সেদিন বিকেলবেলা, ডাক্তার নন্দী যখন সবে চেম্বার খুলে বসেছেন, সেই সময়ে হাঁফাতে হাঁফাতে ঢুকে ধপ করে তাঁর সামনের চেয়ারে এসে বসে পড়ল অল্পবয়সী একটি ছেলে। দোহারা চেহারা,কাপড় জামা ফিটফাট, পিঠে একটা ব্যাগ। ডাক্তার নন্দী কিছু বলার আগেই সেই ব্যাগ থেকে এক তাড়া কাগজ বার করে তাঁর টেবিলের ওপর রেখে সে বলল, “ ডাক্তারবাবু, অনেক ঘুরে আপনার কাছে এসেছি, জানিনা আপনি আমার কিছু সাহায্য করতে পারবেন কিনা, কিন্তু সবাই যখন হাত তুলে দিয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছেই পাঠাচ্ছে, তাই কিছু করার না পেয়ে আপনার কাছে এলাম।”
অল্প কৌতূহলী হয়ে কাগজের বান্ডিলটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টোতে উল্টোতে ডাক্তারবাবু তার উদ্দ্যেশে বলেন, “তা অনিমেষবাবু, আপনি তো প্রায় সারা শরীরের যতরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় তা সবই বেশ বার কতক করিয়ে ফেলেছেন, তবু আমায় একটু বুঝিয়ে বলবেন সমস্যাটা কোথায়?”
অনিমেষের উত্তর থেকে বোঝা গেল যে সে প্রায় গত দেড় বছর যাবৎ বিভিন্ন শারীরিক কষ্টে নাজেহাল। কখনও তার পেটে গ্যাস এবং বুক জ্বালার কারণে খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়, তো তার পরের মাসে সে বুকের বাঁ দিকে প্রচণ্ড ব্যাথার দরুন ইমারজেন্সিতে যেতে বাধ্য হয়; কখনও একতলা উঠতেই বুক ধড়ফড় করে মাথা ঘোরে, তো কদিন বাদে প্রস্রাবের রাস্তায় ব্যাথা হয়। মাঝে মাঝে এর মধ্যে সে চোখেও ঝাপসা দেখে, শরীরের একটা দিকে জোর পায়না, খুব সহজ কাজে ভুল করে বারবার, গলাব্যাথা, মাথাভার লেগেই থাকে বারোমাস।
এইসব কারণে সে বারবার ডাক্তার দেখিয়েছে, পরীক্ষা করানোতেও কোনও খামতি রাখেনি, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এতরকম লক্ষণ থাকা সত্ত্বেও কখনও কোনও পরীক্ষায় কোনও অসুখ পাওয়া যায়নি। অন্তত সাতজন মেডিসিন এবং সার্জারির ডাক্তারের কাছে ঘুরে শেষ পর্যন্ত সে পৌঁছেছে ডাক্তার নন্দীর কাছে, মানসিক রোগ হোক না হোক, এই অবিরাম শারীরিক কষ্ট থেকে একটু নিস্তার পাওয়ার আশায়।
প্রথমে একগ্লাস জল খাইয়ে তাকে খানিক শান্ত করে ডাক্তারবাবু অনিমেষের শরীরের খবর ছেড়ে তার বাকি খবরাখবর জানতে চাইলেন ধীরেসুস্থে। প্রথমে সেসব কথা বলতে নিমরাজি হলেও, আধ ঘণ্টার কথাবার্তায় বেশ অনেকখানিই জানা গেল।
অনিমেষের বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক; স্ত্রী, প্রিয়াঙ্কা, যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছে রসায়নে, আর সে বি টেকের পর একটা মোটামুটি ভালো মাইনের চাকরি পেয়ে সেক্টর ৫ এ কর্মরত। মা-বাবার সাথে এখনো এক ফ্ল্যাটে থাকলেও, পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে দিনকে দিন। একদিকে প্রিয়াঙ্কার ইচ্ছে পিএইচডি সেরে পোস্ট ডক করতে বিদেশপাড়ি, অন্যদিকে মা- বাবার সামনে এ বিষয়ে কথা তুললেই তাঁরা অন্যদিকে কথা ঘোরান- আর এই দুই নৌকার মাঝে পড়ে নাকানি চোবানি খেয়ে একসা হয় অনিমেষ।
বাইরে কারুর সাথে কথা বলে ব্যাপারটার সুরাহা হওয়া তো দূর অস্ত, অর্ধেক সময়ে সে মায়ের আঁচলধরা আর বাকি অর্ধেক সময়ে বিবি কা গোলাম প্রতিপন্ন হতে হতে এসব আলোচনা করা ছেড়েই দিয়েছে। অবশ্য শরীর খারাপ বাড়লে একটা আখেরে লাভ হয়- মা আর প্রিয়াঙ্কা দুজনেই নিজেদের গোঁসা ভুলে অনিমেষের দেখভালের দিকেই বেশী মন দেন।
এইবারে পুরো ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায় ডাক্তার নন্দীর কাছে। খুব সাবধানে নরমভাবে তিনি অনিমেষকে বোঝাতে শুরু করেন ‘সোমাটোফর্ম ডিসঅর্ডার’ সম্বন্ধে।
সোমাটোফর্ম ডিসঅর্ডার, কিংবা ‘সোমাটিক সিম্পট্ম ডিসঅর্ডার’ বা ‘বডিলি ডিস্ট্রেস ডিসঅর্ডার’ নামের এই অসুখটার সহজ বাংলা করলে দাঁড়ায় শারীরিক লক্ষণের অসুখ কিংবা শারীরিক কষ্টের অসুখ। ভারী অদ্ভুত নাম, তেমনই অদ্ভুত অসুখটি।
চিন্তার কারণে আমাদের সকলেরই শরীরে কিছু না কিছু লক্ষণ দেখা যায়, যেমন পরীক্ষা দিতে গিয়ে হাল্কা বুক ধড়ফড় করা, হাত ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি। সেইরকম লক্ষণই যদি অনেকদিন ধরে থাকে, তবে সেটা যে চিন্তার কারণে হচ্ছে সেটা বোঝাটা আমাদের পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। অতিরিক্ত চিন্তা আমাদের শরীরের বিভিন্ন প্রণালী যেমন রক্তচাপ পরিবর্তনের সিস্টেম, রোগপ্রতিরোধের জন্য কাজ করার সিস্টেম ইত্যাদির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই, অনেক সময়ে, মানসিক ভাবে চিন্তিত মনে না হলেও শরীরের ওপর চিন্তার প্রভাবে বিভিন্ন ধরণের লক্ষণ আসতে থাকে। তা ছাড়াও, আমাদের সমাজে মানসিক চিন্তা, অবসাদ কিংবা মানসিক ভাবে ভালো না থাকাকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া না হলেও সাধারণ কিছু শারীরিক লক্ষণ যেমন পেট খারাপ, মাথাব্যাথা, বুকে ব্যথা ইত্যাদিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেইসব কারণে অনেক সময়ে, রোগীর অজান্তেই তার মানসিক চিন্তা কিংবা অবসাদ বিভিন্ন শারীরিক কষ্টরুপে দেখা দেয়। এতে মুশকিল হয় একটাই- শারীরিক কষ্টে নাজেহাল রুগী ডাক্তারের পর ডাক্তার দেখিয়ে, পরীক্ষার পর পরীক্ষা করিয়েও খুঁজে পায় না তার শরীরের অসুখ। আর সেই থেকেই এই রোগের নাম হয় ‘সোমাটোফর্ম ডিসঅর্ডার’।
রুগী এবং ডাক্তার উভয়কেই বিব্রত করা এই অসুখ কিন্তু সরকারি হাসপাতালে কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে হামেশাই পাওয়া যায়। দুঃখের বিষয় এই যে সঠিক সচেতনতার অভাবে এই রুগীরা অনেক জায়গা ঘুরেও সঠিক চিকিৎসা পাননা।
এইসব কথা বোঝাতে ডাক্তার নন্দীর আরও বেশ খানিকটা সময় যায়। কিন্তু তিনি জানেন এই অসুখের চিকিৎসা তাড়াহুড়োয় হওয়ার নয়। অল্প কিছু ওষুধ শুরু করেন তিনি, শেখান মনকে শান্ত করার জন্য কিছু শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম। আগামী কয়েক মাসে ডেকে কথা বলেন অনিমেষের মা ও স্ত্রীর সাথে- তাঁদেরকেও বোঝান এই অসুখ সম্বন্ধে। অনিমেষকে শেখান কীভাবে শরীরের লক্ষণ থেকে নিজের মনকে অন্যদিকে নিয়ে যেতে হয়। প্রায় মাস ছয়েকের যৌথ প্রচেষ্টায় অনিমেষ শেষ পর্যন্ত ছুটি পায় তার বিভিন্ন রকম জ্বরজারির থেকে।
ডাক্তারবাবুর মধ্যস্থতায় খোলাখুলি কথা বলতে পেরে পরিবারের সমস্যাও কিছু সমাধান হয়। তবে সব থেকে বড় জিনিস যেটা বদলায় সেটা হলো এই যে অনিমেষ আজকাল নিজের মনের ওঠানামার ব্যাপারে অনেক বেশী ওয়াকিবহল থাকে, দরকার পড়লে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নেয়, আর আশপাশের চেনা পরিচিতদেরকেও শরীরের সাথে সাথে মনের খেয়াল রাখার কথা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়।
উপকারী
স্যার আমার ২০০৮সাল থেকে পেটে ডিওডেনাম ইরোশন আছে। আমার বয়স২৯ বছর । ওজন ৫৫ কেজি। আমি ভারতের কলিকাতা পিয়ারলেস হসপিটাল এবং ভেলুর সি এম সি হাসপাতালে দেখিয়েছিলাম। আমি ৬ থেকে ৭বার ইন্ডোসকপি কপি করা হয়।২০১৩ সালের ইন্ডোসকপি রিপোর্ট । Diagnostic :scarred duodenum bile reflux gastritis.এবং আরাকটি ইন্ডোসকপি রিপোর্ট Diagnostic :gastric and duodenum Erosions. আছে। কিন্তু আল্ট্রাসোনগ্রাফি Normal আছে। এই সমস্যা পর থেকেই মাথা ঘোরা মত লাগে কোন কিছু মনে থাকে কম। ভয় লাগে। চিন্তা হয় মৃত্যু ভয় করে একটু উপরে উঠলে ভয় লাগে এটার কারন কি। পেটের সাথে মাথার কি সম্পক আছে কি।পেট তেমন ব্যাথায় না।খাওয়ার পর গলার কাছে কি আঁটকে আছে এটা মনে হয়।এবং খালি পেটে হয় মাঝে মাঝে। এমন এটা কিসের জন্য হয়।আমি ওমিপ্রাজল। ইসোমপ্রাজন। মোটিগাট । এপিক্লোন এবং পাইলোট্রিপ খেয়েছি।স্যার আমার রিপোর্ট গুলো এবিষয়ে পরামর্শ চায়।
মাথার মধ্যে ঘোরে ভাব লাগে। রাতে ঘুম হয় না। মথার তালু জ্বলে মাথার পিছনে হাল্কা ব্যাথা করে শুধু পেট নিয়ে চিন্তা হয়।মাথার মধ্যে অস্তি লাগে। মনে হয় পেটে কি যেন হয়েছে। মনে থাকে কম। কানে কম শুনি মনে হয়। এমন মনে হয়।কোন কাজে মন বসাতে পারি না। একটু উপরে উঠলে ভয় লাগে মনে হয় পড়ে যাবো মনে হয়। কিন্তু পড়ি নাই কোন দিন।মোবাইলে গুগোলে পেট ও মাথা নিয়ে সাচ দিয়ে এই গুলো নিয়ে চিন্তা করি। দিদি ভাই আমি মন সব সমায় অস্তি লাগে পরামর্শচায়।