আমি তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় পাল। একজন সাংবাদিক ও ব্লগার। মাস দুয়েক আগে মা হয়েছি। নতুন মা ভুলভ্রান্তি ও অনেক হচ্ছে। নতুন ভূমিকায় মানিয়ে নিতেও সময় লাগছে। সন্তানের জন্মের পরেই মা হিসাবে আমারও জন্ম হয়েছে। তাই প্রশিক্ষণ পর্ব চলছে।
“মা হলে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়।” কিংবা “মায়েরা সব পারে।” এভাবেই সদ্যোজাত “মা”-কে অধিকাংশ সময় মাতৃত্বের পাঠ দেওয়া হয়। সন্তানকে আপোষহীন ভালোবাসার পরিবর্তে আপোষের সঙ্গে ভালোবাসার পাঠ শেখানোই যেন রীতি।
হয়তো আমার মতো এদেশের ৯০ শতাংশ মা এই কথাগুলো শোনেন। হয়তো বললাম কারণ, আমাদের দেশে সন্তান প্রসব পরবর্তী মায়ের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় কোনোও কাজ নেই। তাই তাদের কতটা কী ধরনের সমস্যা হয়, সে সম্পর্কে বিশেষ তথ্যও নেই।
কী অসম্ভব কষ্ট সহ্য করে একজন মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়, সেটা একজন মা ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারবে না। কারণ, “কোই না সমঝে পীড়া পরাই।” সন্তান মায়ের কাছে প্রাণাধিক প্রিয় হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু রাতারাতি তো একটা মানুষ সুপারম্যান হতে উঠতে পারে না। পিছনে লাল চাদর নিয়ে উড়ে যেতেও পারে না।তার নিজস্ব চাহিদা থেকে যায়। খিদে, ঘুম, ভাল-মন্দ লাগা নিয়েই সে মা হয়। মাতৃত্বের দায়িত্ব পালন করে।
যদিও মায়ের উপর অতিমানবিক প্রত্যাশা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
তবে, এ দেশে মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের অযত্ন শুরু হয় হাসপাতাল থেকেই। হাসপাতালে প্রসব পরবর্তী যত্নের ও মায়ের দায়িত্ব পালনের বৈজ্ঞানিক পাঠ শুরু করা দরকার। কিন্তু সেখানে দায়িত্বরত হাসপাতাল কর্মী নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে মায়ের স্যানিটরি ন্যাপকিন বদলানোর কথাও ভুলে যান। সিজারের কয়েক ঘন্টা পরেই আমার কোমরের নীচের অংশের সাড়া পাই। স্বাভাবিক ভাবেই অপারেশন পরবর্তী যন্ত্রণা অনুভব করি। কর্তব্যরত নার্সকে বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, মা হয়েছেন, এটুকু ভোগ করুন। পা নাড়াতে পারবেন না। সারারাত পায়ের যন্ত্রণায় কাতারে থাকি। সকালে আমাকে বসাতে গিয়ে আরেক শিফ্টের সিনিয়র নার্স খেয়াল করেন, সিজারের পরে আমার স্যানিটরি ন্যাপকিন ও বদলানো হয়নি। জুনিয়র কর্মীকে ধমক দিলে তাঁর অজুহাত হয়, ‘মিষ্টি’ বাচ্চাকে সামালাতে গিয়ে খেয়াল ছিল না। তাঁর কথায়, মা হওয়ার আনন্দে একরাতের এই ‘ছোট্ট’ ভোগান্তি কিছুই নয়।
এটাই এদেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রসব পরবর্তী চিকিৎসার ছবি। যেখানে শারীরিক স্বাস্থ্যের দেখভালের এই অবস্থা, সেখানে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি কতখানি তা প্রশ্নাতীত। বারবার মা শারীরিক কষ্টের কথা জানালে, নার্স থেকে স্বাস্থ্য কর্মী সকলের কথা- কষ্ট সহ্য করতে হবে, মা হয়েছো না! বারবার এটুক সহ্য করতে হয়-র মতো কথাগুলো আসলে অসম্ভব মানসিক চাপ তৈরি করে। মনে হয়, আমি যন্ত্রণার কথা বলে অন্যায় করছি। আমি হয়তো ভালো মা হব না, তাই এই শারীরিক কষ্ট উপলব্ধি হচ্ছে। আসলে এই ভাবনা বিশ্বাস করাতে পারলেই সব অব্যাবস্থা সহজেই নজর এড়ানো যাবে।
হাসপাতাল নয়, অনেক সময়, নতুন মায়েদের আশপাশের মানুষের আচরণও একইরকম হয়। মা কেমন আছে, সেই জিজ্ঞাসা টুকুও অনেক সময় করার কথা ভুলে যান তাঁরা।
এদেশে “ভালো” মা মানে ত্যাগের মূর্তি। মা সাজগোজ করবে! কাজ করবে! সন্তান প্রতিপালন ছাড়াও তার অন্য জগৎ থাকবে এ যেন ভয়ঙ্কর এক অন্যায়। নতুন মায়ের আত্মীয় পরিজন থেকে বন্ধু, সকলেই নিদান, এবার সব ভুলে সন্তান পালন করাই একমাত্র জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া কর্তব্য। আর যারা এই ধরনের মন্তব্য করেন, অধিকাংশ সময় দেখা যায়, সেই শিশুকে বড় করার পিছনে তাদের কোনোও ভূমিকাই থাকে না। বারংবার মাকে শোনানো হয়, বাচ্চাকে ভালো মানুষ গড়ার একমাত্র হওয়ার দায়িত্ব মায়ের। অর্থাৎ ভবিষ্যতে নবজাতক কোনো কুকর্ম করলে অভিযোগের আঙুল উঠবে মায়ের দিকেই। এই ধরনের কথাগুলো কী অসম্ভব মানসিক চাপ তৈরি করে সেটা কী আদৌও তাঁরা বোঝেন!! সব দায় মায়ের! তাহলে পরিবারের অন্যান্যদের দায়িত্ব কী!!
জীবন তো হিন্দি ছবির প্লট নয়। আর সব মা নিরুপা রায় নয়। হতে ইচ্ছুক ও নয়। সন্তান প্রতিপালন মানেই নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করাও নয়। নিজের ভালো না থাকলে, আমি মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ না থাকলে কি সুস্থ ভাবে আমার সন্তানকে বড় করতে পারবো!! শুধু প্রত্যাশার পারদ চাপিয়ে দিলেই কি মা তৈরি হয়ে যাবে!
এদেশে নিরুপা রায়ের মতো মায়ের ধারণা ভেঙে ঠিকমতো প্রসব পরবর্তী চিকিৎসায় জোর দেওয়া জরুরি। বিশেষত, মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে আরও একটু গুরুত্ব দেওয়া ও সচেতন হওয়া দরকার।
তানিয়া তোর লেখাটা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো রে।। খুব খুব সত্যি কথা বলেছিস।। অনেক কিছু জানলাম আর শিখলাম ও তোর লেখাটা থেকে।। সবাই যেন এভাবেই ভাবতে পারে আর ভেবে সেটা যেনো কাজেও লাগাতে পারে সেই আশাই রাখবো।।
খুব ভালো লেখা। একজন শরীর ও মনোবিজ্ঞান সচেতন মানুষের এ লেখা। এইভাবেই প্রতিবাদ জারি রেখো সব জায়গায়। অনেক ধন্যবাদ।
Like!! Great article post.Really thank you! Really Cool.
A big thank you for your article.
A big thank you for your article.
I am regular visitor, how are you everybody? This article posted at this web site is in fact pleasant.