বিভিন্ন মানসিক রোগের সাথে ঘুমের সমস্যা জড়িয়ে থাকে। আবার শুধু ঘুম সংক্রান্ত কিছু সমস্যাও রোগ হিসাবে দেখা যায়।
ইনসমনিয়া নামক রোগে ঘুম আসতে দেরী হয় বা তাড়াতাড়ি ভেঙে যায় বা ঘুম থেকে ওঠার পারে সতেজ ভাব অনুভূত হয় না।
হাইপারসমনিয়া নামক রোগে রোগী সারারাত ঘুমোনোর পরে দিনের বেলাতেও ঘুম ঘুম ভাব অনুভব করেন।
নারকোলেপ্সি নামক রোগে রোগী হঠাৎ হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়েন। এই রোগে আক্রান্তরা গাড়ি চালাতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
অনেক সময় আমাদের ঘুমের স্বাভাবিক চক্র নষ্ট হয়ে যায়- যেমন গভীর রাতে ঘুমিয়ে দুপুর বেলা ঘুম থেকে ওঠা, সন্ধ্যের সময় ঘুমিয়ে মাঝ রাত্রে উঠে পড়া, ঘুমোতে যাওয়ার ও ঘুম থেকে ওঠার কোন নির্দিষ্ট সময় না থাকা, জেট ল্যাগ, ইত্যাদি।
আবার ঘুমের মধ্যে হাঁটা -চলা করা, দুঃস্বপ্ন দেখা, ইত্যাদি রকমের ঘুমের সমস্যাও বিরল নয়।
উপরোক্ত সমস্যা গুলির মধ্যে মূলত ইনসমনিয়ার সমস্যা নিয়ে সবথেকে বেশি মানুষ সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিতে আসেন। অনেকক্ষেত্রে সমস্যার মোকাবিলায় ওষুধের দরকার পড়ে। সাথে সাথে কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে অনেক সময় ইনসমনিয়ার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ হয়।মানসিক স্বাস্থ্যের পরিভাষায় এই নিয়ম কানুনগুলোকে স্লিপ হাইজিন বলা হয়।
নিয়মগুলো এই রকম-
প্রথমত- প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়া ও একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করা গেলে ঘুমের সমস্যার মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা কমে।
দ্বিতীয়ত- ভালভাবে ঘুমোনোর জন্য ঠিকমত একটি ঘুমোনোর জায়গা বাছাই করা খুব দরকার। ভোরের আলো অনেকসময় সকালে আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়। তেমনি অহেতুক ও বিরক্তিকর শব্দও আমাদের ঘুম ভাঙিয়ে দিতে পারে। তাই ভাল ঘুমের জন্য আলো ও শব্দমুক্ত আরামদায়ক বিছানা খুবই প্রয়োজন।
তৃতীয়ত- ঘুমোতে যাবার চার থেকে ছয় ঘন্টা আগের সময়ে চা,কফি,কোল্ড ড্রিংকস, চকলেট, সিগারেট, মদ একদমই খাওয়া উচিত নয়।যদিও অনেকে মনে করেন যে ঘুমোনোর আগে মদ্যপান করলে ঘুম ভাল হয়, বাস্তবে এটি একটি ভ্রান্ত ধারণা।
চতুর্থত- বিছানা শুধুমাত্র ঘুমোনোর জন্যই ব্যবহার করতে হবে। যে বিছানাকে আমরা ঘুমোনোর জন্য ব্যবহার করব তাতে বসে পড়াশুনো, টিভি দেখা বা অন্য কোন কাজ করা উচিত নয়।
পঞ্চমত- দিনের বেলা না ঘুমোনোই ভাল। নিতান্তই ঘুমোতে হলে অবশ্যই এক ঘন্টার কম সময়ের জন্য ঘুমোনো উচিত।
ষষ্ঠত- বিছানায় শুয়ে যদি কুড়ি মিনিট অব্দি ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা থেকে উঠে পড়া উচিত এবং যতক্ষণ না আবার ঘুম পাচ্ছে ততক্ষণ অন্য কোনও কাজ করা উচিত।
সপ্তমত- অনেক সময় ঘুম না এলে আমরা ঘড়িতে সময় দেখি। এর ফলে উদ্বেগ আরো বাড়ে। তাই এই অভ্যাস ত্যাগ করা দরকার।
অষ্টমত- নিয়মমতো রোজ ব্যায়াম করলে ঘুম ভাল হয়। তবে ঘুমোতে যাবার চার ঘন্টার মধ্যে ভারী ব্যায়াম না করাই ভাল।
নবমত- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ভাল ঘুম হবার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। ঘুমোতে যাবার সময় একদম খালি পেটে থাকা উচিত নয়। আবার পেট ভর্তি করে খাওয়ার পরেও ঘুমোতে যাওয়া উচিত নয়।অনেকক্ষেত্রে ঘুমোতে যাবার আগে ঈষদুষ্ণ দুধ খেলে সহজে ঘুম আসে।
দশমত- ঘুমোতে যাবার আগে কিছু কাজ রুটিন মাফিক করলে ঘুম আসার প্রক্রিয়া সহজে সম্পন্ন হয়। যেমন ঘুমোতে যাবার আগে রোজ স্নান করা, গল্পের বই পড়া, রিলাক্সেশন এক্সসারসাইজ করা ইত্যাদি ঘুমের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ঘুমোতে যাবার আগে কোন চিন্তা মাথায় এলে সেটি নিয়ে না ভেবে সেটি একটি ডায়েরিতে লিখে রাখা ভাল- এতে ওই চিন্তা ভুলে যাবার ভয় থাকে না এবং ওই চিন্তা থেকে ঘুমও নষ্ট হয় না।
এরকম একটি সু পরামর্শ পোষ্ট করার জন্য ডাঃ বাবুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ. আমাদের অনেকের এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে
Sir i have a question, যদি কেউ যে কোনো একটা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে তাহলে কি ঘুমের এরিয়া টা নষ্ট হয়ে যায়। মাস্তিষ্কের কোন অংশ ঘুম টাকে নিয়ন্ত্রণ করে। ঘুমের এরিয়ার নাম কি
Sir যদি একটা বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করে তখন তাঁর রাতের পর রাত ঘুম হয় না তাহলে কি ঘুমের এরিয়া টা নষ্ট হয়ে যায়। ঘুমের কোনো এরিয়া আছে। মাস্তিষ্কের কিন্তু অংশ ঘুম টা কে নিয়ন্ত্রণ করে