৬ই জুন, ২০২০
গঙ্গাসাগরে মনস্কামনা পূর্তির জন্য সন্তান বিসর্জনের সেই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের “দেবতার গ্রাস” পড়েন নি এমন শিক্ষিত বাঙালি বোধ হয় নেই ।
মৈত্র মহাশয় বাগবাজার ঘাট থেকে বহু পরিজন নিয়ে গঙ্গাসাগর যাত্রা করেছিলেন, আর ফেরেন নি। তখনকার সেই যাত্রা ছিল ভয়ঙ্কর ও বিপদ সংকুল। তাই প্রবাদ শুনি “সব তীর্থ বারবার, গঙ্গা সাগর একবার”।
আমফান বিধস্ত দক্ষিণ বঙ্গে আমরা মেডিক্যাল টিম নিয়ে এসেছি সাগর দ্বীপে। আমরা মানে ডা দেবার্জুন, ডা মৃন্ময়, ডা অর্ক, শিখা, অর্পিতা ও এই অধম। সঙ্গে কোয়ারেন্টাইন ছাত্র-যুব-নেটওয়ার্ক=এর সংগঠক পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার মন্মথ। মূল যোগাযোগগুলি ওরই।
লট নম্বর আট থেকে পোর্ট ট্রাস্ট-এর জলযানে কচুবেড়িয়া। সেখান থেকে গাড়িতে সাগরে পোর্টের সুসজ্জিত বাংলো।
আজ সকালে প্রথম ক্যাম্প হলো রুদ্র নগরে। সহযোগিতায় তপস্যা ও তার স্থানীয় সংগঠক প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক পরিতোষবাবু। ৯০ জন রোগী দেখা হলো ।
বিকেলে সকালের মতোই দুটি ম্যাজিক গাড়ি বোঝাই করে ওষুধ নিয়ে, দুটি দলে ভাগ হয়ে মৃত্যুঞ্জয় নগর ও বঙ্কিম নগর। দুটি ক্যাম্পেই ৮০/৯০ জন রোগী। পেটের অসুখ (আইলার মতো) প্রায় নেই। বহু দীর্ঘকালীন (ক্রনিক) রোগী। উচ্চ রক্তচাপের রোগী অনেক। তাছাড়া সারা দেহে যন্ত্রণা, উদ্বেগ, বুক ধড়ফড় (? পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার), নানাবিধ চামড়ার অসুখ, কোমরে ব্যাথা ইত্যাদি। আর একটা বিরাট রোগ আছে, যাকে বলা যেতে পারে সকল রোগের ধাত্রী। দারিদ্র।
দ্বীপের প্রধান অর্থকরী ফসল পানের বারোজগুলি প্রায় সবই শুয়ে পড়েছে। বিপুল ক্ষতি। মুড়িগঙ্গার বাঁধ ভেঙে অবশ্য নোনা জলে ভেসে যায়নি সুন্দরবনের অন্য অঞ্চলগুলোর মতো। ফ্লাড সেন্টারে আটকে আছেন হাজার পাঁচেক মানুষ। প্রশাসন মহিলাদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মারফত রান্না করা খাবার দিচ্ছেন। এছাড়া তিনহাজার পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে। তাঁদের নিয়ে দারুন করোনা উদ্বেগ।
কাল সকালে ক্যাম্প হবে এনজিওয়ান এলাকা বা মুড়িগঙ্গার পাশের গ্রামে। আনুমানিক রোগী ১৫০ জন।
একটার মধ্যে শেষ করে আবার পোর্ট ট্রাস্টের লঞ্চ।
আর সাগরের মানুষদের জন্য ?
“শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা”।