পরিপাক তন্ত্রের সমস্যাঃ
এমনিতেই বাঙালিদের মধ্যে পেটের রোগে ভোগেন না, এমন ব্যক্তি বিরল। ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে এই পেটের সমস্যা আরও অনেক বেশি দেখা যায়।
ডায়াবেটিসে পেটের সমস্যার মূল কারণ অটোনোমিক নিউরোপ্যাথি। আগের পর্বে এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ডায়াবেটিস রোগীদের পাকস্থলীতে খাদ্য অনেক বেশি সময় জমে থাকে। একে বলে গাস্ট্রোপারেসিস। এছাড়াও ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদ্রান্ত্রের নড়াচড়া বা মটিলিটির সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদী ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে নিম্ন লিখিত সমস্যাগুলি দেখা যায়।
১. খাবার অনিচ্ছা।
২. বমি ভাব ও বমি হওয়া।
৩. অল্প খেলেই পেট ভরে যাওয়া।
৪. পেট ফেঁপে থাকা।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য
৬. ডাইরিয়া ইত্যাদি।
রেচন ও জনন তন্ত্রের সমস্যাঃ
এরও মূল কারণ ডায়াবেটিস থেকে হওয়া অটোনোমিক নিউরোপ্যাথি। রেচন ও জনন তন্ত্র আক্রান্ত হলে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি দেখা যেতে পারে।
১. মূত্র ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
২. অল্প মূত্র জমলেই প্রস্রাব করতে বাধ্য হওয়া।
৩. হাঁচি, কাশির সাথে বা এমনিতেও হঠাই করে কিছুটা মূত্র বেরিয়ে যাওয়া। মূলত মহিলাদের ক্ষেত্রে হয়।
৪. বারবার রেচন নালীর সংক্রমণ। এটিও মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি হয়।
৫. পুরুষাঙ্গ দৃঢ় না হওয়া।
৬. বীর্যপাত স্বাভাবিক পথে না হয়ে উল্টোদিকে হওয়া (রেট্রোগেড ইজাকুলেশন)। এক্ষেত্রে বীর্য বাইরে আসার বদলে মূত্র থলির মধ্যে চলে যায় এবং মূত্র ত্যাগের সময় মূত্রের সাথে মিশে বাইরে আসে।
৭. মহিলাদের ক্ষেত্রে যৌন ইচ্ছা কমে যায়।
৮. যোনি পথ অত্যধিক শুষ্ক হয়ে যায়।
চিকিৎসাঃ
প্রথমেই আমাদের নজর দেওয়া উচিৎ রক্তের গ্লুকোজ স্বাভাবিক রাখার জন্য। তাতে এইসব সমস্যাগুলির সম্পূর্ণ সমাধান না হলেও বেশ কিছুটা উন্নতি হয়।
পরিপাক তন্ত্রের সমস্যার সমাধানে মুঠো মুঠো গ্যাসের ওষুধ না খাওয়াই ভালো। অনেক সময় গ্যাসের ওষুধগুলি সাময়িক ভাবে স্বস্তি দিলেও দীর্ঘ মেয়াদি ভাবে খেলে ভালোর থেকে খারাপ বেশি করে। গ্যাসের ওষুধের বিপদ আপদ নিয়ে এই পোর্টালে আমার একটি লেখা আছে। উৎসাহী ব্যক্তিরা পড়ে দেখতে পারেন।
এছাড়াও একবারে বেশি খাবার না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খেলে রোগীর অসুবিধা একটু কমে। খাবার সুসিদ্ধ ও নরম হলে পাকস্থলীতে দীর্ঘক্ষণ জমে থাকে না। খাদ্যে ফ্যাট কম থাকলেও রোগীর উপসর্গ কম হয়।
কিছু ওষুধ দ্বারা (যেমন, মেটোক্লোপ্রামাইড, ডোমপেরিডন) পাকস্থলী খালি করার গতিবেগ বাড়ানো যায়। যার ফলে পেট ফেঁপে থাকা ও খিদে না হওয়ার সমস্যা কিছুটা কমে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে ইসবগুল ব্যবহার করা যেতে পারে। ইসবগুল শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাই দূর করে না। এটি আমাদের ক্ষুদ্রান্তে গ্লুকোজের শোষণ ক্রিয়া কমায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসে ডাইরিয়া হলে সাধারণত এন্টিবায়োটিকের কোনও দরকার হয়না। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষুদ্রান্ত্রে ও বৃহদান্ত্রে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যায় (ব্যাকটেরিয়াল ওভার গ্রোথ)। তাদের ক্ষেত্রে অনেকসময় এন্টিবায়োটিকের দরকার হয়।
মূত্র ত্যাগের সমস্যা থাকলে রোগীকে মূত্র জমিয়ে না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁকে বলা হয় সম্ভব হলে অল্প বেগ এলেই মূত্র ত্যাগ করতে। কিছু ওষুধ মূত্র থলির মূত্র ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে সেসব ওষুধ কখনোই চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিৎ নয়।
পুরুষাঙ্গ দৃঢ় করার ওষুধেরও (সিল্ডেনাফিল) অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। তাছাড়া বিভিন্ন ওষুধের সাথে এর নানারকম বিক্রিয়া আছে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ডায়াবেটিস রোগীদের এই জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা উচিৎ নয়।
মহিলারা যোনির শুষ্কতা দূর করার জন্য লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন। যোনির কোনো রকম সংক্রমণ থাকলে তারও চিকিৎসা করা উচিৎ।