর্জাতিক গ্যালপ পোল, গ্লোবাল সেফটি রিপোর্ট প্রভৃতি এবং ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি), চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড ইউ (ক্রাই), ন্যাশনাল সেন্টার ফর মিসিং অ্যান্ড এক্সপ্লয়টেড চিলড্রেন (এনসিএমইসি), চাইল্ড ইন নিড ইন্সটিটিউট (সিনি) প্রভৃতি সংস্থাগুলির সূত্রে ভয়ঙ্কর সব তথ্য উঠে আসছে। বিশ্বের যাবতীয় সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের রাজধানী হয়ে ওঠার পর ভারত ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ এ শিশু নির্যাতনে প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং নারী নির্যাতনে প্রথম পাঁচটি দেশের একটি হয়ে উঠেছে। প্রতি ১৫ মিনিটে দেশে একটি করে শিশুর উপর যৌন নির্যাতন এবং নারী ধর্ষণ সংঘটিত হচ্ছে। জনসংখ্যার ৬৮% শৈশবে কোন না কোন সময় নির্যাতিত হয়েছে। শিশু নির্যাতনে দেশের প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে এবং নারী নির্যাতনে উত্তরপ্রদেশের পর দেশের মধ্যে দ্বিতীয় পশ্চিমবঙ্গ।
পরিসংখ্যান আরও বলছে দেশ ও রাজ্যে শ্লীলতাহানি (Molestation), যৌন হয়রানি (Sexual Harassment), অশালীন ও যৌন আক্রমণ (Indecent and Sexual Assault), যৌন হিংসা (Sexual Violence), ধর্ষণ (Rape), গৃহ হিংসা (Domestic Violence), শিশু প্রহার (Child Battering) ও শিশু নির্যাতন (Child Abuse), নারী ও শিশু অপহরণ ও পাচার (Women and Children Abduction and Trafficking) বেড়েই চলেছে। গৃহ হিংসা ও পাচারে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম শীর্ষ রাজ্য।
(এক) প্রতিবাদ ও পরিণতিঃ ২০১২ য় দিল্লিতে সংঘটিত হাড় হিম করা অভয়া কাণ্ড থেকে ২০২৪ এ কলকাতার পৈশাচিক তিলোত্তমার ঘটনায় শহরের সচেতন নাগরিক সমাজ গর্জে উঠেছেন, শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে তুলেছেন। সংবাদ মাধ্যম সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু প্রথমটির ক্ষেত্রে অপরাধীরা ধরা পেয়ে শাস্তি পেলেও, দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এখনও তদন্ত চললেও এবং সাময়িক কিছু প্রশাসনিক সংস্কার ও কিছু আইনি পরিবর্তন হলেও ধর্ষণ নিবারণে কাজের কাজ কিছু হয়নি। বরং এগুলিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণ বেড়ে চলেছে। শহর থেকে গ্রাম সমস্ত জনসমাজকে গ্রাস করে নিয়েছে। তথাকথিত সীতা সাবিত্রীর দেশ জুড়ে নারীর উপর যৌন নিপীড়ন একটি প্রধান সামাজিক ও রাষ্ট্রিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মত এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সহজলভ্য বিভিন্ন পর্ণ ভিডিও ও নীল ছবির প্রভাবে একক বা যৌথ ধর্ষণের আগে পরে ধর্ষিতার উপর ভয়ঙ্কর শারীরিক অত্যাচার, যৌনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করে দেওয়া এবং শেষে হত্যা।
অনেক ক্ষেত্রে পুরুষ ও তৃতীয় লিঙ্গদের পুরুষ যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। পুরুষের উপর নারীও যৌন অত্যাচার করতে পারে, কিন্তু শারীরিক কারণে এবং পিতৃতান্ত্রিক সমাজে তার সংখ্যা নগন্য। পিতৃতান্ত্রিক ও পুরুষ ক্ষমতায়নের এই সমাজে নারী শুধু পুরুষের অধীনই নয় এখনও তার স্থান অন্তঃপুর বা হারেম, হেঁশেল ও আঁতুড়ঘরে। নারীর সমানাধিকার, নারী স্বাধীনতা, নারীর যৌনতা (Female Sexuality), নারীর যৌন ইচ্ছা (Sex Urge) ও যৌন তৃপ্তি (Orgasm), নিজের দেহ ও সন্তান ধারণের উপর নারীর অধিকার এইসবের সামাজিক অভিধানে অস্তিত্ব নেই এবং নারীদেরও বেশিরভাগের কোন ধারণা নেই। সুতরাং পিতৃতান্ত্রিক ও পুরুষ ক্ষমতায়নের এই সমাজে পুরুষ কর্তৃক নারীর উপর যৌন অপরাধ (Sexual Offences and Crimes) প্রধান সমস্যা এবং আমাদের আলোচ্য বিষয়। আরেকটি বিষয় নিয়েও আমাদের সচেতন থাকা উচিত যে যত নারী ও শিশু গৃহের বাইরে ও অজ্ঞাত ব্যাক্তির দ্বারা যৌননিগ্রহ ও ধর্ষণের শিকার তার চাইতে অনেক বেশি নারী ও শিশু নির্যাতিত ও ধর্ষিত হয় গৃহ মধ্যে ও পরিচিতদের দ্বারা। অর্থাৎ নারীর উপর যৌন অপরাধের যে তথ্যটুকু পাওয়া যায় সেটি আসলে হিমশৈলের চূড়া (Tip of the Iceberg) মাত্র।
(দুই) যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিঃ যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণকে রাষ্ট্র নেতা, প্রশাসক, আমলা, পুলিশ, জনগোষ্ঠীর নেতা, বিদ্দ্বজন, সমাজকর্মী, এবং জনসাধারণের বেশিরভাগ নিছকই সমাজবিরোধিতা, অপরাধ ও আইনশৃঙ্খলার বিষয় হিসাবে দেখেন। তাই তাঁদের দাওয়াই ফাঁসি, এনকাউন্টার, গণপিটুনির পরও এগুলি বেড়ে চলে। আবার রাজনীতিক, আইনবিদ, বুদ্ধিজীবী, জনগণের একাংশ এগুলিকে আইনকানুনের সঠিক বলবতের অভাব হিসাবে দেখেন। কিন্তু বারবার আইন পরিবর্তন করে, নতুন নতুন কঠোর বিল ও আইন এনে, দীর্ঘসুত্রি পুলিশি তদন্ত ও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মাধ্যমে দীর্ঘ সওয়াল জবাবের সময় কিছুটা কমিয়ে এবং ধর্ষকদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ফাঁসির রায় দিয়েও ধর্ষণ এতটুকু কমানো যাচ্ছেনা। বরং দণ্ডপ্রাপ্তরা আইনের কোন না কোন ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বা দণ্ডাজ্ঞা হ্রাস পাচ্ছে এবং কারাজীবনে নিজেরা ও অন্যদের আরও কলুষিত করে সমাজে দাগী অপরাধীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। বিরোধী রাজনীতিক ও নাগরিকদের একাংশ পথ জুড়ে আন্দোলন করে, শ্লোগান ও বক্তব্য ছুঁড়ে কিংবা বিশিষ্টজন ও সমাজকর্মীদের একাংশ প্রচার, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ভিডিও কনফারেন্সিং করেও এতটুকু যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ কমাতে পারেননা। ধর্মীয় ও খাপ নেতারা এটিকে নৈতিকতা (Morality) ও নীতি শাস্ত্রের (Ethics) দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেন। অথচ ভোটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দলগুলির ছত্রছায়ায় সমাজজুড়ে নিরন্তর ধর্মীয় প্রচার চললেও রাজমিস্ত্রি পরিবর্তিত ডাকাতরা ডাকাতি করতে এসে চার্চের বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনীকে ধর্ষণ করে যায়।
দিল্লিতে অভয়া কাণ্ডেরপর গঠিত জাস্টিস ভারমা কমিশন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ধর্ষণ সংক্রান্ত আইনের কিছু পরিবর্তন আনেন। ধর্ষণের সরবোচ্চ সাজা ১০ থেকে ২০ বছর, অ্যাসিড ছোঁড়ার নির্দিষ্ট সাজা, বিবাহিত জীবনের ধর্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করা, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ‘ইন্টারনাল কমপ্লেইন্ট কমিটি’ (ICC)র পরিবর্তে ‘এমপ্লয়মেন্ট ট্রাইব্যুনাল গঠন’, আক্রান্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যাবস্থা, যৌন অপরাধে অভিযুক্তদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না দেওয়া, বিদ্যালয়ে যৌন শিক্ষা, ফরেন্সিক প্রমাণ সংগ্রহের নির্দেশনামা, ধর্ষণ ও Protection of Children from Sexual Offences (POCSO) মামলায় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে দ্রুত বিচার করা প্রভৃতির সুপারিশ করলেও এবং সেগুলি আংশিক আইন হয়ে লাগু হলেও ধর্ষণ বন্ধ করা যায়নি। অন্যদিকে এই সুপারিশগুলির মধ্যে ধর্ষিতার তাৎক্ষণিক মানসিক আঘাত ও বিমুড়তা (Trauma and Shock) এবং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক অভিঘাত, তার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, অন্যান্য বিভিন্ন রূপের যৌন অপরাধগুলি সম্পর্কে কিছু বলা নেই।
(তিন) যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে মনস্তাত্বিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত দৃষ্টিভঙ্গিঃ
নির্যাতিতা এবং ধর্ষক উভয়ের মনস্তত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পাশ্চাত্যে প্রচুর গবেষণা পত্র রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সিটিউট অফ হেলথ’ এই নিয়ে বেশ কিছু কাজ করেছে। ভারতীয় গবেষকরাও বেশ কিছু কাজ করেছেন। ধর্ষণ রোধ করতে ধর্ষকদের মনস্তত্ব ও মানসিক স্বাস্থ্যের মুল্যায়ন ও চিকিৎসার প্রয়োজন। কেন আপাত স্বাভাবিক বা শান্ত স্বভাবের একজন ব্যাক্তি ভয়ানক যৌন নির্যাতনকারী (Serious Sexual Offender), ধর্ষক (Rapist), ধর্ষক ও খুনি (Rapist and Murderer) এবং ধারাবাহিক অত্যাচারী ও খুনি (Serial Killer and Ripper) হয়ে ওঠে সেটা বোঝা দরকার। দেখা গেছে এই যৌন অপরাধীরা বেশিরভাগ শৈশবে বা বাল্যে বা কৈশোরে বা তারপরে অন্তত একবার কখনও একাধিকবার বা বারবার প্রহার, যৌন নির্যাতন অথবা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। এদের অনেকেরই গুরুতর পরিবারিক সমস্যা (Dysfunctional Family Relationship) থাকে। অনেকে ভগ্নমনস্কতা (Schizophrenia), সংশ্লিষ্ট মনোবৈকল্য (Psychosis), অস্বাভাবিক উত্তেজনা ও তার বিভিন্ন তারতম্য (Hypo mania or Mania) প্রভৃতি মানসিক ব্যাধিতে ভোগে। এর ফলে ভিন্ন ধর্মী যৌনতার (Paraphilia) লক্ষণ ও অপরাধ প্রবণতা ( Antisocial Behavior) দেখা যায়। এই সমস্যাগুলি সনাক্ত করে সেগুলির প্রতিকার করে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে সামাজিক সংগ্রামকে শক্তিশালী করে তোলা যায়।
মনস্তাত্বিক পরীক্ষায় ধর্ষকদের নিম্নোক্ত মনোভাবগুলি উঠে এসেছেঃ (১) নারী এক অজ্ঞেয় জীব। তার আচরণ, পোশাক ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্ষণ প্রার্থনা করে। (২) নারী যৌন আনন্দ করার সামগ্রী (Sexual Object)। (৩) পুরুষের যৌন তাড়না (Libido or Sex Drive) অপ্রতিরোধ্য, (৪) ধাত বা বীর্য (Semen) ধরে রাখা ক্ষতিকর। (৫) ধর্ষণের মাধ্যমেই যৌন তাড়না মেটানো সম্ভব। (৬) এই খারাপ পৃথিবীতে সবাই আমাকে আক্রমণ করেছে, তাহলে আমি কেন করব না? ইত্যাদি ইত্যাদি। আবার তাদের আচরণের দিক থেকে তাদের (১) সুযোগ সন্ধানী ধর্ষক (Opportunistic Rapist), (২) ক্রুদ্ধ ধর্ষক (Anger Rapist), (৩) স্বাভাবিক যৌন আচরণকারী ধর্ষক (Sexually Non-Sadistic Rapist), (৪) ধর্ষকাম ধর্ষক (Sexually Sadistic Rapist), (৫) বিকৃতকাম ধর্ষক (Perverted Rapist), (৬) প্রতিহিংসাপরায়ণ ধর্ষক (Vindictive Rapist) প্রভৃতি ভাগে ভাগ করা হয়।
(চার) যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ নিয়ে সর্বত (Holistic) দৃষ্টিভঙ্গিঃ শিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতন, নির্দিষ্টভাবে যৌন নির্যাতন, এবং ধর্ষণের ভয়াবহতা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে সমস্যাটিকে গভীরে গিয়ে উপলব্ধি ও সম্বোধন করতে এবং কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এরজন্য মনস্তাত্বিক, মনোচিকিৎসাগত, অপরাধ বিজ্ঞান, তদন্ত ও বিচার, ন্যায়নীতি, আইনি, মেডিকো – লিগাল, ফরেনসিক, আইন – শৃঙ্খলা, শিক্ষাগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিবিধ দৃষ্টিভঙ্গি, বিষয়, শাস্ত্র, দপ্তর, বিভাগ ও কর্মকাণ্ডগুলির সঠিক ও সর্বত মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। চাই রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নাগরিক সচেতনতা এবং সরকারি – বেসরকারি উপযুক্ত উদ্যোগ।
(পাঁচ) যৌনতা ও যৌনতার সমস্যাঃ অন্যান্য জীবের মত প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে যৌনতা একটি স্বাভাবিক জৈবিক প্রয়োজনীয়তা (Biological Need) এবং দুটি নারী – পুরুষের মধ্যে যৌন ভালবাসার (Sex Love) চূড়ান্ত প্রকাশ। অন্যান্য জীবের তুলনায় মানুষ সভ্য ও উন্নত হওয়ায় এটি একটি দম্পতির মধ্যে একান্ত ব্যাক্তিগত বিষয় হিসাবে গণ্য হয় এবং শালীনতা বজায় রাখা হয়। ব্যাক্তিগত সম্পত্তি (Private Property) অটুট রাখতে, গোষ্ঠীর (Klan) মধ্যে যৌন যুদ্ধ (War for Sex) ও তজ্জনিত হানাহানি বন্ধ করতে এবং যৌন ক্রিয়ায় উৎপন্ন সন্তানদের শ্রেণীবদ্ধ রাখতে বিবাহ (Marriage) এবং পরিবারের (Family) ধারণার উদ্ভব হয়। পরে এটি সমাজ (Society) ও রাষ্ট্র (State) মান্যতা দেয় এবং পদ্ধতিবদ্ধ (Systematize) করে। এর পাশাপাশি জমি ও সম্পত্তির পরিমান, লিঙ্গ অনুপাত, সামাজিক আচার ইত্যাদি অথবা পছন্দ, স্বভাব ও আচরণগত কারণে কোথাও কোথাও অথবা সর্বত্র বৈভবশালীদের বা সমাজের গৌণ ধারা হিসাবে পুরুষের বহুগামিতা (Polygamy), পুরুষের বহুবিবাহ (Polygyny), নারীর বহুবিবাহ (Polyandry), পরকীয়া (Adultery), ব্যাভিচার (Promiscuity), পতিতাবৃত্তি (Prostitution), সমকামিতা (Homosexuality), একত্রবাস (Living Together) ইত্যাদি চলতে থাকে।
বিবাহ হল একটি পুরুষ ও নারীর মধ্যে চুক্তি (Contract) যার ফলে তারা কিছু দায়িত্ব ভাগ, সম্পত্তির অধিকার, একসাথে বসবাসের সুযোগের সঙ্গে আইনত যৌন সম্পর্ক (Sexual Relation) করতে এবং সন্তান উৎপাদনে সক্ষম। সফল যৌন সঙ্গমের (Sexual Intercourse or Coitus) মাধ্যমে বিবাহ পরিপূর্ণতা (Consummation of Marriage) লাভ করে। বিবাহ ও যৌনতা যেহেতু কোন ব্যাক্তির জীবনে অত্যন্ত আনন্দ, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় তাই তাদের নিয়ে নানারকম রোমান্স, প্রেম কাহিনী, কল্প কাহিনী, রসিকতা, অতিকথা (Myth), রহস্য (Suspense), সাহিত্য ইত্যাদি সমাজ জুড়ে। আবার ভারত সহ পশ্চাদপদ পিতৃতান্ত্রিক সামন্ত সমাজে (Backward Patriarchal Feudal Society) বিবাহ ও যৌনতা নিয়ে রয়েছে নানারকম কঠোর রীতিনীতি, আচার ব্যাবহার, ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত প্রথা ও কুপ্রথা, সংস্কার ও কুসংস্কার, অন্ধ ও ভ্রান্ত বিশ্বাস, গোপনীয় রহস্য (Taboos)। ভালোবেসে, সম্বন্ধ করে, বলপূর্বক, অপহরণ করে নানাবিধ বিবাহের কথা শোনা যায়। আবার কোন কারণে বিবাহ অসফল হলে স্বামী – স্ত্রীর মধ্যে নানারকম দ্বন্দ্ব, অশান্তি, অবিশ্বাস, বৈরিতা, হিংসা, হতাশা, অবসাদ, আইনি লড়াই, বিচ্ছেদ ইত্যাদি ঘটে। বিবাহ বিচ্ছেদ (Divorce) হল কোন আইনসঙ্গত বিবাহ থেকে নারী পুরুষের বিযুক্ত হওয়া।
স্বামী – স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি, স্ত্রী কে সন্দেহ ও নির্যাতন, বিচ্ছিন্নতা ও বিচ্ছেদের অন্যতম কয়েকটি কারণ হল কুমারীত্ব (Virginity), যৌন জাগরণের অক্ষমতা (Impotence) এবং বন্ধ্যাত্ব (Sterility)। পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুরুষ ক্ষমতায়নের কারণে বিবাহের পাত্র বহুগামী হতে পারে, কিন্তু পাত্রীকে কুমারী (Virgin) হতে হবে অর্থাৎ সে বিবাহপূর্বে কোন যৌন সঙ্গম করতে পারবেনা এবং একদম ছোটবেলা থেকে তাকে সেই মানসিকতায় ও কঠোর পাহারার মধ্যে বড় হতে হবে। সন্তান উৎপাদনের বয়ঃপ্রাপ্তি ঘটলেই তাকে পাত্রস্থ করে শ্বশুরালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কুমারীত্বের প্রমাণ হিসাবে তার যোনিপথের (Vagina) মুখে অবস্থিত পাতলা আস্তরণটি (Hymen) অটুট থাকতে হবে। হাইমেন বিভিন্ন আকৃতির হয়। কোন কোন নারীর হাইমেনে কিছু খাঁজ ও ছোট ছিদ্র থাকে যার ফলে অনেক সময় তারা ভুল ধারনার শিকার হয়ে পরিত্যক্ত হন। অনেক সময় দুর্ঘটনা, আঘাত, ক্রীড়া, স্বমেহন (Masturbation), অস্ত্রপচার, বাইরেকার কোন বস্তুর (Foreign Body) উপস্থিতি, ঘা, চুলকানি, ভ্যাজাইনাল ট্যাম্পুন ব্যাবহারের কারণে হাইমেন ফেটে (Rupture) যেতে পারে। যোনিপথে যৌন সঙ্গম (Vaginal Sex) ও ধর্ষণের কারণেও হাইমেন ফেটে যায়। কুমারীত্বের অবসান (Defloration) এর প্রশ্ন আসে বিবাহ বাতিল (Nullity of Marriage), বিবাহ বিচ্ছেদ, সম্মানহানি (Defamation) ও ধর্ষণের ক্ষেত্রে।
পশ্চাদপদ ধর্মীয় সমাজ – সংস্কৃতির আবহে কুমারীত্ব নিয়ে অদ্ভুত সব ভ্রান্ত ধারণা ও পবিত্র উপাখ্যান রয়েছে যে জন্য কুমারীত্ব কে নারীর সতীত্ব (Chastity) হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই সমাজে নাবালিকা কন্যাকে বিবাহ, অন্যদিকে কুমারীদের সঙ্গে যৌন সঙ্গমের প্রবণতা। সেই কারণেও গৃহে ও গৃহের বাইরে নাবালিকা ধর্ষণ ঘটে চলে। গণিকালয়গুলিতে পাচার হয়ে আসা নাবালিকাদের সঙ্গে প্রথমবার যৌন সঙ্গমের জন্য ধনী লম্পটরা উন্মুখ হয়ে থাকে। নথ ভাঙ্গার অনুষ্ঠানের জন্য নিলামও হয়। যৌনাঙ্গে শোলা ইত্যাদি প্রবেশ করিয়ে নাবালিকাদের প্রস্তুত করা হয়। এর ফলে অনেক সময় গুরুতর সংক্রমণ হয়। আবার মুসলমান ধর্মীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের লিঙ্গাগ্রের চামড়া (Prepuce) ছেদন বা সুন্নতের (Circumcision) মত ভারতে বাহাই সম্প্রদায় এবং আফ্রিকার বহু জন জাতির মধ্যে পুরুষের যৌন ক্রীড়ায় সুবিধার জন্য নারীর ভগাঙ্কুর (Clitoris) ছেদন (Female Circumcision) অথবা নষ্ট (Mutilation) করে যোনি দ্বার প্রশস্থ করে দেওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। এগুলিও গুরুতর সংক্রমণ ও রক্তক্ষরণের কারণ। পশ্চাদপদ সমাজে আরও একটি ভ্রান্ত ধারণা বহমান যে কুমারীদের সঙ্গে যৌন সঙ্গম করলে যৌন রোগ সহ বহু গুরুতর রোগের থেকে আরোগ্য লাভ হয়। সেই কারণেও শিশু ও নাবালিকা ধর্ষণ ঘটে চলে।
যৌন অক্ষমতা ও বন্ধ্যাত্বঃ দাম্পত্য কলহ, বিচ্ছেদ, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ধর্ষণের কয়েকটি বড় কারণ (১) যৌন জাগরণের অক্ষমতা, (২) যৌন অক্ষমতা (Sexual Dysfunction) এবং (৩) বন্ধ্যাত্ব।
(১) যৌন জাগরণের অক্ষমতা বা ইম্পোটেন্স হল কোন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে যৌন উদ্দীপনা প্রাপ্তি সত্ত্বেও যৌন জাগরণ না ঘটা, লিঙ্গত্থান না ঘটা বা ধ্বজভঙ্গ (Erectile Dysfunction) এবং স্বাভাবিক যৌন সঙ্গম করার অক্ষমতা। এর অনেক কারণের মধ্যে কয়েকটিঃ (ক) জন্মগত, ক্রমোজমগত, গঠনগত, নির্দিষ্ট হরমোনের অভাব সহ শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন সমস্যা। এখানে প্রধান Cisgender ধারা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। নারীর ক্ষেত্রে যৌন জাগরণের অক্ষমতাকে শৈত্য (Frigidity) বলে যদিও নারী নারী – পুরুষ স্বাভাবিক যৌন প্রক্রিয়ায় গ্রহীতা (Receptive) হওয়ায় তার শৈত্য সাধারণত পুরুষের যৌন কর্মে বাধা হয়না। যৌন জাগরণের অক্ষমতা যেমন জন্ম ও গঠনগত কারণে স্থায়ী হতে পারে সেরকম অসুস্থতা, অস্ত্রপচার প্রভৃতি কারণে সাময়িক হতে পারে। ব্যক্তি পছন্দ বা অপছন্দর কারণে কোন পুরুষ অথবা নারীর কোন নারী অথবা পুরুষের প্রতি যৌন জাগরণ কিংবা যৌন জাগরণের অক্ষমতা বা শৈত্য জন্মায় তাকে Quad বা Regard বলে। গঠনগত কারণে অনেকের লিঙ্গ (Penis), অণ্ডকোষ (Testes), জরায়ু (Uterus), ডিম্বাশয় (Ovaries), যোনি পথ (Vagina), যোনি দ্বার (Vulva), স্তন (Breasts) – যৌনাঙ্গগুলি (Sexual or Reproductive Organs) অনুপস্থিত বা ত্রুটিপূর্ণ থাকে অথবা কার্যকর থাকেনা।
(খ) দুর্ঘটনা, আঘাত, অস্ত্রপচার, লিঙ্গান্তর (Change of Sex) প্রভৃতি। (গ) পুষ্টি ও বৃদ্ধির অভাব এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা। (ঘ) ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য গুরুতর ব্যাধি, (ঙ) যৌনাঙ্গের ব্যাধি, (চ) স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, (ছ) মদ ও মাদকের প্রভাব, (জ) দুশ্চিন্তা, অবসাদ, অপরাধবোধ, ভীতি, সঙ্কোচ প্রভৃতি মানসিক সমস্যা। যৌনেচ্ছা সম্পন্ন অথচ যৌন জাগরণে অক্ষম ব্যাক্তিদের একটি অংশ শিশু ও নারী নির্যাতনকারী এবং ধর্ষক হয়ে ওঠে।
(২) যৌন সঙ্গমে অক্ষমতা হল উপরোক্ত এবং অন্যান্য কারণে লিঙ্গত্থান ও যৌন সঙ্গমে অক্ষমতা অথবা ত্রুটি, অসম্পূর্ণতা কিংবা সঠিকভাবে বীর্যপাত (Ejaculation) ঘটাতে না পারা। সমস্ত যৌন জাগরণে অক্ষম ব্যাক্তি যৌন সঙ্গমে অক্ষম, কিন্তু সমস্ত যৌন সঙ্গমে অক্ষম ব্যাক্তি যৌন জাগরণে অক্ষম নন। যৌন সঙ্গমের ক্ষেত্রে শরীরবৃত্তীয় (Physiological) কারণে পুরুষ প্রবেশকারী (Penetrative) এবং নারী গৃহীতা, তাই নারীর ক্ষেত্রে যৌন সঙ্গমের অক্ষমতা বিষয়টি আসেই না। কোন কোন নারীর ক্ষেত্রে ভীতি, ভয়ঙ্কর স্মৃতি, ক্রোধ, ঘৃণা, অপছন্দ, হিস্টিরিয়া (Hysteria) প্রভৃতি মানসিক রোগের কারণে যৌন সঙ্গমের সময় এমনকি যৌন সঙ্গমের কথা মনে এলে এক ধরনের মানসিক – শারীরিক সমস্যার (Psychosomatic Disorder) সৃষ্টি হয় যার ফলে পেরিনিয়াল পেশিগুলিতে স্প্যাস্টিক সংকোচন (Cramps) হয়ে দেহে প্রবল ঝাঁকুনি শুরু হয় যাকে Vaginismus বলে। এর ফলে স্বাভাবিক যৌন সঙ্গম বাধাপ্রাপ্ত হয়। যৌন সঙ্গমে আকাঙ্ক্ষী কিন্তু অক্ষম এই পুরুষদের একাংশ শিশু ও নারী যৌন নির্যাতনকারী এবং ধর্ষকে পরিণত হয়।
৩) বন্ধ্যাত্ব হল গঠনগত, শরীরবৃত্তীয় বা অসুস্থতার কারণে যখন পুরুষের পক্ষে সন্তানের জন্ম দেওয়া অথবা নারীর পক্ষে সন্তান ধারণ (Conceive) করা সম্ভব নয়, অথবা, কিছু ক্ষেত্রে উভয়েরই সমস্যা থাকতে পারে। বয়ঃসন্ধির সূচনায় ১০ – ১২ বছর বয়স থেকে পুরুষের শুক্রাণু (Sperm) তৈরি শুরু হয় এবং বার্ধক্যে অনেক বছর বয়স অবধি শুক্রাণু উৎপন্ন হয়। যৌন সঙ্গমের সময় যে বীর্যপাত হয় সেই বীর্যের (Semen) প্রায় ৬০% সেমিনাল ফ্লুয়িড, ৩০ % প্রস্টেটিক ফ্লুয়িড এবং মাত্র ৫% শুক্র থাকলেও শুক্রের সংখ্যা প্রচুর থাকে। যৌন জাগরণে ও সঙ্গমে অক্ষমতা ছাড়াও শুক্রহীনতা (Azoospermia), শুক্রের স্বল্পতা (Oligospermia), শুক্রের গঠনগত ত্রুটি প্রভৃতি কারণেও পুরুষের বন্ধ্যাত্ব হয়। মেয়েরাও বয়ঃসন্ধির শুরুতে ১১ – ১২ বছর বয়সে রজঃশীলা ( Menarche) হয় এবং ৪৫ – ৫০ বছর বয়সে রজঃনিবৃত্তি (Menopause) অবধি সন্তান ধারণ করতে পারেন। (১) ও (২) এ বর্ণিত কারণগুলি ছাড়াও ডিম্বাশয়, জরায়ু প্রভৃতির সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। দেখা গেছে ১০ – ১৫% বিবাহিত দম্পতি নিঃসন্তান।
একজন ব্যাক্তি যৌন সঙ্গমে সক্ষম হয়েও বন্ধ্যা (Sterile) হতে পারেন, আবার কোন ব্যাক্তি যৌন সঙ্গমে অক্ষম হলেও বন্ধ্যা নাও হতে পারেন। আমাদের দেশে পশ্চাদপদ সমাজে বিবাহিত না হলে, বিশেষত মহিলাদের, জীবন দুর্বিষহ করে দেওয়া হয়। আবার বিবাহিত দম্পতিদের সন্তান না হলে বিশেষত স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ করে দেওয়া হয়। আমাদের দেশে যেমন ধর্ষণের জন্য অনেক সময় ধর্ষিতা নারীকেই দায়ী (Victim Blaming) করা হয়, সেরকমই বন্ধ্যাত্বের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীর উপর দোষ চাপিয়ে পুরুষের পুনর্বিবাহের সুপারিশ করা হয়। আমাদের দেশে পুরুষ ও নারীর ন্যুনতম বয়স যথাক্রমে ২১ ও ১৮ বছর হলেও নাবালক – নাবালিকাদের বিবাহ আকছার ঘটে, যা কোভিড অতিমারির পর আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধ্যাত্বের কারণে দাম্পত্য কলহ, বধূ নির্যাতন, বধূ হত্যা, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি ঘটে। অনেকক্ষেত্রেই স্বামী – স্ত্রী অবসাদ (Depression) ও নানারকম মানসিক অসুস্থতায় ভোগেন। কেউ কেউ আবার পরগামী, বহুগামী, শিশু ও নারী নির্যাতনকারী এবং ধর্ষক হয়ে ওঠেন।
(ছয়) তৃতীয় লিঙ্গঃ ইন্টারসেক্স (Intersex) হল এমন এক জন্মগত (Congenital) শারীরিক অবস্থা যা পুরুষ ও নারীর মধ্যবর্তী বিভিন্ন স্তরে থাকতে পারে। এর মধ্যে কারো জননেন্দ্রিয় পুরুষের মত, কারো নারীর মত। শুদ্ধ ভাষায় এদের বৃহন্নলা (Eunuch) বলা হলেও জনসংখ্যার এই অংশটি ভারতের মত পশ্চাদপদ দেশে খুবই অবহেলিত। দেবতার অভিশাপ হিসাবে এদের পরিবার ও সমাজ পরিত্যাগ করে, আশ্রয় হয় শহরের হিজড়া বস্তি বা গণিকালয়গুলিতে। সমাজের বিদ্রুপ সহ্য করে এবং শারীরিক ও যৌনভাবে নির্যাতিত হয়ে কায়ক্লেশে এদের জীবন অতিবাহিত হয়। এদের একাংশকে বয়ঃসন্ধির আগে লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ছেদ (Castration) করা হয়, নারীর মত সাজানো ও আচরণ করা শেখানো হয় এবং মুলত যৌন কর্মী (Sex Worker) অথবা ভিক্ষাজীবী হিসাবে ব্যাবহার করা হয়। এদের হিজড়া (Hijra) বলা হয়। বাকিরা জন্মগত রূপেই থেকে যান। এদের জেনানা (Jenana) বলা হয়। এদেরও যৌন কর্মী অথবা ভিক্ষাজীবী হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।
পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ বাদ দিয়ে বৃহন্নলা (Intersex) সহ বাকিদের তৃতীয় লিঙ্গ (Third Sex) বলা হয়। যৌন ব্যাবহার বা আচরণের ক্ষেত্রে যে পুরুষ বা নারীরা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয় তাদের বিসমকামী (Straight or Heterosexual) এবং যারা নিজ লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট তাদের সমকামী (Homosexual) বলে। পুরুষ সমকামীদের Gay এবং নারী সমকামীদের Lesbion বলা হয়। যারা নিজ এবং অপর দুটি লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট তাদের উভকামী (Bisexual) বলা হয়।
যৌন মনোভাব ও প্রবণতার দিক থেকে (১) Lesbion, (২) , Gay, (৩) Bisexual, (৪) Transgender অথবা রূপান্তরকামী (যারা জন্মগতভাবে যে লিঙ্গের অধিকারী বা অধিকারিনী যৌন মনোভাব ও আচরণের দিক থেকে বিপরীত লিঙ্গের। এদের কেউ কেউ অস্ত্রপচার করে লিঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলেন।), (৫) Queer or Questioning (অন্যধরনের বা অদ্ভুত ধরনের যৌন আচরণ), (৬) Intersex (আলোচিত) এবং (৭) Asexual (যাদের যৌনতায় অনাগ্রহ অথবা ন্যুনতম আগ্রহ) – এদের সবাইকে নিয়ে LGBTQ+ একটি শ্রেণী ভাগ করা হয়। প্লাস কারণ আরও অন্য ধরনের যৌন প্রবৃত্তিগুলির জন্যও এই শ্রেণী বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। LGBTQ+ শ্রেণীটি সাধারণভাবে সমাজে নিপীড়িত। এদের অনেকেই যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার। আবার এদের মধ্যে একটি সবল ও প্রভাবশালী অংশের কাছে এদের দুর্বলরা এবং অনেক ক্ষেত্রে শিশু ও নারীরা যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার।
(সাত) যৌন অপরাধঃ আইন অনুযায়ী যৌন অপরাধকে (Sexual Offences) প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় – (১) প্রাকৃতিক যৌন অপরাধ (Natural Sexual Offences), (২) অপ্রাকৃতিক যৌন অপরাধ (Unnatural Sexual Offences) এবং যৌন বিকৃতি (Sexual Perversion)।
(১) প্রাকৃতিক যৌন অপরাধঃ
ক) ধর্ষণঃ (Rape) আইন অনুযায়ী ধর্ষণ হল যোনি বা পায়ুতে সম্মতি ছাড়া লিঙ্গ, আঙ্গুল বা অন্য কোন বস্তু প্রবেশ করানো। সম্মতি সত্ত্বেও যদি (i) ভীতি প্রদর্শন বা আঘাত করে অথবা, (ii) মদ, মাদক, অচেতন কারক দ্রব্য খাইয়ে এগুলি করা হয়, অথবা, (iii) গ্রহীতা মানসিক প্রতিবন্ধী হয়, অথবা, (iv) গ্রহীতা যদি নাবালিকা (১৬ বছরের নীচে) হয়।
পশ্চাদপদ সমাজে ধর্ষণ নিয়ে সমাজ জীবনে বেশ কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অতি কথা প্রচলিত। যেমন, অপরিচিতরাই ধর্ষণ করে, মেয়েরাই তাদের পোশাক আচরণের জন্য ধর্ষণ ডেকে আনে, ধর্ষিতা হলে নারী কলুষিত ও অধঃপতিত হয়। ধর্ষণকে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়ঃ (i) প্রবেশমূলক ধর্ষণ (Penetrative Rape), (ii) নাবালিকা বা নাবালকদের ধর্ষণ (Statutory Rape), (iii) বিবাহিত জীবনের ধর্ষণ (Marital Rape) (এটি ভারতীয় আইনসিদ্ধ নয়), (iv) অচেতন করে ধর্ষণ (Date Rape), (v) পুরুষ কে ধর্ষণ (Male Rape), (vi) গণ ধর্ষণ (Gang Rape) (একাধিক ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত) প্রভৃতি।
খ) নিষিদ্ধ সম্পর্কের যৌনতাঃ (Incest) একই পরিবারের বা নিকটাত্মীয়ের মধ্যে যৌন সম্পর্ক।
গ) পরকীয়াঃ (Adultery) বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক।
ঘ) অশালীন যৌন আক্রমণঃ (Indecent Assault) এটি মৌখিক এবং / অথবা মানসিক এবং / ব্যাবহারিক এবং / অথবা শারিরিক হতে পারে। দূরালাপ, সমাজ মাধ্যম ইত্যাদি পরবর্তী সংযোজন।
ঙ) শ্লীলতাহানিঃ (Molestation) এটিও মৌখিক এবং / অথবা সামাজিক এবং / অথবা শারীরিক হতে পারে। শারীরিকের মধ্যে হাত অথবা যৌনাঙ্গ অথবা অন্য দ্রব্য দিয়ে হতে পারে। দূরালাপ, ছবি, ভিডিও, সমাজ মাধ্যম ইত্যাদি পরবর্তী সংযোজন।
চ) বধূ বা সঙ্গিনী নির্যাতনঃ (Wife / Partner battering) মৌখিক এবং / অথবা মানসিক এবং / অথবা শারীরিক।
(২) অপ্রাকৃতিক যৌন অপরাধঃ
ক) পায়ুকামঃ (Anal Sex or Sodomy or Buggery) কোন পুরুষ কর্তৃক কোন পুরুষ অথবা নারীর পায়ু ছিদ্র (Anus) দিয়ে যৌন সঙ্গম। পায়ুকামের গ্রহীতা প্রাপ্তবয়স্ক হলে Gerontophilia এবং নাবালক বা শিশু হলে Pederasty বলা হয়। অনেক সময় বগলে (Axillary fold or Arm Pit) এবং গ্রহীতার দেহের অন্যান্য খাঁজেও যৌন কর্ম (Bag Piping) করা হয়।
খ) শিশু যৌনতাঃ (Paedophilia) নাবালক ও শিশুদের সঙ্গে যৌনতা। যে ব্যাক্তিরা শিশুদের সঙ্গে যৌনতা করে তাদের Paedophile এবং আক্রান্ত শিশু ও নাবালিকা – নাবালকদের Catamite বলা হয়।
গ) নারী সমকামঃ (Tribadism or Lesbionism) নারীর সঙ্গে নারীর যৌনসম্পর্ক। এক্ষেত্রে সাধারণত একজন সক্রিয় (Active) এবং একজন নিস্ক্রিয় (Passive) থাকে। অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন নিঃসরণের জন্য কোন কোন নারী পুরুষালি দৈহিক কাঠামো ও আচরণের অধিকারী (Hirsutism, Virilism etc.) হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সক্রিয় নারী সমকামীতে পরিণত হন।
ঘ) পশু কামঃ (Bestiality) কিছু পুরুষ বা নারী মানবেতর জীব অর্থাৎ কুকুর, বেড়াল, হাঁস, মুরগি, বাছুর প্রভৃতির সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হন। এক্ষেত্রেও পশ্চাদপদ সমাজে নানারকম কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়েও অশিক্ষিত মানুষ এই ধরনের যৌন কর্মে লিপ্ত হন। যেমন প্রচলিত ধারণা যে স্ত্রী গাধার সঙ্গে সঙ্গম করলে যৌন ব্যাধি নির্মূল হয়।
ঙ) মুখ মৈথুনঃ (Oral Sex or Buccal Coitus) এটি অনেক ক্ষেত্রেই যৌন সঙ্গমের পূর্বে শৃঙ্গার (Foreplay) হিসাবে অনুশীলিত হয়। আবার কখনও কখনও সরাসরি এই যৌন ক্রিয়াটি করা হয়। পুরুষাঙ্গ নিয়ে মুখ মৈথুন কে Falatio এবং যোনিদ্বার ও ভগাঙ্কুরে মুখমৈথুন কে Cunnilingus বলা হয়।
(৩) যৌন বিকৃতি
ক) Sadism: যৌন সঙ্গী, প্রধানত নারী যৌন সঙ্গিনীর, উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার ও যৌন নির্যাতন করে যৌন উত্তেজনা ও পরিতৃপ্তি (Sexual Excitement and Gratification)।
খ) Masochism: যৌন সঙ্গিনী বা সঙ্গীকে দিয়ে শারীরিক আঘাত পেয়ে যৌন আনন্দ (Sexual Pleasure) ও পরিতৃপ্তি।
গ) Sado – Masochism: যৌন সঙ্গিনী বা সঙ্গীর উপর যৌন নির্যাতন করে তারপর যৌন সঙ্গিনী বা সঙ্গীকে দিয়ে শারীরিক আঘাত পেয়ে যৌন তৃপ্তি।
ঘ) Paraphilias: দেহের অস্বাভাবিক অংশ, অস্বাভাবিক পদ্ধতি ও অস্বাভাবিক বস্তুর মাধ্যমে যৌন সংসর্গ।
ঙ) Transvestiasm or Eonism: বিপরীত লিঙ্গের মত সাজগোজ করে, পোশাক পরে, আচরণ করে যৌন তৃপ্তি।
চ) Voyeurism or Scoptophilia: লুকিয়ে বিপরীত লিঙ্গের নগ্নতা ও গোপনীয়তা দেখে যৌন তৃপ্তি। এদের Peeping Tomও বলা হয়।
ছ) Fetichism: অপর লিঙ্গের বা যৌন সঙ্গীর পোশাক, অন্তর্বাস, ব্যাবহার করা দ্রব্যের সংস্পর্শে এসে যৌন তৃপ্তি।
জ) Exhibitionism: ইচ্ছাকৃতভাবে অপরকে নিজের যৌনাঙ্গ দেখিয়ে যৌনতৃপ্তি।
ঝ) Masturbation: হস্তমৈথুন প্রধান পদ্ধতি। সেটি কখনও স্বমেহন করে, কখনও বা সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীদের দিয়ে করিয়ে যৌন পরিতৃপ্তি।
ট) Fretteurism: হাত বা যৌনাঙ্গ দিয়ে নারী বা নাবালকদের দেহ স্পর্শ করা বা ঘষাঘষি করা। রাস্তার ভিড়, গণপরিবহনের ভিড়, অনুষ্ঠানের ভিড় প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই যৌন বিকৃতিটির প্রাদুর্ভাব।
ঠ) Undinism: অপর লিঙ্গের রেচন প্রক্রিয়া (Excretion) দেখে যৌন তৃপ্তি।
ড) Lust Murder: যৌন নির্যাতন এবং / অথবা যৌন সঙ্গম করে যৌন সঙ্গিনী বা সঙ্গী কে হত্যা করা। এই ধরনের যৌন অপরাধীদের Ripperও বলা হয়।
ঢ) Necrophilia: মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সংসর্গ করে যৌন তৃপ্তি।
(আট) শিশু ও নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের কয়েকটি সাধারণ কারণঃ
১) দারিদ্রঃ নীতি আয়োগ দারিদ্রের সংজ্ঞা ও সীমা কমিয়ে ভারতে দরিদ্রের সংখ্যা ১১.২৮% দেখালেও এবং বিশ্ব ব্যাঙ্ক ভারতে অতি দরিদ্রের সংখ্যা ১৩ কোটি বললেও ঘটনা যে ভারতে বিশ্বের সবচাইতে বেশি হতদরিদ্র মানুষের বাস। তাদের রয়েছে খাদ্য থেকে আব্রু – ইজ্জত সব কিছুর নিরাপত্তারহীনতা এবং এক মানবেতর জীবন। অনেক ক্ষেত্রে তাদের থাকার বাসস্থানও নেই। তাদের পরিবারের নারী ও শিশুরা সহজেই নির্যাতিত ও ধর্ষিত হয় এবং অপহরণ ও পাচার হয়ে যায়।
২) আর্থিক বৈষম্যঃ ভারত বিশ্বের অন্যতম আর্থিক বৈষম্যের দেশ। এখানে ১% অতি অতি ধনীদের এবং ১০% অতি ধনীদের হাতে যথাক্রমে দেশের ৪০% ও ৭৭% সম্পদ। অথচ নিম্ন আয়ের ৫০% জনসংখ্যার হাতে মাত্র ৩% সম্পদ। ভারতের এই অতি অতি ধনী, অতি ধনী ও ধনীদের একাংশের ভোগ, লালসা ও বিকৃতির শিকার নিম্নবিত্ত, দরিদ্র ও অতি দরিদ্র পরিবারের নারী ও শিশুরা। ধনীদের মালিকাধিন কর্মক্ষেত্রে, কাজের আশায়, ধনীদের গৃহে গৃহসহায়িকার কাজে প্রতিনিয়ত তারা আক্রান্ত হন। গণিকালয় ছাড়াও যৌনদাসী হিসাবে নারী ও শিশুদের ধনীদের গৃহে বা ফার্ম হাউসে রাখা এমনকি বিদেশে পাচার করা হয়। অভাবের কারণে অতি দরিদ্র পরিবারগুলি থেকে নাবালিকা ও শিশু কন্যাদের কাজ কিংবা বিয়ে দেওয়ার অছিলায় সহজে পাচার করা যায়। কোথাও কোথাও পরিবার থেকেই বিক্রি করে দেওয়া হয়।
৩) বিপুল জনসংখ্যাঃ ভারত বিশ্বের সবচাইতে জনবহুল দেশ যেখানে তার বিপুল জনসংখ্যার উপযুক্ত ও পর্যাপ্ত পানীয় জল, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিরাপত্তা, সুস্থ পারিবারিক জীবন সব কিছুরই অভাব। এখানকার অরক্ষণীয় নারী ও শিশুদের একটা বড় অংশ যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও পাচারের শিকার।
৪) সামন্ত পিতৃতন্ত্রঃ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ভারতীয় সমাজে সামন্ত পিতৃতন্ত্র গেড়ে বসার কারণে নারী বৈষম্য, অবহেলা, দমন ও নির্যাতনের শিকার। নারীদেহকে পুরুষের অধিকার ও অধীন মনে করা হয়। প্রচলিত সামাজিক কাঠামোয় নারীকে রক্ষা করা, বিবাহের ব্যাবস্থা করা, সেক্ষেত্রে পণ ইত্যাদি বোঝার কারণে ভ্রূণ হত্যা, শিশু কন্যা হত্যা, শিশু কন্যা ও নাবালিকা নির্যাতন, নাবালিকা বিবাহর ব্যাবস্থা, নাবালিকা বিক্রি, নাবালিকা ও নারী পাচার, ধর্ষণ প্রভৃতির ব্যাপকতা।
৫) লিঙ্গানুপাতঃ পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক কম থাকাটা নারীর উপর যৌন আক্রমণ ও ধর্ষণের একটি কারণ।
৬) অশিক্ষাঃ অশিক্ষার কারণে নারীকে অসম্মান করা হয়। দুর্বল, অধস্তন জীব, সম্ভোগের বস্তু, সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র, সেবা দাসী হিসাবে দেখা হয় এবং সেইরকম আচরণ করা হয়।
৭) যৌনতা নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও মনোভাবঃ পশ্চাদপদ সমাজে গোষ্ঠীগত বিভিন্ন অপশিক্ষার প্রভাবে দুটি নর – নারীর মধ্যে ভালবাসা কেন্দ্রিক যৌনতার (Individual Sex Love) পরিবর্তে পুরুষত্ব ও যৌনতা বলতে নারীর উপর আক্রমণ, আঘাত, নির্যাতন, বলাৎকার, ধর্ষণ কে বোঝায় এবং সেই রকম আচরণ করা হয়।
৮) পুঁজিবাদী সংস্কৃতির বাড়বাড়ন্তঃ যেখানে নারীকে কাম ও ভোগের বস্তু বা পণ্য হিসাবে ভাবা হয় এবং নারী দেহকে ছবি, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, সমাজ মাধ্যম সর্বত্র নগ্ন ও যৌন উত্তেজকভাবে পেশ করা হয়।
৯) কর্ম সংস্থানের অভাবঃ কর্ম সংস্থানের অভাবে অথবা কর্ম সংকোচনের কারণে দেশের এক বড় সংখ্যক প্রাপ্তবয়স্ক যৌন সক্ষম বা সক্রিয় মানুষ বিশেষত যুবকেরা অনিশ্চিত, অবিন্যস্ত, অভাবী জীবন যাপন করে। উপযুক্ত সময়ে তাদের বিবাহ সংসার এবং সুস্থ স্বাভাবিক যৌনজীবন পালন করা সম্ভব হয়না। এদের কেউ কেউ যৌন তাড়নায় যৌন আক্রমণ ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে।
১০) সুস্থ দাম্পত্য জীবনের অভাবঃ বিবাহিত দম্পতীদের ক্ষেত্রে সুখী দাম্পত্য জীবনের সুস্থ স্বাভাবিক যৌনতার পরিবর্তে বিভিন্ন সামাজিক, জনগোষ্ঠীগত ও যৌথ পরিবারের নির্দেশ, নিষেধ, আচার, কুসংস্কার, অতিগোপনীয়তা, ভ্রান্ত ধারণার সমাহার যার মূলে নারীকে দমন এবং নারী দেহের উপর দখল, ভোগ ও বলাৎকারের অধিকার। এই সামাজিক ব্যাবস্থায় শ্বশুরালয়ে বধূ নির্যাতন, পরিবার বা গোষ্ঠীর অন্য পুরুষদের কর্তৃক নারীর উপর যৌন আক্রমণ, স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে মারধোর ও যৌন নির্যাতন সামাজিক – সাংস্কৃতিক – পারিবারিক স্বীকৃতি পেয়ে থাকে।
১১) জাত্যাভিমানঃ ভারতীয় সমাজে ধনী, জমির মালিক, প্রভাবশালী, উচ্চ বর্ণের প্রভুদের কর্তৃক গরীব, ভূমিহীন, অসহায়, নিম্ন বর্ণের নারীদের অপহরণ, যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ অত্যন্ত স্বাভাবিক ঘটনা যাকে রাষ্ট্রই অনেক ক্ষেত্রে সমর্থন জোগায়।
১২) নিরাপদ আবাসন এবং সামগ্রিক নিরাপত্তার অভাবঃ দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিকে গ্রাম ও শহরে ঝুপড়ি, কলোনি, টোলা, বস্তি, ঘিঞ্জি ঘরবাড়ি, আবাসনের মধ্যে বাস করতে হয়। পুরুষদের কাজে দীর্ঘ সময় বাইরে কাটাতে হয়, নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় বাস করে। অনেক ক্ষেত্রেই গৃহের নারীদেরও চাষ ও অন্যান্য কাজে বাড়ির বাইরে বেরোতে হয়। তখন নাবালিকা ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের দিক থেকে যৌন আক্রমণ ও ধর্ষণ সংঘটিত হয়। আবার হামেশাই গ্রামাঞ্চলের রাজনৈতিক মদতপুষ্ট গ্রামীণ ধনী ও সামন্ত প্রভুরা এবং তাদের গুণ্ডা বাহিনী, অন্যদিকে শহরে রাজনৈতিক মদতপুষ্ট সমাজবিরোধী, মাফিয়া ডন ও তাদের গুন্ডা বাহিনী নারী ও নাবালিকাদের যৌন আক্রমণ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। আবার কর্মস্থলে, ক্ষেতে, যাতায়াতের পথে, স্কুলে যাওয়ার পথে নারী ও নাবালিকারা ধর্ষিতা হয়।
১৩) উপযুক্ত বিনোদনের অভাবঃ সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষ, ছাত্র, কিশোর, যুবক দের কাছে বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়া, শরীর চর্চা, প্রকৃতি সংরক্ষণ, সমাজসেবা, বাদ্য, সঙ্গীত, নাটক চর্চা, ভ্রমণ, অ্যাডভেঞ্চার, নারী পুরুষ স্বাভাবিক মেলামেশা প্রভৃতির বিপরীতে অপশিক্ষার মাধ্যমে কেবলমাত্র যৌনগন্ধী আলোচনা, অপশব্দের ব্যাবহার, অশ্লীল কটূক্তি, বিকৃতকাম রসিকতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। নারীর উপর যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণকে পৌরুষের কাজ এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেওয়া হয় এবং তাদের জীবনে যৌনতাই হয়ে ওঠে একমাত্র বিনোদন। ক্ষমতাসীনদের মদতে অশুভ চক্র কিশোর বয়স থেকে মদ, মাদক, জুয়া, লটারি, গণিকালয়ে গমনের অভ্যাস ও সংস্কৃতি গড়ে তোলে। এর ফলে সমাজ জীবনে নারী ও শিশু যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ বৃদ্ধি পায়।
(নয়) শিশু ও নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণের কয়েকটি নির্দিষ্ট কারণঃ
১) পারিবারিক হিংসাঃ অর্থনৈতিক সমস্যা, যৌন অতৃপ্তি, পরকীয়া বা সন্দেহ, দাম্পত্য কলহ, সন্তান না হওয়া বা কন্যা সন্তান হওয়া প্রভৃতি কারণে পারিবারিক হিংসা সৃষ্টি হয় বা বৃদ্ধি পায়। আর এর প্রধান শিকার হয় পরিবারের নারী ও শিশুরা। এছাড়াও পরিবারের মধ্যে, যৌথ পরিবারের মধ্যে, আত্মীয়, শিক্ষক, সহ কর্মী, প্রতিবেশীদের মধ্যে যৌন লালসা ও / বা বিকৃতির কারণে নারী ও শিশুরা যৌন আক্রমণ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়।
২) লালন পালনের ত্রুটিঃ পিতামাতার বা একক মাতা বা পিতার দারিদ্র, অশিক্ষা, অসচেতনতা, অবহেলা, কর্ম ব্যাস্ততা প্রভৃতি কারণে সন্তানরা ঠিকমত নিরাপত্তা পায় না এবং / অথবা ঠিকমত লালিত পালিত হয়না। অরক্ষণীয় ও অবিন্যস্ত ঐ সমস্ত পরিবারের শিশু, নাবালিকা ও নারীরা সহজেই যৌন আক্রমণ এবং ধর্ষণের শিকার হয়। অন্যদিকে সঠিক অভিভাবক, শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবে ঐ পরিবারের শিশু, নাবালিকা ও যুবতীরা সহজেই পাচারকারী ও ধর্ষণকারীদের প্ররোচনা ও ফাঁদে পড়ে।
৩) পারিবারিক ভাঙ্গনঃ বাবা অথবা মায়ের কিংবা উভয়ের মৃত্যু, বাবা – মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ, রোজগারের কারণে বাবা বা মায়ের অন্যত্র গমন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিমারি, উৎখাত, যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক ও জাতি দাঙ্গা প্রভৃতি কারণে পরিবারগুলিতে ভাঙ্গন ঘটে অথবা পরিবারগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বহু নারী ও শিশু অভিভাবকহীন ও একাকী হয়ে পড়েন এবং সহজেই যৌন আক্রমণ, ধর্ষণ ও পাচারের শিকার হন।
৪) পুঁজি ও শ্রমের পরিযানঃ পুঁজির পরিযান পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে স্থানান্তরিত হওয়ায় কর্মসংস্থান ও রোজগারের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সহ পূর্ব ভারত থেকে গ্রাম ও শহরের পুরুষরা উজাড় হয়ে সেখানে চলে যাচ্ছেন। ফলে পরিবারের শিশু, নাবালিকা ও নারীরা অরক্ষণীয়া থাকছেন এবং প্রায়শই যৌন আক্রমণ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
৫) পরিযায়ী শ্রমিকঃ পরিযায়ী শ্রমিকরা কর্মসূত্রে পরিবার ছেড়ে দীর্ঘদিন বাইরে থাকেন। তাদের অনেকে জৈবিক প্রয়োজনে এবং সঙ্গদোষে গণিকালয়ে যাওয়া শুরু করেন। কেউ কেউ কর্মক্ষেত্রে বা অন্যত্র যৌন আক্রমণ ও ধর্ষণের মত অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে অল্পবয়সী ও নাবালকরা ঠিকাদার, সর্দার, সহ শ্রমিক, কর্মস্থলের মালিক, বাড়িওয়ালা প্রমুখের দ্বারাও যৌন আক্রমণ ও নিগ্রহের শিকার হন। এদের অনেকে আবার বহুগামী স্বভাব ও এইডস সহ যৌন রোগ নিয়ে গ্রামে ফিরে যৌন রোগ ছড়ান এবং পরকীয়া, যৌন আক্রমণ, শিশু যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ প্রভৃতি অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়েন।
৬) শিশু শ্রমিকঃ দারিদ্র ও অপরিকল্পিত পরিবারের অধিক সন্তান সংখ্যার জন্য যে সমস্ত শিশু, বালক ও কিশোরদের বিভিন্ন চায়ের দোকান, মিষ্টির দোকান, হোটেল, গ্যারাজ, অন্যের গৃহে কাজ করতে ও থাকতে হয় তারা প্রায়শই মালিক, সহ কর্মচারী, উপভোক্তা, পুলিশ প্রভৃতিদের দ্বারা যৌন আক্রমণ, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হন।
৭) একা – নারী, ছাত্রী, শ্রমিক, কর্মচারী প্রভৃতিঃ শিক্ষা ও কর্মসূত্রে বহু ছাত্রী এবং মহিলা শ্রমিক ও কর্মচারীদের একা হোস্টেল, মেস ইত্যাদিতে থাকতে ও কর্মস্থলে যাতায়াত করতে হয়। কর্মক্ষেত্রে, যাতায়াতের পথে বা আবাসস্থলে অনেকসময়েই তারা যৌন হেনস্থা, যৌন আক্রমণ ও ধর্ষণের শিকার হন।
৮) প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দাঙ্গা, যুদ্ধ, উন্নয়নের উচ্ছেদঃ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সাম্প্রদায়িক জাতিগত ইত্যাদি দাঙ্গা, যুদ্ধ, উন্নয়ন জনিত উচ্ছেদ প্রভৃতিতে প্রধানত দরিদ্র, শ্রমজীবী, দলিত, জনজাতি, প্রান্তিক পরিবার এবং তাদের নারী ও শিশুরা কবলিত হয়। দাঙ্গা, দেশভাগ ও যুদ্ধে আমাদের দেশ এবং অবিভক্ত বাংলা, পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ, গণহত্যা, গণধর্ষণ, অবর্ণনীয় অত্যাচার, নারীর উপর অকথ্য অত্যাচার, লুঠ, সম্পত্তি দখল, উচ্ছেদ, অপহরণ, বলপূর্বক ধরমান্তকরণ প্রভৃতির সাক্ষী। বর্তমান বাংলাদেশ ও মনিপুর দুটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
৯) সামরিক ঘাঁটিঃ সারা পৃথিবী জুড়েই যেখানে যেখানে দখলদার রাষ্ট্রের সেনারা গেছে বা স্থায়ী ঘাঁটি করে আছে সেখানে সেখানে নারী ও শিশুরা আক্রান্ত ও ধর্ষণের শিকার। সামরিক ঘাঁটিগুলির চারধারে গড়ে উঠেছে স্থায়ী গণিকালয়। দেশের আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী, আধা – সামরিক বাহিনী ও পুলিশি অভিযান এবং ঘাঁটি ও ক্যাম্প গুলি নিয়ে একই সমস্যা। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া সহ যেখানে যেখানে মার্কিন সেনা বাহিনী ছিল বা আছে তাদের বেলেল্লা আচরণ স্থানীয় সামাজিক – সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলাকে ভেঙে ফেলে বিশাল বিশাল এলাকা জুড়ে স্থায়ী গণিকালয় ও যৌন বিনোদনের কেন্দ্র গড়ে উঠেছে যেখানে অভাবী পরিবার থেকে আসা শিশু, নাবালিকা ও যুবতী নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত ও ধর্ষিত।
১০) রক্ষকই যেখানে ভক্ষকঃ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আইন রক্ষক পুলিশদের কর্তৃক জিজ্ঞাসাবাদ, নিরাপত্তা রক্ষা ইত্যাদির সময় কিংবা পুলিশ হেফাজত ও থানা লক আপে নারী নির্যাতিত ও ধর্ষিত। একইরকমভাবে জেল হেফাজতে কারারক্ষীদের দ্বারা। আবার আবাসিক বিদ্যালয়, অনাথাশ্রম, বোরস্টাল প্রভৃতিতে শিক্ষক, ওয়ার্ডেন, আধিকারিক, কর্মীদের দ্বারা প্রায়শই এই ঘটনা ঘটে। অনেক ধর্মীয় মঠ ও আশ্রম থেকেও এরকম অভিযোগ পাওয়া যায়।
১১) যৌন পর্যটনঃ পর্যটনের নামে তৃতীয় বিশ্বে যৌন ব্যাবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে এবং এই যৌন পর্যটনের মাধ্যমে সেই অঞ্চলের এবং পাচার হয়ে আসা নারী ও শিশুরা যৌন অত্যাচার ও ধর্ষণের শিকার। বিভিন্ন গণিকালয়ে ও ধনীদের গৃহে নারী পাচারে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ শীর্ষে। দেহ বিক্রির ব্যাবসায় ফরসা চামড়ার পাহাড়ি মেয়েদের চাহিদা থাকায় নেপালের গ্রামাঞ্চলের গরীব পরিবারের মেয়েদের দালালরা কিনে নিয়ে পশুদের মত দলে দলে গণিকালয়গুলিতে পাঠায়। পাঠায় মধ্য প্রাচ্য ও অনান্য দেশে।
১২) স্মার্ট ফোন ও পর্ণগ্রাফিঃ অত্যাধুনিক ইটি, আইটি, এআই প্রযুক্তির সাহায্যে ছোট স্মার্ট ফোনের সাহায্যে এখন দুনিয়ার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত যোগাযোগ, কথাবার্তা, ভিডিও কল, কনফারেন্সিং, তথ্য সংগ্রহ, স্টিল ও ভিডিও ছবি তোলা, স্ক্যান করা, আর্থিক আদান প্রদান, বিনোদন প্রভৃতি হাতের মুঠোয়। এবার এর সঙ্গে প্রবেশ নানারকম সাইবার প্রতারণা, তহবিল তছরুপ এবং পর্ণগ্রাফির। নানারকম আকর্ষক ভিডিও গেমস, বেটিং ইত্যাদি দিয়ে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাইকে আসক্ত করে তোলা হচ্ছে। এর সঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নানা অশ্লীল ছবি, ভিডিও, ব্লু ফিল্ম ও পর্ণগ্রাফি। পরবর্তী ধাপে ডার্ক ওয়েভে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরও বিকৃত ও বীভৎস সব পর্ণগ্রাফিতে। এইগুলি দেখায় যারা মজেছেন তাদের যে যৌন বিকার ও কামোন্মাদনা সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলির সঙ্গে তাদের চারপাশের বাস্তব পরিমণ্ডলের কোন মিল নেই। ফলে গৃহ ও পরিবারের মধ্যে ছাড়াও বাইরের বৃহত্তর সমাজে তারা মারাত্মক সব যৌন অপরাধ সংগঠিত করছে। শিশু থেকে বৃদ্ধা তাদের বিকারগ্রস্ত যৌন আক্রমণ, নির্যাতন, ধর্ষণ এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে।
১৩) সমাজ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণহীন অবগাহনঃ এর ফলে বহু নাবালক, নাবালিকা, নারী ও পুরুষ প্রতারণা, ভ্রান্ত সম্পর্ক, হনি ট্র্যাপ, ব্ল্যাক মেল প্রভৃতি নানারকম বিপদের সম্মুখীন। অনেকে না বুঝে অপরাধীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ব্যাবহ্রিত, নির্যাতিত, ধর্ষিত ও পাচার হয়। আবার সমাজ মাধ্যমে ক্রমাগত যৌন উত্তেজক বিষয়ক ছবি, ভিডিও ইত্যাদি দেখে অনেকে বিকারগ্রস্ত হয়ে যৌন অপরাধ ঘটিয়ে ফেলে।
১৪) অশ্লীল বিনোদন জগতঃ সংবাদপত্র থেকে রাস্তার বিলবোর্ড থেকে টিভি – সমাজ মাধ্যমের বিজ্ঞাপন, আইপিএল এর চিয়ার লিডার, টিভি সিরিয়াল, সিনেমা, ওটিটি সর্বত্র মাত্রাহীন অবাস্তব যৌনতা এবং নারীকে যৌন পুতুল হিসাবে দেখানো। এগুলির মুখ্য আকর্ষণ লাস্য ও যৌন আবেদনময়ী স্বল্পবসনা নায়িকা ও খল নায়িকা, তাদের কিছু উদ্দাম নাচা গানা এবং কয়েকটি শয্যা ও ধর্ষণের দৃশ্য। এর কারণেও সমাজ জীবনে নারীর প্রতি যৌন হিংসা, নির্যাতন ও ধর্ষণ বেড়ে চলে। রাষ্ট্র এগুলি নিয়ন্ত্রণ না করে মদত দেয়।
১৫) মাদকাসক্তিঃ বিভিন্ন ধরনের – তামাকজাত দ্রব্য (Tobacco products), মদ (Alcohol or Ethanol), গাঁজা (Opium), আফিং (Cannabis), ঘুমের ওষুধ (Sedatives), নিস্তেজ করার ওষুধ (Tranquilizers), সম্মোহন করার ওষুধ (Hypnotics), মরফিন (Morphine), হেরোইন (Heroine), পেথিডিন (Pethidine), ব্রাউন সুগার (Brown Sugar), বিকারকারী ওষুধ (Delirients), চেতনা হরণকারী ওষুধ (Psychodelics), বারবিটুরেট (Barbiturates), মেথাকুয়োলান (Methaqualone), কোকেন (Cocaine), এলএসডি (Lysergic Acid Diethylamide), উত্তেজক (Stimulants) প্রভৃতি পদার্থ ও ওষুধ ছাড়াও আধুনিক বিভিন্ন নেশা উদ্রেককারী কৃত্রিম রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতি মাদক গ্রহণ, রেভ পার্টি সংগঠন ইত্যাদির আবেশ, নেশা ও উত্তেজনায় নারীর উপর যৌন আক্রমণ, নির্যাতন ও ধর্ষণ বেড়ে চলে।
১৬) মানসিক সমস্যা, মানসিক রোগ ও যৌন বিকারঃ ধর্ষণকারীদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে তাদের একাংশ যেমন মদ ও মাদকে আসক্ত, তেমনই অনেকের নানাধরনের মনোবৈকল্য (Psychosis) রয়েছে। কারো মস্তিস্কে আঘাতজনিত শেখার অক্ষমতা (Learning Disability) রয়েছে। কারো রয়েছে জ্ঞানবুদ্ধিগত ত্রুটি (Cognitive Distortion)। চিকিৎসা ব্যাতিরেকে এরা সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে অক্ষম। এদের ধর্ষণ সম্পর্কে অপরাধবোধ অনুপস্থিত। যৌন কামনা উপস্থিত হলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়না। পশ্চাদপদ সমাজে এরকম বহু চিকিৎসাহীন মানসিক মনোবৈকল্যযুক্ত রোগী বিরাজমান। তাদের দ্বারা নারী ও শিশুদের উপর যৌন আক্রমণ, হিংসা, ধর্ষণ, এমনকি হত্যা ঘটে চলে।
৩০.১১.২০২৪