১৬ ই জানুয়ারি ২০২১ সালের প্রথমেই দেশের ১লক্ষ ১৮১ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনা গণটিকাকরণে অংশগ্রহণ করেছেন।
আশা, আনন্দের সাথে মিশে আছে সংশয়, অস্বচ্ছতা ও বিভ্রান্তি। দেশের প্রথম টিকা নিয়েছেন সাফাইকর্মী রমেশ কুমার। দিল্লির এইমস এ তাকে কোভাক্সিন দেওয়া হয়েছে। অনেক দেশের প্রধানমন্ত্রীর মত অবশ্য আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রথম টিকা নেওয়ার ঝুঁকি নেন নি। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও টিকা নেন নি। যদিও তাঁরা টিকার কার্যকরণ ও নিরাপত্তা নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন দেশবাসীকে।
অপরদিকে করোনার টিকাকরণ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে নরওয়ে। সেদেশে টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পর ২৩ জনের মৃত্যু সে দেশের সরকারকে ভাবতে বাধ্য করেছে। সেখানকার জনস্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছেন, যারা অত্যন্ত দুর্বল, শারীরিকভাবে সুস্থ নন, তাঁদের মধ্যে টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ভয়ানক হতে পারে। বয়স্ক মানুষদের জন্য এই টিকার কার্যকারিতা কম হতে পারে। ফাইজার ও bioNtech নরওয়ে এর স্বাস্থ্য দফতরের সাথে তদন্ত করছে। নরওয়ে ফাইজারের করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছে ৩৩ হাজার নাগরিকের ওপর।
ভারতে অক্সফোর্ডে তৈরি কোভিশিল্ড এর তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা বা ট্রাইল সম্পাদন হলেও ফল প্রকাশ হয় নি। কিন্তু ব্রিটেনে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে ও এর কার্যকারিতা সাফল্য ৭০%। অক্সফোর্ডের লাইসেন্স নিয়ে ভারতে এই কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরি করছে সিরাম ইনস্টিটিউট সংস্থা। কোভিশিল্ড হল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির ১২২২ ভ্যাকসিনের মত জীবন্ত ভাইরাসবাহকে তৈরি একটি ভাইরাস। শিম্পাঞ্জিকে সংক্রামিত করে এমন এক এডিনো ভাইরাসের ভিতরে করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের জিন ঢুকিয়ে এই ভ্যাকসিন তৈরি। মানুষের শরীরে এই ভাইরাসটি প্রজনন করতে পারে না। এই ভ্যাকসিন স্থিত ভাইরাসটি বাহুর উপরের দিকে মাংসপেশিতে ঢুকে যাবে ইনজেকশন দিলে ও তারপর এই স্পাইক প্রোটিনগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের দেহে প্রতিষেধক এন্টিবডি ও স্মৃতি কোষ তৈরি হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করবে।
করোনার টিকা হিসাবে আরেকটি অনুমোদন পেয়েছে যার নাম ‘ কোভ্যাকসিন’ । এই ভ্যাকসিন মৃত সার্স-কোভ ২ ভাইরাসের থেকে তৈরি। এই মৃত ভাইরাস মানুষের দেহে প্রজনন করতে পারে না। এটি কেন্দ্রীয় চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র আই. সি. এম .আর. ও ভারত বায়োটেক সংস্থার যৌথ উদ্যোগে তৈরি। এই টিকাকে সরকার “ক্লিনিক্যাল ট্রাইল মোড” এ দিতে ঘোষণা করেছে।সেই কোভ্যাকসিন কেন রাজধানী নতুন দিল্লীর ছটি কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ, বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। কারণ কোভ্যাকসিনের সম্মতিপত্রে স্পষ্ট লেখা আছে এই ভ্যাকসিন এখনো পরীক্ষা সম্পূর্ণ করে নি। এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এর সম্মতিপত্রের পরিশিষ্ট ২ এ স্পষ্ট লেখা আছে কোভ্যাকসিন জরুরি পরিস্থিতিতে শর্তসাপেক্ষে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।
কোভিশিল্ড এর ক্ষেত্রে আপাতত দুটো ডোজ চার সপ্তাহের ব্যবধানে বাহুর ওপরের মাংসপেশিতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। কোভ্যাকসিন এর দুটো ডোজ ত্বকের নিচে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে।হয়ত এক বছর পর এই টিকা আবার নিতে হবে।
এবার আসা যাক এর আরেকটি বিতর্কিত প্রসঙ্গে। সেটা হল এদের মূল্য। সিরাম কোম্পানির কোভিশিল্ড প্রথম ধাপে আমাদের সরকার তার সকল স্বাস্থ্যকর্মী ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের দেওয়ার জন্য মোট তিন কোটি টিকা কিনেছেন। সিরাম এর জন্য দাম নিয়েছে জন পিছু ৪০০ টাকা। অথচ ভারতীয় মুদ্রার হিসাবে ইউরোপে দাম হচ্ছে ৩১৮ টাকা। অর্থাৎ ভারতে বেশি টাকায় বিক্রি করে সিরাম মুনাফা লুটছে। মনে রাখা দরকার ভারতে উৎপাদন, গবেষণার ব্যয় ও শ্রমের মূল্য ইউরোপ আমেরিকার থেকে অনেক কম। সে কারণেই বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের বেশিরভাগ কাজ আমাদের মত দেশ থেকে আউটসোর্সিংয়ে করায়। পাশাপাশি সিরামের মালিক বলেছেন বাজারে কিনতে গেলে একজনের দাম পড়বে ২০০০ টাকা। তাই দ্বিতীয় ধাপের ৫০ কোটি টিকার ব্যয় কে বহন করবে? ওদিকে কোভ্যাকসিনের দাম ঠিক হয়েছে ২৬০ টাকা। দেশীয় টিকার দামই বা এত বেশি কেন হবে? এছাড়া এই কোম্পানিগুলোর বিদেশে প্রচুর বিক্রির সুযোগ তো থাকছেই যা ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে।
এদিকে এইদিনই ১৭৫ জন মারা গেছেন করোনা সংক্রমণে। দেশে মোট আক্রান্ত ১ কোটি ১লক্ষ ছাড়িয়ে ক্রমবর্ধমান।
(চলবে)