স্টার- হ্যাস- ড্যাস- স্পেস। ফেসবুকে আজকাল সেনসিটিভ শব্দ লিখতে গেলে এসব দিতে হয়। নীচের লেখাটি তাতে ভর্তি।
_______________________________________________
“পুলিশ ইন্সপেক্টর গোপাল বাদনে আমার মৃ*ত্যুর জন্য দায়ী। সে আমাকে চার বার ধর্ষ*ণ করেছে। বিগত পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে আমাকে ধর্ষ*ণ সহ শারীরিক ও মানসিক নি_র্যাতন করা হয়েছে”
মহারাষ্ট্রের সাতারার ঘটনা। বছর ছাব্বিশের সদ্য পাশ করে বেরোনো ডাক্তার। আপাতত তিনি ম*র্গে শুয়ে। সুই*সাইড “করেছেন”। তার বাম হাতেই লেখা ওপরের কথা গুলো।
এর আগে জুন মাস নাগাদ তিনি ডিএসপি কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন এই নি_র্যাতনের কথা। কিচ্ছু হয়নি।
এই নি_র্যাতন এবং ধর্ষ*ণের কারণ কী? না বিচারাধীন আসামীদের না দেখেই পুলিশকে ফলস ফিটনেস সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকার করা। পরিবার জানিয়েছে এর আগে তাকে জোর করা হয়েছিল ফলস ডে*থ সার্টিফিকেট দিতেও।
বছর ছাব্বিশের এক ঝকঝকে তরুণী। এমবিবিএস পাশ করে সরকারেরই বেঁধে দেওয়া বন্ড পোস্টিং দিচ্ছিলেন গত দু’বছর ধরে, সরকারেরই হাসপাতালে। তাকে পুলিশ দিনের পর দিন জোর করে এই অনৈতিক এবং বেআইনি কাজ করার জন্য। তিনি অস্বীকার করলে প্রথমে জোটে হ্যারাস#মেন্ট৷ তারপর যেখানে তিনি ভাড়া থাকতেন সেই বাড়ির মালিকের ছেলের মাধ্যমে মান*সিক নি_র্যাতন। তারপর ধাপে ধাপে ফোনে সাংসদের হুম*কি পর্যন্ত।
কে বলে আমাদের সিস্টেম নিষ্ক্রিয়! কে বলে আমাদের সিস্টেম কাজ করে না! একটা কাজ করতে চাইলে পুলিশ থেকে এমপি কীভাবে জান প্রাণ লড়িয়ে দেয় দেখেছেন? বাধ্য করে জাস্ট কেরিয়ার শুরু করা একজন ছাব্বিশের তরুণীকে সুই*সাইডে?
________________________________________________
স্টার- হ্যাস- ড্যাস- স্পেস। ওয়েলকাম টু কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড। মাথা থেকে পা পর্যন্ত যে কমিউনিটি ডুবে আছে লুম্পনেরাজ আর অপরিমেয় অন্যায়ে। যার একের পর এক ঘটনা শুনে প্রথমে নির্বাক হয়ে যেতে হয়, তারপরে চিৎকার করতে গিয়ে গলা বুঁজে আসে, রগ ফুলে যায়। কিন্তু তারপরেও স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করতে হয় বই কী। ফেসবুকীয় লেখায়। রাস্তার প্রতিবাদে। ঘরোয়া শোকে… সর্বশক্তিমান সিস্টেমের কোনও দায় নেই তো মরাল হওয়ার। মরালিটির সমস্ত দায় তো হেল্পলেস ইনডিভিজুয়ালের!
এবং সেই স্টার- হ্যাস- ড্যাস- স্পেসই গিলে নেয় আর জি কর থেকে সাতারা। হেডলেস মব ভার্সাস হার্টলেস সিস্টেম। আমাদের সবথেকে বড় পরাজয় শুধু “উই ওয়ান্ট জাস্টিসের” নিরুত্তাপ কবরে নয়; বরং চটুল রিলে ডুবে যাওয়া একটা জেনারেশনের ভেতর “কোথাও কিচ্ছু হচ্ছে না, হবে না, হয় না” এই দৃঢ় বিশ্বাসের শহীদ মিনার স্থাপনেও; নিজেকে এক কোণে গুটিয়ে নিয়ে এই স্ট্র্যাটেজাইজ করায় যে ঠিক- ভুল- নৈতিক- অনৈতিক ধুয়ে জল খেয়ে লাভ নেই ভাই, বেঁচে থাকতে হলে পাওয়ারফুলের বিপরীতে হেঁটো না। একটা দিশাহীন, আনজাস্ট, ইনডিফারেন্ট সিস্টেমের মর্গে হিমশীতল লা*শ হয়ে শুয়ে থাকার চেয়ে রিগ্রেটফুল হেরো হয়ে, মাথা নামিয়ে অন্তত বেঁচে থাকা বেটার লজিক্যাল ট্রেড-অফ নয় কি?
________________________________________________
আবারও একটি ধর্ষ*ণ এবং সিস্টেম স্পনসর্ড খু*ন। আবারও এক তরুণী ডাক্তার। নিজের স্বপ্ন, কাজ, দায়িত্ববোধ অথবা নৈতিকতার মার্কশিটে মেপে মেপে অনার্স পাওয়ার পর অবশেষে আবারও ক্রুড ডে*থ রেটের ভেতর নিষ্ফলা এক স্ট্যাটিস্টিক্স হয়ে যাওয়া।
এবং আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন কী নর্মালাইজড হয়ে গেছে সব। খুব বেশি পেছনে যেতে হবে না, জাস্ট গত এক সপ্তাহের খবর দেখুন। কোথাও কর্তব্যরত গাইনি সিনিয়র রেসিডেন্টকে ডে*থ এবং রে*প থ্রেট দেওয়া হচ্ছে, কোথাও হাসপাতালের ওয়ার্ডের বাথরুমে নাবালিকাকে ধর্ষ*ণ করছে অন্য হাসপাতাল থেকে অবলীলায় ঢুকে আসা দালাল, কোথাও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভেতর মে*রে ডিউটিরতা সিস্টারের মাথায় বাইশ খানা স্টিচ ফেলে দিচ্ছে, কোথাও বোনের ইভ_টিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় নিজের জন্মশহরে সার্জেন দাদাকে মে*রে শুইয়ে দিচ্ছে লুম্পেনরা। আপনি এর মধ্যে বিশ্বাস করতে বাধ্য যে দিনগত পাপক্ষয়, কাজ আর জীবনের সার্থকতা আর তার শখ আহ্লাদ নিয়ে পরে ভাবব’খন, অন্তত আমাকে পি*টিয়ে মে*রে যে ফেলছে না এই বা কম কী!
কেন বলুন তো? কারণ গত একবছর হ’ল মোটামুটি এরা সবাই জানে আমরা যাইই করে নিই, যদি একটু দাদা ধরা থাকে তাহলে কেউ কিচ্ছুটি করতে পারবে না। আর আমরাও জানি আপাতত পিঠ বাঁচিয়ে বেঁচে থাকতে জানার চেয়ে বড় স্কিল আর কিছু নেই। আরজিকর আমাদের সেই সোশিও-পলিটিকাল ওয়াটারশেড যা স্ট্যাম্প মেরে দিয়েছে যে সিস্টেম যদি চায় তাহলে একটা হিমালয়সম অপরাধ ঘটিয়ে ফেলার পরেও জাস্টিসের সমস্ত আগুন স্লোগানকে মিথ্যে, অবহেলা আর নির্লজ্জ ক্ষমতা দিয়ে কবর চাপা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। এবং তার কোনও কনসিকোয়েন্স নেই। এই কথা একবছর আগেও বলেছিলাম, আবারও বলি- ব্যক্তি মানুষের অপরাধ করা এক জিনিস। কিন্তু সিস্টেম একটা অপরাধ করে তাকে ডিফেন্ড করে যাওয়া এবং তার কোনও কনসিকোয়েন্স না থাকা সেই মারাত্মক ডোমিনো এফেক্টের স্টার্টিং পয়েন্ট যেখানে সবাই জানে কিছুতেই কিছু হয় না।
________________________________________________
এদেশের অন্য প্রান্তে, আমাদেরই আরেকজন বোনকে কর্তব্যরত অবস্থায়, দিনের পর দিন, সিস্টেম স্পনসর্ড চূড়ান্ত শারীরিক ও মানসিক নি_র্যাতনের পর আত্মহ*ত্যায় বাধ্য করা হ’ল– এ যদি অন্তত প্রফেশনের জায়গা থেকে, সহনাগরিকের জায়গা থেকে আমাদের চিৎকারের কারণ না হয় তাহলে আমি জানিনা আর অন্তত কী নিয়ে কথা বলা উচিত।
করেও কোনও লাভ নেই সম্ভবত। কিন্তু নির্বিকার, অসহায়, জীবন্মৃত হয়ে অবশ্যম্ভাবী জরার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেয়ে চিৎকারটুকু রেজিস্টার করা ভালো। তার মধ্যে থেকেই, লজিক্যাল ট্রেড- অফ আর মরালিটির ধার না ধেরে, কোনও একদিন হয়ত ছিটকে বেরিয়ে আসবে এতদিনের সমস্ত স্টার- হ্যাস- ড্যাস- স্পেসগুলো। তীক্ষ্ণতায় ধেয়ে যাবে, গেঁথে যাবে নির্লিপ্ত সিস্টেমের ভেতর।
নৈঃশব্দ নর্মালাইজড হওয়ার আগে বিস্ফোরণই নিয়ম হওয়া ভালো।
 
								 
											 
				









