খুব সম্প্রতি তামিলনাড়ুর ভেলোর শহরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিক্যাল কলেজের এক গবেষণামূলক সমীক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে যে দক্ষিণ ভারতের বেশ কিছু গ্রামীণ অঞ্চলে স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রশ্ন হলো রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টিকারী এই স্ক্রাব টাইফাস আসলে কী এবং কেন তাকে ঘিরে এমন আতঙ্ক? স্ক্রাব টাইফাস হলো একটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত সংক্রমণের নাম। ১৯৩০ সালে জাপানে সর্ব প্রথম এই ব্যাকটেরিয়াটির খোঁজ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই মারণ ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে বহু মানুষ আক্রান্ত হয় । আমাদের দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে অতীতে এই ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা গেছে। রিকেট্টেসিয়া পরিবারভুক্ত Orientia tsutsugamushi নামের ব্যাকটেরিয়া থেকেই এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বনবাদাড়ে গাছে থাকা এক মাইটের দংশনে এই রোগের প্রসার। এই মাইটের শরীরেই বাস করে ঐ ঘাতক ব্যাকটেরিয়া।
টাইফাস শব্দটি গ্রীক শব্দ, যার অর্থ মনের ধোঁয়াশা ভাব বা বিভ্রান্তিকর অবস্থা। আসলে শরীরে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধলে আর তার জেরে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বিভ্রান্ত না হয়ে উপায় কি!
ভেলোর সংলগ্ন তামিলনাড়ুর একটা বড়ো অঞ্চলের ৩২০০০ মানুষের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে যারা ইতিমধ্যে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই সম্ভাব্য স্ক্রাব টাইফাস রোগের শিকার যদিও সেটা সম্পর্কে সকলে সেভাবে সচেতন নন।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন- এ প্রকাশিত এই গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে যে প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ মানুষ স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত হয়। তবে প্রথমাবস্থায় জ্বর ছাড়া যেহেতু এই রোগের অন্য কোনো সিম্পটম বা লক্ষণচিহ্ন সেভাবে প্রকাশ পায়না সেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় রোগটিকে সনাক্ত করা কখনো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অন্য কোনো শারীরিক লক্ষণ দেখা যায়না এমনটাও কিন্তু মোটেই নয়। চিকিৎসকদের মতে রোগের একদম শুরুতে জ্বর ছাড়া অন্য কোনো উপসর্গ প্রকট না হলেও দিন কয়েকের মধ্যেই অন্যান্য লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন –
- প্রবল জ্বর,১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর ওপরে। এই অবস্থা কয়েক দিন থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
- সারা শরীরে ব্যাথা, বিশেষ করে মাথা ধরে থাকে। এরসঙ্গে কফ ও কাশির দাপট অনেকটাই বেড়ে যায়।
- সারা শরীরে ছোট ছোট গুটি দেখা যায়।
- প্রবল শীত বা ঠাণ্ডা বোধ হয়।
- শরীরের লসিকা গ্রন্থিগুলো ফুলে যায়।
- বমি বমি ভাব হয়ে থাকে। সঙ্গে পেটে ব্যথা হয়।
- এরফলে খিঁচুনি আসে।
- জ্বর কয়েক দিন ধরে থাকলে মানসিক ভারসাম্য বা স্মৃতি বিভ্রমের অবস্থা দেখা যেতে পারে।
ভেলোরের CMC হাসপাতালের কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ ক্যারল্ দেবামণির মতে – সার্স কোভিড – 2 ভাইরাসের পর, স্ক্রাব টাইফাসই হলো জ্বরের সবথেকে বড়ো কারণ। সমীক্ষা রিপোর্ট জানাচ্ছে যে যত সংখ্যক মানুষ জ্বরের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশই হলেন স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণের শিকার। যদিও এটি খুবই সাধারণ সংক্রমণের বিষয় এবং এর খুব ভালো চিকিৎসাও উপলব্ধ তথাপি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যার কথা এড়িয়ে যাওয়া হয়। অথচ সামান্য কিছু পরীক্ষার মাধ্যমেই এর হদিশ পাওয়া সম্ভব। তবে নাগরিক সমাজ এই বিষয়ে উদাসীন থাকে।
স্ক্রাব টাইফাস সংক্রমণের চিকিৎসা সঠিক সময়ে শুরু করা গেলে খুব জটিলতা নেই। সাধারণ এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যেমন ডক্সিসাইক্লিন ও এ্যাজিথ্রোমাইসিন দিয়েই চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া যেতে পারে। তবে এখনও এর কোনো উপযুক্ত ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি।
আসলে এই সংক্রমণের বিষয়ে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই সবথেকে বড়ো সমস্যা। রোগটি একেবারেই সংক্রামক নয় , সুতরাং এক জনের থেকে অন্যজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই। বাগানে গেলে একটুখানি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত যাতে মাইটস বা গেছো উকুন দংশন না করে। জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষা করে নিলেই এই রোগটি সম্পর্কে সুনিশ্চিত হওয়া যায়। সেক্ষেত্রে অনাবশ্যক আতঙ্কে ভুগতে হয় না। সুচিকিৎসায় রোগের নিরাময় সম্ভব।
মার্চ ১৬.২০২৫
বেশ কিছুদিন পরে লেখক চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। এই রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চিকিৎসক মহলেও খানিকটা বিভ্রান্তি রয়েছে বলে মনে হয়। মাইট,গেছো উকুন এবং এটুলির দংশন থেকেই এর সূচনা। তবে উপসর্গগুলো একই রকমের বলে উপেক্ষা করে থাকে মানুষজনেরা
নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় তথ্যপূর্ণ আলোচনা।
ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। আপনার মতামত পড়ে মনে হচ্ছে যে আমার সামান্য আলোচনা আপনাদের মতো পাঠিকাদের কিছুটা সচেতন করে তুলেছে। জ্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের মধ্যেও কিছুটা দ্বিধা আছে। এই কারণে তাঁদের কাছে গেলেই অনেকে এন্টিবায়োটিক ওষুধ দেগে দিচ্ছেন। এই বিষয়ে সকলের সচেতনতা দরকার। এই রোগ বিরল নয়, ছোঁয়াচে নয়, সেই অর্থে প্রাণঘাতী নয়। একটু সাবধানতা দরকার।
A really good article highlighting the reason why febrile illness should not be ignored and medical attention should be sought for at the earliest to save lives.
Generally scrub typhus antibody testing is done as a routine test by most of the clinicians. It is very common in regions near hills, mountains and jungles or even bushes. What I want to highlight is that any patient coming with fever we do send scrub typhus antibody and Typhoid antibody (Both IgM and IgG) in almost all the cases. So there is very little chance to miss Scrub typhus infection. And it is true that it can become a serious infection and may cause Liver and Kidney failure and if untreated it’s fatal. But the good point is that only a three days course of the specific antibiotic (I won’t mention the name) is needed to clear the infection off… it is a very common infection is Himalayan valleys.
Thanks for your supportive comment. Scrub typhus infection is not very uncommon even in the rural areas. Awareness about the vector is perhaps of utmost importance. Keep on reviewing the articles like this.
ভালো লাগলো লেখাটি। সংক্ষিপ্ত কিন্তু উপযুক্ত তথ্যসমৃদ্ধ। সাধারণ মানুষের মনে রোগটির সম্মন্ধে ধারণা তৈরি হবে এবং অকারণ ভয় দূর করবে। এরম আর কিছু রোগ সম্মন্ধে আলোচনা হলে আমার মনে হয় ভালো হবে।।।
আমার মতো মানুষের চিকিৎসা বিষয়ক লেখা পাঠকদের, বিশেষ করে যারা চিকিৎসক, ভালো লাগছে জেনে খুশি হলাম। এই মন্তব্য গুলো বিলকুল টনিকের কাজ করছে। ধন্যবাদ জানাই।
পড়ে যথারীতি জ্ঞান বৃদ্ধি হোলো বৈকি। তবে আমার মতে সাধারণ নাগরিক সচেতনতার থেকেও বেশী মনেহয় চিকিৎসক নাগরিকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন। সাধারণ নাগরিক সাধারণত জ্বর হলে দু একদিন নিজেরাই নিজেদের চিকিৎসা করে। এরপরে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকে। এরপরের কাজ তো চিকিৎসকদেরই।