“আপনি বলুন কি করা উচিত? মাকে আই সি উ-তে ভেন্টিলেটরে দেওয়ার কন্সেন্ট দেব কি দেব না? আমি চাই না মা শেষ সময়ে বাবার মতো কষ্ট পাক। প্রথম থেকেই তো মায়ের লাস্ট স্টেজ ক্যান্সার ছিল, তিন বছর চিকিৎসা করিয়েছি, মুম্বাই নিয়ে গিয়েছি, যদি কোন আশা থাকে মানে যদি আরও কিছুদিন বাঁচানো যায়?”
“খুব কঠিন সিদ্ধান্ত, একবার বাড়িতে আত্মীয়স্বজনদের সাথে পরামর্শ করুন।”
“আর তো কেউ নেই। বাবা জুন মাসে চলে গেলেন। এক অবিবাহিত কাকা ছিলেন তিনি তার তিন মাস আগে। আমার তো ভাই বোন নেই। যা করার আমাকেই করতে হবে।”
একটা বাইশ তেইশ বছরের মেয়ে। ওই মুসকান বা তার পেছনে হল্লারত ছেলেগুলোর মতোই বয়স। হাসপাতালের আই সি উ-র সামনে একা দাঁড়িয়ে, পৃথিবীতে তার একমাত্র স্বজন “মা” এর শেষ সময়ের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এই মুহূর্তে।
এই মুহূর্তে আরও সারি সারি মুখ। আরো সারি সারি কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত। কারো মা কারো বাবা কারও ভাই কারো সন্তান। হাসপাতালের বাইরে আরো কত কত মানুষ, অতিমারীতে কাজ হারানো মুখ, অনাথ হাজার হাজার শিশু, কত শত মানুষ একা অসম লড়াই লড়ে চলেছে এই মুহূর্তে।
এ হল পাশে দাঁড়ানোর সময়, এ হলো বেঁধে বেঁধে থাকার সময়।
হিজাব, গেরুয়া, পৈতে, টিকি, দাড়ি, পাগড়ি, বোরখা এসব নিয়ে সময় নষ্ট করার সময় কোথায়? উলঙ্গ হয়ে এসেছি, সবাই উলঙ্গ হয়েই যাবে। আপনাদের ঈশ্বর কাউকে হিজাব, গেরুয়া, পৈতে পরে পাঠায়নি, পাঠিয়েছেন উলঙ্গ, শুধু মানুষ পরিচয় দিয়ে । এসব আপনারাই পরিয়েছেন। এসব ছাড়ুন। মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান।
“মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও,
এসে দাঁড়াও, ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও,
মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও।” (শক্তি চট্যোপাধ্যায়)