ফাঁকা ব্যালট বিষয়ে একটি কাল্পনিক সংলাপ
– শুনেছেন, বাজারে খবর, রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল নাকি অধ্যাপক-চিকিৎসকদের ফাঁকা ব্যালট জমা করতে বলছেন?
– স্বাভাবিক। ওঁকেও তো কলকাতার কোনও মেডিকেল কলেজে ফিরতে হবে।
– আচ্ছা। কিন্তু উনি নাকি বলছেন, সরকার নাকি ওঁকে এমন করতে বলেছেন। সত্যি নাকি?
– বলতেও পারেন। বলতেই পারেন। সরকারের কথা ওঁর মতো করে ক’জন ধরতে পারে! বাম আমলে উনি ঘোর বাম ছিলেন, পরিবর্তনের পর কংগ্রেস ঘুরে আপাতত তৃণমূল। সরকারি বাণী অনুভব করার ব্যাপারে উনি বিশেষজ্ঞা।
– তাই নাকি? কিন্তু উনি নাকি বলছেন, ফাঁকা ব্যালট না দিলেই উনি বদলি করে দেবেন। ওঁর এত পাওয়ার?
– হতেও পারে। তাছাড়া এ তো চালু কথা, ফেল করা স্টুডেন্ট ভালো প্রাইভেট টিউটর হয়। যিনি হাজার তেল মেরেও কলকাতায় থিতু হতে পারলেন না, বদলির ভয় দেখানো তো তাঁরই মানায়!
– সে কী!! আচ্ছা, বাজারে যেমন শুনছি, আরজিকরের অধ্যক্ষ তাহলে এমন বেপরোয়া হয়ে সামনে বসিয়ে অধ্যাপক-চিকিৎসকদের তৃণমূলপন্থীদের ভোট দিতে বাধ্য করলেন কেন?
– স্বাভাবিক। ওঁকে তো কলকাতায় থাকতে হবে। প্লাস, দুর্জনে বলে, উনি ভাইপোর মুখের চোটের এমন জব্বর চিকিৎসা করেছিলেন যে তার ধাক্কা সিঙ্গাপুরে গিয়ে শুধরাতে হয়। ছাত্রদের তাড়ায় পেছনের রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাতে গিয়ে নিজের বেইজ্জতি তো বটেই (অবশ্য ইজ্জত থাকলে তবেই না বেইজ্জতি!!), দলকেও যারপরনাই অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন। সে কলঙ্ক মোছার একটা সুযোগ তো ওঁরও প্রাপ্য।
– সেটা ঠিক। ওদিকে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের ব্যালট নাকি প্রিন্সিপাল-ভাইস-প্রিন্সিপালকে টপকে কলেজের মালিক গোছা করে বাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
– আহ্, সেটাই কি প্রত্যাশিত নয়? সেই কলেজে টাকা কার খাটছে, ভুলে গিয়েছেন নাকি!! তাহলে??
– আর বজবজের জগন্নাথ মেডিকেল কলেজে নাকি এখনও ব্যালট দেওয়াই শুরু হয়নি?
– আরে সেটাও তো স্বাভাবিক! এদিক-ওদিক পয়সা খাইয়ে মেডিকেল শিক্ষাব্যবসা চালু করা গিয়েছে বটে, কিন্তু এই উন্নয়নের বাজারে চালু রাখতে পারা তো সহজ নয়…
– যাক গে সেসব কথা। অধ্যাপক-চিকিৎসকদের ভোটে নাকি বেশ কিছু হাউজস্টাফ পিজিটি, অর্থাৎ যারা নাকি সেই অর্থে ছাত্র, তারা নাকি টিচারদের দাবড়ানি দিচ্ছে!! এই ব্যাপারটা বিশেষ করে ইয়ে নয় কি?
– একেবারেই ইয়ে নয়। বুঝতে পারছি, গত কয়েকবছরে পশ্চিমবঙ্গের ডাক্তারি শিক্ষার হাল বিষয়ে আপনার ধ্যানধারণা অতি ক্ষীণ। আপনি বোধহয় জানেন না, প্রাথমিকের মতোই ডাক্তারিতেও ইদানীং পাশফেল উঠে গিয়েছে। মানে, খাতায়-কলমে না হলেও বাস্তবে… তা, ছাত্রছাত্রীদের যে বিশিষ্ট অংশ (গরিষ্ঠ অংশ কখনোই এমন নয়) স্রেফ সেই পথের সুযোগে ডাক্তার হয়ে উঠেছেন, তাঁদের তো রাজনৈতিক দলের ধামাধরা না হয়ে নিজগুণে করে খাওয়ার উপায়ই নেই। অগত্যা…
– এ তো ভয়ানক কথা শোনালেন!! তাহলে একটাই প্রশ্ন। আপনি এত ঝুটঝামেলায় না জড়িয়ে ফাঁকা ব্যালটটা যথাস্থানে দিয়ে দিয়ে শান্তিতে থাকতে চাইছেন না কেন?
– আশ্চর্য!! এটা কোনও প্রশ্ন হলো! আমাকে তো ডাক্তারিটা করতে হবে। সেটা করেই খেতে হবে। আমার জন্য কোনও দলীয় মাসোহারা নেই, দাদা-দিদি-মাসি-পিসির অভয়-হস্ত নেই। আছে শুধু পেটে অল্পস্বল্প বিদ্যে আর বুকে তার চাইতে আরেকটু অল্প সাহস। যেখানেই বদলি করুক, রোগী দেখার যোগ্যতা বা ক্ষমতা তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। অতএব…
যে পেন দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখি, সেই পেন দিয়েই ব্যালট ভরব। প্রেসক্রিপশন লেখার সময় অন্য কোনও ধান্দাবাজির কথা ভাবি না, ব্যালট ভরার সময়ও ভাবব না।
ঠিক বলছি তো?