১.
প্রথম ছ’মাস বাচ্চা শুধুই বুকের দুধ খাবে। বাড়তি জল, চরণামৃত, মধু, তুলসী পাতার রস ইত্যাদি কিছুই না।
২.
হজমের ওষুধ, গ্রাইপ ওয়াটার, এনজাইম ইত্যাদি খাওয়ানোর কোনও বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই।
৩.
জন্মের ছ’মাস অর্থাৎ ১৮০ দিন পেরিয়ে ঠিক ১৮১ নম্বর দিন থেকে বাচ্চা বাইরের খাবার খেতে শুরু করবে। অন্নপ্রাশন, হরিনাম ও অন্যান্য ধর্মীয় কিংবা চিরাচরিত প্রথার জন্য দেরি করলে বাচ্চার ক্ষতি।
৪.
বাইরের খাবার মানে বাড়ির খাবার। কোনও *রেল্যাক, *রলিক্স, *মপ্লান নয়। চাল-ডাল ঘেঁটে খাওয়ানো শুরু করুন। পরে ধীরে ধীরে সব্জি যোগ করুন।
৫.
কোনও নতুন খাবার শুরু হ’লে পরপর দু-তিনদিন দিয়ে দেখুন বাচ্চার কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা। এককালীন একটিই নতুন খাবার শুরু করবেন। নইলে সমস্যা হ’লে সেটা ঠিক কোন খাবারে, বুঝতে পারবেন না।
৬.
খাবারের শক্তিমূল্য বাড়ানোর জন্য ঘি বা তেল মেশানো যেতে পারে। অঙ্কুরিত ছোলা শুকিয়ে, গুঁড়িয়ে পাউডার বানিয়ে খাবারের সাথে দেওয়া যেতে পারে।
৭.
সুস্থ স্বাভাবিক বাচ্চার বাড়ির খাবারের বাইরে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়তি মাল্টি-ভিটামিন প্রয়োজন হয় না। খিদে বাড়ানোর ওষুধ বলে যা যা পাওয়া যায় সেগুলো সাধারণত অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর।
৮.
পাকা কলা, টকফল খেয়ে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে যাওয়ার কোনও প্রমাণ নেই। বরং, টাটকা ফলের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ করে। রাতে কলা খেয়ে ঠান্ডা লাগে না। পাকা কলা আগুনে শেঁকে খাওয়ানো যুক্তিহীন।
৯.
নরম করে বানানো খিচুড়ি বাচ্চাকে দিন। ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে খাওয়াবেন না। খাওয়ানোর আগে বাচ্চাকে খালিপেটে থাকতে দিন। খিদে পেলে খাওয়ান।
১০.
আনারস খাইয়ে কৃমি দূর হওয়া কিংবা রসুন খাইয়ে সর্দিকাশি সারানোর কোনও প্রমাণ নেই।
১১.
মোটামুটিভাবে ৮ মাস বয়স থেকে ডিম, মাছ ইত্যাদি প্রাণীজ প্রোটিন শুরু করা যায়। ১ বছর বয়সে বাচ্চা বাড়ির বড়োদের মতো খাবার খেতে পারে।
১২.
জল, শাকসব্জী, ফলমূল, ফাইবার জাতীয় খাবারের অভাবে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপসঃ
ক। বাচ্চাকে সুস্থ রাখার প্রাথমিক শর্ত চিকিৎসক বা উপযুক্ত অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ মতো চলা। পাড়ার ‘উমুকের মা’র ভিত্তিহীন পরামর্শ থেকে দূরে থাকুন।
খ। প্রতিটি বাচ্চাই অনন্য। কাজেই পাশের বাড়ির বাচ্চা কতটা খায়, তার কত ওজন.. সেসব ভেবে নিজের মাথাকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলার দরকার নেই।
গ। কম ওজনের বাচ্চা বা অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু অতিরিক্ত ওষুধ দরকার হ’তে পারে। সেগুলো আপনার ডাক্তার বলে দেবেন।
ঘ। কিছু কিছু বিরল ক্ষেত্রে প্রথম ছ’মাসের মধ্যেই বাইরের দুধ প্রয়োজন হ’তে পারে। সেক্ষেত্রে অন্তত ৫০০ বার ভেবে এবং বুঝে নেবেন বাইরের দুধটা সত্যিই প্রয়োজন আছে কিনা। উপযুক্ত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বাইরের দুধ শুরু করবেন না।
বি.দ্রঃ কিছু সাধারণ সমস্যা ও কিছু চলতি মিথের কথা বললাম। এর বাইরেও প্রচুর কিছু জানার ও বোঝার থাকে। আপনার বাচ্চার চিকিৎসকের ওপর ভরসা রাখুন।
বুকের দুধটা নার্সিংহোমে প্রথম দিন থেকেই শুরু করতে হবে। সুস্থ পরিণত বাচ্চা জন্মের আধঘন্টার মধ্যে বুকের দুধ শুরু করতে পারে। প্রথম দুএকদিন দুধ খুব কম আসবে, হলুদ কলোস্ট্রাম, অধিকাংশ নার্সিংহোমেই সেটি না খাইয়ে কৌটার দুধ ধরায়, বাচ্চার পেট ভরে গেলে বাচ্চা দুধ টানেনা তাই দুধ ভালো আসেনা। আর বাড়ির লোক মনের সুখে কৌটার দুধ খাইয়ে যায়।