প্রত্যেকটা সার্জনেরই একটা প্রিয় সার্জারি থাকে। সেটা করতে তার ভালো লাগে। আমারও চয়েসে সেরকম একটা আছে। সেই কেস, যত জটিল হোক, ঠিক ঝাঁপ দিয়ে দেবো। নিজেকে রেজিস্ট করা যায়না। এমনকি এই পরিণত বয়সেও।
অনেকদিন আগে, সেই তিরাশি সালের ডিসেম্বর মাসে, তখন হাসপাতালে বছরখানেক কাজ করে করে সবে হাত পাকিয়েছি, বন্ধুরা বলে, আসল অ্যাসিড টেস্ট হল সরকারী হাসপাতালের নিরাপদ ঘেরাটোপের বাইরে, কোন বড় ছাতার তলায় না থেকে sole responsibilityতে যদি মেজর কেস নামিয়ে আসিস, তবে মানবো তোকে।
সেই তরুণ বয়সে বন্ধুদের কাছে নিজের যোগ্যতা দেখানোর সুযোগ একটা জুটে গেল। বাড়িতে এক ছোটখাটো কার্পেন্টার কন্ট্রাকটর কাজ করছিল। তার মায়ের অপারেশন করে ফেললাম। বালিগঞ্জ স্টেশন রোডের একটা নার্সিং হোমে। সার্জেন ফি জুটেছিল সতেরোশ’ টাকা। যেদিন রোগীটার ছুটি দিই, লুচ্চা বন্ধুগুলো সেই টাকাটা সেইদিনই উড়িয়ে ছেড়েছে।
প্রথমেই ট্যাক্সি। পার্ক সার্কাস টু এসপ্ল্যানেড। এমনিতেই আমরা ছিলাম 39 নয়তো বড়জোর পকেটে পয়সা বেশি থাকলে বেকবাগান হাওড়া মিনির প্যাসেঞ্জার। 39 রুটে ভাড়া ছিল পঁচিশ পয়সা, আর মিনিতে ছিল ষাট। সেদিন ছ’জন মিলে এক ট্যাক্সিতেই! টাইগারে Savage Harvest দিয়ে শুরু। টাইগারের আবার ভেতরেই বিয়ার পাব ছিল। সিনেমা দেখতে দেখতেই গেলা যায়।
ম্যাটিনি শেষ। এবার জালি মালগুলো টেনে নিয়ে গেল নিজামে।
ভরপেট নিজাম তারপর আমিনীয়া মারিয়ে এদিক সেদিক ঘুরতে ঘুরতে Ritz Continental আর Grand-এর নীচে সুন্দর সুন্দর জিনিস দেখতে দেখতে এবার সবাই হাজির হল সোসাইটি সিনেমা হলে। সেখানে চলছে, Paris, I love you. তার পোস্টার দেখেই সকলে ফিদা। তার ওপর তখন দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিক বেরোচ্ছে নীরদ মজুমদারের পুনশ্চ পারী। অনেকেই সেটা পড়ছে বা দেখছে। সকলে এবার নাইট শোয়ে ঢুকলাম। সে যে কী লক্কড় সিনেমা, যারা দেখেছে তারাই বুঝবে। মোটামুটি বলতে পারি অজস্র সুতোবিহীন একটা ফিলিম।
এইভাবে আমার প্রথম উপার্জিত সার্জন মানির সেলিব্রেশন হয়েছিল।
এত হ্যাজানোর আরেকটা উদ্দেশ্য আছে।
এই পোস্টের একটা দ্বিতীয় পার্ট আছে। সেটা পাবে আমার বেলাল হোসেনের চেম্বার ডায়েরী পেজটাতে।। সেটা এখানে দেওয়া গেল না।।