সেটা ১৯৯০ সালের শেষ দিক। ডিসেকশন, অষ্টিওলজি, এম্ব্রায়োলজি নিয়ে অ্যানাটমি সাবজেক্টে একেবারে ল্যাজেগোবরে অবস্থা। অথচ ফার্স্ট এমবিবিএস পরীক্ষা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। এমন সময় মেঘ না চাইতেই জল! শুরু হল প্রফেসর (ডাঃ) সমর মিত্রের স্পেশ্যাল ক্লাস। স্যার ততদিনে রিটায়ার করে মেডিক্যাল কলেজে এমেরিটাস প্রফেসর। মাঝে মাঝে মেডিক্যাল কলেজের অ্যানাটমি লেকচার থিয়েটারে আমাদের ক্লাস নিতেন। অন্য কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরাও ভীড় করে আসত সেই ক্লাসে। ফলতঃ, প্রায়শঃই আমাদের লেকচার থিয়েটারের মেঝেতে বসতে হত।
ভালো ছবি আঁকা অ্যানাটমি পড়া ও পড়ানোর এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ক্লাসে প্রফেসর মিত্র লিখতেন এবং ছবি আঁকতেন পাশাপাশি দুটো ব্ল্যাক বোর্ড জুড়ে। নার্ভ, শিরা, ধমনী, পেশী, লিগামেন্ট, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, ভিসেরা, পেরিটোনিয়াম-এর ছবি। এক-একটা স্তর ধরে ধরে সহজ করে বোঝাতেন।
স্যারের তখন বয়স হয়েছে অনেক। পড়াতে পড়াতে মাঝে মাঝে কাশতেন। স্যারের ড্রাইভার ফ্লাস্কে গরম জল নিয়ে আসত। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে তিনি গরম জল খেতেন। তাঁর বিশেষত্ব ছিল শ্বেতশুভ্র পোষাক- শার্ট থেকে জুতো সবই সাদা।
গ্রে’স অ্যানাটমি,কানিংহ্যাম ইত্যাদি সাহেবী বই ছাড়া প্রফেসর সমর মিত্র, বি ডি চৌরাশিয়া, ইন্দরবীর সিং (এম্ব্রায়োলজি) এবং প্রফেসর অসীম কুমার দত্ত (এ কে ডি)-র বই তখন কলকাতার ডাক্তারির ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ত। এদের মধ্যে সমর মিত্রের বই ছিল তাঁর লেকচারের মতই সহজ-সরল অথচ ভীষণ কার্যকরী। অ্যানাটমি-র মত নীরস এবং দুরূহ বিষয়কে তিনি করে দিয়েছিলেন অত্যন্ত আকর্ষনীয়। তাঁর বই, তাঁর কয়েকটি ক্লাস এবং অন্যান্য শিক্ষক দের (বিশেষতঃ প্রফেসর পি কে সেন-এর) ক্লাস করে অ্যানাটমি-র বৈতরণী পার হয়েছি।
তাই আজ শিক্ষক দিবসে অ্যানাটমি-র কিংবদন্তী প্রফেসর সমর মিত্র-কে জানাই শতকোটি প্রণাম।
৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩ শিক্ষক দিবসে লেখা।