পূর্বপ্রকাশিতের পর
সেই দিনই ঠিক দুক্কুর বেলা তখন ডাক্তার তাঁর সুন্দরী চারপেয়েকে নকুলদানা খাওয়াচ্ছেন। না, না, অন্য কিছু ভাববেন না। দোকানের ঝাল ঝাল ডিম ভাত খেয়ে চারপেয়ে কাহিল। সামনের ছোট ছোট থাবা দিয়ে নিজের মুখ ঘসছে। সেই জন্য নকুলদানা। তখনই ছেলেটি হাজির।
“ডাক্তারবাবু, আমার জানতে ইচ্ছে করছে।”
ডাক্তার বললেন “জিজ্ঞাষু? তা বেশ তা বেশ”
তারপর প্যাকেটের শেষতম ফ্লেকটা বার করে আয়েশ করে সুখটান। সুন্দরীর ধূমপান পছন্দ নয়। ঘেউ ঘেউ করে প্রতিবাদ জানালো। “বলো হে কি জানতে চাও তুমি?”
ছেলেটা মাথা নিচু করে। “ঐ যে আপনি বললেন প্রজনন তন্ত্র…”
ডাক্তার তর্জনীর টোকায় ছাইদানিতে ছাই ঝেড়ে হাসেন। চারপেয়েও পেছনের দএর মতো দেখতে ডান পাটা দিয়ে খশখশিয়ে ডানকান চুলকোতে চুলকোতে একটু ব্যাঁকা হাসে। ডাক্তার গলা খাঁকারি দিয়ে আরম্ভ করেন “আজ আমাদের প্রথম যে জিনিসটা জানতে হবে…”
টিং টং। ঘন্টা বেজে ওঠে। দুয়ারের কাছে কে ঐ দাঁড়ায়ে? দেখা গেল বাবামশাই সন্তানের খোঁজে এসেছেন “ইয়ে মানে ঘটকর্পর কি আপনার এখানে এসেছে …আসলে …বাড়িতে দেখলাম না তো …”
ডাক্তার দেবানন্দের কেতায় ফ্লেকটা ঠোঁটের কোণায় ঝুলিয়ে বলেন “ইয়েশশশ”
বাবামশাই ভেতরে এসে বসেন। “ঘটু তুই এখানে ? আর আমরা….”
ডাক্তার সিগারেটে শেষতম মারাত্মকতম এবং প্রিয়তম টানটা দিয়ে পি সি মিটারের স্টাইলে টুস্কি মেরে ওটাকে চমৎকারভাবে গ্রিলের ফাঁক গলিয়ে এক পথচারীকে আঁৎকে রাস্তায় ফেললেন “হ্যাঁ আমরা যৌনশিক্ষার ওপরে আলোচনা করছি, বলতে পারেন গুপ্তজ্ঞান দিচ্ছি….” এবং ল্যাজনাড়া সুন্দরী তৎক্ষণাৎ ঘাড় নেড়ে সায় দিলো। “তাহলে শুরু হোক – কি বলেন? বলুন তো দেখি সেক্স কাকে বলে?”
বেচারা ঘটকর্পর আর ওর বাবা দুজনেই ঘেমোভূত হয়ে গেল। ঘটকর্পর ভেবে চিন্তে বললো “ঐ যে ঐ …. মানে নারী পুরুষ… বিছানায় ….. ইয়ে করে…”
বুড়ো ডাক্তার খানিক খ্যাঁকশেয়ালের মতো খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসলেন তারপর গাঁ গাঁ করে হাসলেন।
সবাই ভাবলো বুড়ো এবার দমটম আটকিয়ে মরে বুঝি।
শেষে ডাক্তার বললেন “সেক্স মানে লিঙ্গ – নারী বা পুরুষ লিঙ্গ। সবাই ভাবে ঐ যন্ত্রটাই নারী পুরুষের ভেদ তৈরি করে। তা কিন্তু নয়।”
“তা কিন্তু নয়? তবে? তবে? তবে?”
ডাক্তার চোখ গোল গোল করে বললেন– “এক্স ওয়াই”
ঘটকর্পর বেশী সপ্রতিভ হওয়ার চেষ্টায় বলে উঠলো “জেড”
“গোবরে ভর্তি তোমার হেড” ডাক্তার চোখ মিটমিট করে বললেন “কিছুটা ঐ এক্স ওয়াই আর বাকিটা ঘিলুতে আছে– যেটা ঠিক করে দ্যায় কখন পুরুষ পুরুষকে ভালবাসবে অথবা উল্টো– বুজলেন মশয়রা?”
বাবামশাই বললেন “ঐ এক্স ওয়াই ব্যাপারটা কি?”
ডাক্তার বলেন “ দুটো সেক্স ক্রোমোজোম– যারা মানুষের যৌন বিভাজন স্থির করে। মেয়েদের দুটোই এক্স ক্রোমোজোম থাকে … আর ছেলেদের একটা এক্স আরেকটা ওয়াই। ছেলেদের বীর্যে যে ক্রোমোজোমটা বেশী সক্রিয় বা তৎপর .. উঁউঁউঁম যেটা বেশী সক্ষম সেটা গিয়ে মেয়েদের ডিমের যে কোন একটা এক্সের সঙ্গে মিলে ভ্রূণ তৈরি করে। অর্থাৎ যে পুরুষের এক্স ওয়াই’য়ের মধ্যে এক্স ক্রোমোজোম বেশী সক্রিয় সে মেয়েদের ডিমের যে কোন একটা এক্সের সঙ্গে মিলে আরেকটা এক্স এক্স তৈরি করবে অর্থাৎ নারী সন্তান হবে। এখানে নারীর কাজ একটা সক্রিয় ক্রোমোজোমকে গ্রহণ করে সন্তান তৈরি করা। কন্যা সন্তান না পুরুষ সন্তান সেটা সম্পূর্ণতঃ পুরুষের সক্রিয় ক্রোমোজোমের ওপর নির্ভর করে। এখন আল্ট্রাসোনোগ্রাম দিয়ে কন্যা সন্তান জেনে তাকে হত্যা করা হচ্ছে। আর পুরাকালে কন্যা সন্তানকে জন্মের পর হত্যা করা বা ত্যাগ করা হতো। যেমন কাশ্মিরী রামায়ণে আছে যে সীতা রাবণ আর মন্দোদরীর কন্যা। রাবণ তাকে পুষ্পক রথে করে হুশ করে জনক রাজার দেশে ফেলে দেয়।”
ঘটকর্পর এবং তার পিতাঠাকুরের চোখ ফুল বয়েল ডিমের মতো বড়ো বড়ো হয়ে ওঠে “এ্যাঁ তার মানে রামচন্দ্র নিজের শ্বশুরকে হত্যা করেন?”
“এছাড়াও গান্ধারীদেবীর অত্তোগুলো ছেলে কিন্তু মাত্র একখানা মেয়ে কেন? এটাও সন্দেহজনক – তাই না? যাকগে ওসব কথা বললে আবার রামায়ণ অশুদ্ধ হবে। এই ক্রোমোজোমের প্রভাবে পুরুষ অঙ্গ আর নারী অঙ্গ তৈরি হয়। কিন্তু বিশেষ একটা বয়সের পরে দুজনের মানসিকতা আলাদা আলাদা হয়ে যায়। এমনিতেই পুরুষ হর্মোন আর স্ত্রী হর্মোন তো আছেই– তার সঙ্গে অক্সিটোসিন আর ভেসোপ্রেসিন বলে দুটো হর্মোন আছে – এটা কিছু কিছু নারী পুরুষ দুজনের। অক্সিটোসিন মাতৃত্ব দয়া মায়া কোমলতা বাড়িয়ে তোলে। এটা মেয়েদের বেশী থাকে। আর ভেসোপ্রেসিন মানুষকে রাগী বদমেজাজি তিরিক্ষি করে তোলে। এটা ছেলেদের সাধারণতঃ বেশী থাকে। তবে খেয়াল করে দেখো বাচ্চা প্রসব করার পর নিরীহ শান্ত শিষ্ট মা কুকুর কেমন হিংস্র হয়ে ওঠে? বাচ্চা প্রসব করার পর সব মেয়েরই ভেসোপ্রেসিন বেশী বেরোয়। এটা সন্তানকে রক্ষা করার জন্যে।”
বাবামশাই হঠাৎ করে বলেন “হ্যাঁ রে, সেদিন আমি ফিরছি রাস্তায় আমাদের লালী যে বাচ্চা দিয়েছে.. তো জানি না .. যেই না কাছে গেছি .. ওরে বাবা .. সেকি ব্যাস করলো তাড়া … শেষে ঐ মোটা ফলওয়ালী ছুছুন্দরীদেবীর কোলে উঠে বাঁচলাম।”
ঘটকর্পর তো আর হেসে বাঁচে না।
ডাক্তার বলেন “চলো হে আমার সিগারেটের মজুদ শেষ। রবির দোকান থেকে চা পান করে সিগারেট কিনে আনি। ”
(পরবর্তী সংখ্যায়– বাংলা সিরিয়ালের মতো– বাকিটা)