ডক্টরস ডায়লগে নিয়মিত লেখক ডা. নিশান্ত দেব ঘটকের ও অন্যান্যদের একটি প্রবন্ধ চিকিৎসা সংক্রান্ত জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে কোভিড ১৯ পরীক্ষার জন্য দুটি পদ্ধতির প্রচলন আছে। একটি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট এবং অন্যটি আর টি পি সি আর ( রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ পলিমারেজ চেন রিএকশন)। দুটি ক্ষেত্রেই নাক ও গলার ভেতর থেকে সোয়াব নেওয়া হয়।
এই দুটি টেস্টের মধ্যে র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট-এর সেন্সিটিভিটি কম। অর্থাৎ অনেক সময় কোভিড ১৯ পজিটিভ রোগীও এই টেস্টে নেগেটিভ বলে নির্ণয় হতে পারে। যা করোনা মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ করোনা মহামারী প্রতিরোধে প্রত্যেকজন রোগীকেই আইসোলেশনে রাখা জরুরি।
সে কারণেই র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট- এ নেগেটিভ এলে তাঁদের প্রত্যেককে আর টি পি সি আর পরীক্ষা করা উচিৎ। তাহলে প্রশ্ন হলো, র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করা হয় কেন? প্রথমেই তো আর টি পি সি আর পরীক্ষা করা যেতো?
তার কারণ ১. র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করার খরচ অনেক কম।
২. র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট করার জন্য কোনো মেশিন পত্র লাগে না। প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও করা যায়।
৩. র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট – এর রিপোর্ট কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাওয়া যায়। যেখানে আর টি পি সি আর পরীক্ষার রিপোর্ট জানতে এক থেকে দুই দিন লাগে।
তবে ডা. ঘটকদের নিবন্ধটি রোগীদের কাছ থেকে পরীক্ষার জন্য স্যাম্পেল কালেকশান- এর পদ্ধতির পরিবর্তন চেয়ে। এই প্রবন্ধে তাঁরা বলতে চেয়েছেন নাক বা গলার ভেতর থেকে সোয়াব নেওয়ার পরিবর্তে রোগীর কফ পরীক্ষা করলে তা ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বেশি কার্যকরী হতে পারে।
আমাদের ভারতবর্ষে অনেক গুলি পাবলিক হেলথ প্রোগ্রাম সাফল্যের সাথে চলছে। যার মধ্যে একটি হচ্ছে টিবি বা যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে আর এন টি সি পি, যা কিছুদিন আগেই নাম পালটে ন্যাশনাল টিবি এলিমিনেশন প্রোগ্রাম বা ‘এন টি ই পি’ হয়েছে। এই প্রোগ্রামে কয়েক লক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী সাফল্যের সাথে কাজ করে চলেছেন। প্রতিটি ব্লকেই কফ সংগ্রহের জন্য ট্রেনিং প্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন।
একবার দেখে নেওয়া যাক কফ পরীক্ষার কোন কোন সুবিধা গুলি তাঁরা প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন।
১. সোয়াব নেওয়ার জন্য দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী দরকার। কফ নেওয়ার জন্য দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী দরকার নেই। এন টি ই পি- এর কর্মীরা যারা গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে আছেন, তাঁরাই দিব্যি কফের নমুনা সংগ্রহ করতে পারবেন।
২. কফ দেওয়া রোগীর ক্ষেত্রেও একেবারেই বেদনাদায়ক নয়।
৩. ঘরে বসেই কফ দেওয়া সম্ভব। এর ফলে সাসপেক্টেড রোগীকে নমুনা দেওয়ার জন্য হাসপাতালে যেতে হবে না। ফলে কোভিড ১৯ ছড়ানোর সম্ভাবনা কমবে।
৪. যে সব স্বাস্থ্যকর্মী সোয়াব কালেকশন করছেন তাঁদের অনেকেই কোভিড ১৯ এ আক্রান্ত হচ্ছেন। কফ যে কেউ ঘরে বসেই দিতে পারেন। কারোর সামনে দেওয়ার দরকার নেই। যার ফলে স্বাস্থ্য কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
৫. সোয়াব সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য কর্মীদের পি পি ই পরতে হয়। প্রত্যেক রোগীর জন্য স্টেরাইল সোয়াব স্টিক লাগে। কফ পরীক্ষায় এসবের দরকার নেই। ফলে খরচও কিছুটা কমে।
৬. টিবি রোগ নির্ণয়ের জন্য ভারতে ২০০০ টির বেশি সি বি ন্যাট মেশিন আছে। এগুলোর কার্টিজ পালটে কোভিড ১৯ পরীক্ষা করা সম্ভব।
কিন্তু প্রশ্ন হলো কফ পরীক্ষা কোভিড ১৯ নির্ণয়ের জন্য কতটা উপযোগী। এ জন্য তাঁরা প্রবন্ধে বিভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন চীন দেশের একটি একটি পরীক্ষায় ডা. ওয়েনলিং ওয়াং ও অন্যান্যরা ২০৫ জন রোগীর বিভিন্ন স্যাম্পেল পরীক্ষা করেন। তার মধ্যে ব্রংকো এলভিওলার লাভাজ পজিটিভ আসে ৯৩% রোগীর। কফ পজিটিভ আসে ৭২% রোগীর। নাকের সোয়াব পজিটিভ আসে ৬৩% রোগীর। ফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব পজিটিভ ৩২% এবং মলে (স্টুল) পজিটিভ ২৯%।
এছাড়াও তাঁরা নিজেদের যুক্তির সপক্ষে একাধিক ক্লিনিক্যাল স্টাডির ফলাফল উল্লেখ করেছেন। তাঁদের এই প্রবন্ধটি যথেষ্ট কৌতুহল উদ্দীপক।
বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধটির সারসংক্ষেপ করেছেন ডা ঐন্দ্রিল ভৌমিক।