বুকে ব্যাজটা রোজ পরেন? রোজ? কার জন্য, নিজের জন্য? নিজের সন্তানের জন্য? আরো বেশী করে মানুষের কাছে এই খবর পৌঁছে দেবার জন্য, বহু মানুষ, আমরা এখনও হাল ছাড়িনি। নাকি কিছু মানুষের কাছে এই ব্যাজ অস্বস্তিকর, তাই?
আমি কেন রোজ এই ব্যাজ পরি জানি না। তবে সব কটা কারণ বোধহয়, মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। যখন এই ব্যাজটা পরি নিজেকে খুব ‘সেফ’ অনুভব করি। নিজের ভেতরে একটা আলাদা জোর পাই। মনে হয় আমি একা নই।
আজ, এই খানিকক্ষণ আগে, ছেলের মাধ্যমিক পরীক্ষার সিট পড়েছে যে স্কুলে সেই স্কুলে গিয়েছিলাম। আজ মাধ্যমিকের প্রথমদিন, তাই অধিকাংশ মা-বাবা, ছাত্ররা নির্ধারিত সময়ের আগে আগেই চলে এসেছে। আমি ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছি। মা বাবাদের আলোচনা শুনছি। সকলেই ছেলেদের জীবনের প্রথম পরীক্ষার জন্য চিন্তিত। পাশেই তৃণমূলের ৯২ ওয়ার্ডের সমর্থকরা দাঁড়িয়ে জল দিচ্ছে ছাত্রদের। চারিদিক থেকে ছাত্ররা সব একে ভেতরে ঢুকছে। হঠাৎই আমার দিকে নজর পড়তেই তৃণমূলের সমর্থকদের রে রে শুরু হল। কেন পড়েছি, কি দরকার, আমার সাথে কেউ নেই, ‘আমরা’ নাটক করছি, আমি কেন সরে যাচ্ছি না, আমি কেন ওখানে দাঁড়িয়ে আছি – নানান প্রশ্ন। এবং আমি কোন স্লোগান দেইনি। কোন প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়াইনি। কিছুই বলিনি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। বারবার সরে যেতে বলার পরেও সরিনি। দু এক জন আবার হুমকি দিল, গায়ে হাত দেবার। ভাবছিলাম, কিছু না করেই, এঁদের কী সাংঘাতিক অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি আমি। আমাকে সরাতে না পেরে, খানিকক্ষণের মধ্যেই নিজেরাই বরং সরে গেল। আমি স্মিত মুখে হাসছিলাম। মুখে কোন জবাব না দিয়েই। প্রায় সকলকেই অবজ্ঞা করে। আমাকে যে প্রশ্নগুলো করছিল, তার মধ্যেই উত্তর ছিল। ওরা উত্তর পেয়ে গেছিল। ওরা অস্বস্তিতে ভুগছে। ওরা জানে ওরা ভুল। আমি ঠিক। তা না হলে, কিছু না করার পরেও, ওরা মারার কথা বলে? মারার সাহস ছিল না। কেবল ভয় দেখাতে চেয়েছিল। পারেনি। হেরে গিয়েছিল।
তৃণমূলের লোক গুলোকে দেখে খুব করুণা হল। করুণা। রাগ নয়। করুণা। আমি আজ দুপুরেও ছেলেকে আনতে যাবো। রোজ যাবো, ছেলের সাথে। আমি ওদের অস্বস্তির কারণ হয়েই দাঁড়িয়ে থাকবো। রোজ।
দারুণ… কখনো কখনো নীরব থেকেও দৃঢ় প্রতিবাদ করা যায়.. আর সেটাই আপনি করে দেখিয়ে দিলেন।
ভালো থাকবেন..
হোক হোক হোক প্রতিবাদ