প্রথমেই বলে নি আমি এ বিষয়ে কোন বিশেষজ্ঞ নই ও এ বিষয়ে লেখার জন্য যে জ্ঞান তা আমার নেই। কিন্তু এই সময়ে গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ওষুধ, ভ্যাকসিন নিয়ে যে হাহাকার করছেন মানুষ তার পরিপ্রেক্ষিতে এই লেখার অবতারণা। বোধ হয় এটা নিয়ে আমাদের ভাবার সময় এসেছে।
“Why waste a good crisis?” এর আক্ষরিক অর্থে না নিয়ে যদি বলা যায় ভারতের ওষুধশিল্পের সুযোগ ছিল এই সময় পৃথিবীর মানুষকে পরিষেবা দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পথ দেখানোর তাহলে বোধ হয় ভুল হবে না। অনেকেই জানি না ভারতবর্ষ ইতিমধ্যে pharmacy of the world হওয়ার ক্ষমতা রাখে। স্বাধীনতার পরের দশকগুলি ভারতীয় ওষুধশিল্পের উপস্থিতি যেখানে অনেক দুর্বল ছিল ও গোটা ওষুধের বাজার নিয়ন্ত্রণ করত বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখন সেখানে বিপরীত চিত্র। ভারতের ওষুধের বাজার বর্তমানে 37$ বিলিয়ন । আমাদের দেশ পৃথিবীর 20% জেনেরিক ওষুধ যোগান দেয়। পৃথিবীর অনেক দেশ চিকিৎসার জন্য আমাদের ওষুধের ওপর নির্ভর করে কারণ বিশ্বে আমরা অনেক সস্তায় সে ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি। কিন্তু, কিন্তু এই ওষুধ শিল্পের মূল উপদান API( active pharmaceutical ingredients) 70% আসে চীন থেকে। কেন এই অবস্থা হল? ভারতের শিল্পপতি রাও কি মনে করে চীনের চেয়ারম্যান তাদের চেয়ারম্যান নাকি তারা বামপন্থী হয়ে গেছেন। না আসুন দেখি কারণ কি?
API কি? যে কোন ওষুধের কাঙ্খিত উপশম দেয় যে উপাদান তাই এক্টিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ingredient। এছাড়া ওষুধে যে নিষ্ক্রিয় রাসায়নিক উপাদান থাকে যা API কে কাজ করতে সাহায্য করে তাকে বলে Excipients। যেমন ধরুন জনপ্রিয় crocin ওষুধে প্যারাসিটামল হল API যা জ্বর ও ব্যথার উপশম ঘটায়। API প্রস্তুতকারক প্রথমে ল্যাবরেটরিতে এই রাসায়নিক উপাদান তৈরি করে। তার উৎপাদক ডিপার্টমেন্ট বিপুল reactors ব্যবহার করে বিশাল পরিমাণে একে উৎপাদন করে। সাথে চলে গুণগত মানের পরীক্ষা যা নাহলে দেশ বিদেশের কোম্পানি নেবে না ও আর্থিক ক্ষতি হবে। 90 দশকের শুরুতে আমরা স্বনির্ভর ছিলাম API প্রোডাকশনে। কিন্তু চীন ধীরে ধীরে আমাদের এই ক্ষেত্র দখল করল ও আমাদের কোম্পানিগুলো তাদের সকল প্রোডাকশন বন্ধ করে দিল কারণ এটা কম লাভজনক ও কম আকর্ষণীয় তাই ভারতীয় ওষুধ শিল্প এর থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে ওই API আমদানি করে finished ফর্মুলাশন বিদেশে বিপণন ও রপ্তানি করে অনেক বেশি মুনাফা লাভ করল। তথ্য বলছে শুধু 2018-19 আর্থিক বর্ষে ভারত চীন থেকে $2.4 বিলিয়ন API ও ইন্টারমিডিয়েট আমদানি করেছে ও বিগত 4 বছরে আমাদের 50 % আমদানি বেড়েছে। চীন 40% কম দামে আমাদের API সরবরাহ করছে গুণমান বজায় রেখে। চীন কি ভাবে পারল? এখানেই আসে সরকারের মরিয়া আর্থিক ও প্রশাসনিক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা। আমাদের দেশের সরকার যখন মন্দির মসজিদ মূর্তি ক্লাবে সরকারের অর্থ ব্যয় করছে ওরা নীরবে এ কাজ করেছে যা তাদের বড় আর্থিক শক্তি হতে সাহায্য করেছে। চীন কম্যুনিস্ট কি নয় তা দেখবেন পন্ডিতরা কিন্তু আমাদের দেশ স্বনির্ভরতা হারাল তা সত্য। তাই চীনের aap বন্ধ হয়েছে বলে বন্ধুকে চীনের দালাল দেগে দিয়ে বাড়ি গিয়ে যে ওষুধটি খেলেন জানলেন না ওটা বেশি চৈনিক।
কিন্তু আমাদের এমন কি হওয়ার ছিল?
12 ই এপ্রিল 1901সাল পরাধীন ভারতের ঘোর অমানিশার মধ্যে এক যুগান্তকারী বিজ্ঞানী দেশকে আর্থিক ও ভেষজ শিল্পে স্বনির্ভর করার জন্য প্রতিষ্ঠা করলেন বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল এন্ড কেমিক্যাল লিমিটেড সংক্ষেপে BPCL। পরাধীন ভারতে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়কে কি অসাধ্য সাধন করতে হয়েছে তা জানতে অনুরোধ করব পড়ুন “ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র”। লেখক এ যুগের সেরা বাঙালী বিজ্ঞান লেখক ও রসায়নবিদ ডঃ শ্যামল চক্রবর্তী। সাথে পেলেন ডাঃ রাধাগোবিন্দ কর (যার নামে আর জি কর হসপিটাল), রাজশেখর বসু, অমূল্যচরণ বসু, ডাঃ নীল রতন সরকার প্রমুখ বিশিষ্ট মানুষদের।
এলোপ্যাথিক ওষুধ তৈরির জন্য এগিয়ে কলকাতার বটকৃষ্ণ পাল এন্ড কো ও N POWELL কোম্পানি বোম্বে। তারপর 1907 সালে বারোদায় তৈরি Alembic ফার্মাসিউটিক্যাল, zandu এল 1910, ক্যালকাটা chemical 1916, বেঙ্গল ইম্মুনিটি 1919 সালে স্বদেশিয়ানা র ব্রতে। cipla কোম্পানি এল 1935 সালে, দেজ মেডিকেল 1941 বা ইন্ডোকো 1947 সালে, IPCA 1949 এমন চলতে লাগল।
“To the people of India, whose representatives we are, we make an appeal to join us with faith and confidence in this great adventure. This is no time for petty and destructive criticism, no time for ill will or blaming others. We have to build the noble mansion of free India where all her children may dwell.” ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শ্রী জওহরলাল নেহেরুর স্বাধীনতার ভিশন ও ভাষণ পূরণ করতে এগিয়ে এল HAL (হিন্দুস্তান antibiotic লিমিটেড) যা WHO ও উনিসেফ এর সাহায্যে তৈরি হল যা উৎপাদন করল পেনিসিলিন, streptomycin, Gentamycin প্রমুখ ওষুধ যা আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত। HAL প্রথম বিজ্ঞানীদের সাহায্যে আবিষ্কার করল Hamycin একটি এন্টিফাঙ্গাল ড্রাগ ও Aureofungin গাছের এন্টিফাঙ্গাল। নাগপুর, কর্ণাটক ,মহারাষ্ট্র সর্বত্র তৈরি হল রাজ্যের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। 1961 সালে তৈরি হল এশিয়ার সবচেয়ে বড় সরকারি ওষুধ কোম্পানি IDPL। এছাড়াও অনেক সরকারি দেশি কোম্পানির দৌলতে বিদেশি বহুজাতিকদের দাপট শেষ হল ও দেশের মানুষ অনেক সস্তায় ওষুধ পেলেন। আমাদের দেশে তৈরি হল API।
আজ দেশের মাত্র 5 টি সরকারি ওষুধ শিল্পের মধ্যে সবাই বন্ধ বা বন্ধ হবার মুখে। সরকার নিজে নিজের সেরা সম্পদ তুলে দিলেন। তার পরিণতি আমরা দেখতে পাচ্ছি।
তাই আত্মনির্ভরশীল হতে গেলে দেশের পাব্লিক সেক্টর ইউনিটগুলোর পুনরুজ্জীবন ঘটিয়ে দেশের বেসরকারি ওষুধশিল্পের সাথে symbiotic সম্পর্ক তৈরি করে সেরা মেধার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণায় সাহায্য করে স্বাধীন স্বপ্নের ভারত তৈরি করা যাবে ও বিশ্বের বাকি দেশকে সাহায্য করা যাবে।
তথ্য:
1. Himani Chandna The print
2. পি কে ঘোষ
3. FMRAI news
4. শ্যামল চক্রবর্তী
5. বিবিধ পত্রিকা
খুব দরকারী,এই সময়ের উপযোগী এবং তথ্য দ্বারা সমৃদ্ধ একটি লেখা। ধন্যবাদ।
It’s a good post. Most important it”s conclusive part
Yes it is high time to reconstruct/ modernize public sector pharmaceuticals & it’s laboratories.,so that lndia can be independent in
THIS SECTOR-‘AS DESIRED BY OUR PRIME MINISTER.
thanks
কিন্তু এটা নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়?? ভোটে যেতর রাজনীতি ও শিল্পপতিদের কাছে নিজেদের ইজ্জত বেচে খাবে সব রাজনৈতিক দল ।দেশের কথা কেউ ভাবে না !!
ঠিক বলেছেন।