ডাক্তার শব্দটার একটা মজা হলো পেশেন্ট ভালো করার আনন্দটা কখনোই যায় না। এখন বাংলায়, আর দেশেও, ডাক্তার বাড়ছে হু হু করে। সেরকম রেটেই কমছে ডাক্তারের ‘সম্মান’। যতোই গাড়িতে, বাড়িতে, কপালে স্টিকার চিটিয়ে, সবখানে অর্জিত প্রিফিক্সটি বসিয়ে ডাক্তাররা নিজের মান বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকুক, সাপ্লাই-ডিমান্ডের নিয়ম অনুসারে এবং আরো অনেক কারণে ডাক্তারের ‘সম্মান’ কমছেই। ওই হাসপাতাল চত্বরের মধ্যেই লোকজন যেটুকু সম্মান দেয়, আর পেশেন্টরা নিতান্তই না দিলে যদি ভালো করে ট্রিটমেন্ট না করে সেই ভয়ে যেটুকু দেয়, তার বাইরে কিছু নেই। আগেকার দিনে (খুব বেশি আগেও নয়) লোকে ডাক্তারদের দুটো জিনিসই দেখতে পেত — এক সম্মান, আর দুই টাকা। এই দ্বিতীয় ব্যাপারটাও ধীরে ধীরে, স্লোলি বাট স্টেডিলি, কমছে, এটা হেল্থ সিস্টেমটার সঙ্গে পরিচিত মানুষ মাত্রেই জানেন। কর্পোরেটের টাকা বাড়ছে, ব্যক্তি মানুষের টাকা কমছে। যেভাবে সবকিছু চলছে, আগামী ১০ বছরে ডাক্তারি পেশাটা সবদিক দিয়েই আজকালের আইটি চাকরির মতো হয়ে যাবে (বেসিক্যালি, অনেকক্ষেত্রে হয়ে গেছে অলরেডি)। এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে কমছে ডাক্তারের এবং ডাক্তারির স্বাধীনতা। কর্পোরেটের দাসত্ব, কোর্টের+কনজিউমার কোর্টের চোখরাঙানি, লোকাল নেতার গুণ্ডাগিরি, ওষুধ দোকান থেকে কপাকপ ওষুধ খাওয়া জনগণ, আয়ুর্বেদের নামে স্টেরয়েড খাওয়ানো — সবমিলিয়ে বই মেনে, নিয়ম মেনে, প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা করার সুযোগ ভারতে যথেষ্ট কম বললেই চলে। এরপরে আজ ধর্ষণ, কাল হুমকি, পরশু মাথা ফাটিয়ে দেওয়া, তরশু ট্রান্সফার — এসব তো আছেই। সিস্টেমের মুখ হবে ডাক্তার, টাকা নেওয়া হবে তার মুখ দেখিয়ে, মানুষ ভাববে ডাক্তারটাই হেড কসাই, কিন্তু ভেতরের ঘরে কর্পোরেটের মালিক, ড্রাগ কন্ট্রোলার, আর সরকার মিলে ফিচফিচ করে হাসবে।
কিন্তু, এতসবের পরেও পেশেন্ট সুস্থ করার যে আনন্দ, সেটা ম্লান করে দেওয়া এখনও মুশকিল। এখনও যে পেশেন্ট ওষুধ নিয়ম মেনে খেয়ে, ওষুধের বাইরের জীবনেও পরিবর্তন এনে রোগ সারিয়ে ফেলে, জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটিয়ে ফেলে, তার চোখের দিকে তাকিয়ে মনটা বড্ড ভালো হয়ে যায়। রোগীর রোগ না সারলে নিয়ম মেনে, নিয়মের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করে, হঠাৎ চান্স নিয়ে রোগ সারানোর চেষ্টা করতে বেশ ভালো লাগে। যেন রহস্য গল্প, শেষ দেখতে হবে, অপরাধীকে ধরতে হবে, তবেই না ফেলুদার মতো পোস্ট-কেস কনফারেন্স করতে মজা! যেন ক্রিকেট ম্যাচ, এক ব্যাটার আউট হয়ে গেলে মাঠ ছেড়ে না দিয়ে আরেকজনকে পাঠাতে হবে। এটুকু পার্সোনাল চ্যালেঞ্জের জন্যই এই পেশাটা এতোটা ইন্টারেস্টিং এখনো। রোগীর পাশ ছেড়ে যাওয়া চলবে না। রোগী আর ডাক্তার পাশাপাশি একই জায়গায় এসে দাঁড়ালে হাজার রোগ ভয় পেয়ে ঘুরে চলে যায়। সে এক আলাদাই ফিলিং।
অনেকগুলো বাড়াবাড়ি সত্যি কথা বলে ফেললাম বলতে গিয়ে।
মোদ্দা কথাটা হলো, যেদিন থেকে রোগীর উন্নতিতে খুশি হবো না, সেদিন থেকে ডাক্তারি ছেড়ে দেওয়াই ভালো। 🙂
 
								 
											 
				









