??????????
??????????️??️???
বিন্দাস– পুরো নাম বিনয় দাস। ডাক্তার বিনয়দাস। আসল মানুষটিকে বোঝাতে সবাই নামটা ছোটো করে বিন্দাস বলেই ডাকে। আর গজুরাম– পুরো নাম গজুরাম শাউ। একজন স্বনামখ্যাত ফুচকাওয়ালা। একই জায়গায় দুজনের ব্যবসা।
সন্ধ্যেবেলা যখন ডাক্তারের খুপরি ফাঁকা হয়ে যায় তখন ডাক্তার পাশের সিনেমাহলের টিকিট কাউন্টারের পেছন কোণায় একটা বোতল নিয়ে বসে পড়েন। গজুরাম ফুচকা বিক্রি করতে করতে মাঝে মাঝে এসে দু একটা চুমুক দিয়ে যায়– তখন ও রঙিন হয়ে যায় ওর হাতে তখন ঘুঙ্গরুর বোল ওঠে। দেশের বাড়িতে বৌ বাচ্চার জন্য ওর মন তখন হয়তো আতুরি পাতুরি করে। তাই হয়তো দু পাত্তর পান করে।
সেই সময় পাশেই দোকানে ব্যস্ত হাবুদা মোটা চশমার ফাঁকে চোখ মেলে ফায়ার পান বানায়। মাথার ওপরে জ্বলে থাকা হাই পাওয়ার আলোর গরমে ঘামতে ঘামতে হাবুদা দোকান সামলায়। গানপাগল হাবুদার দোকানে সব সময় গান বাজে। কখনও কিশোর, মান্না– কখনও লতা আশা।
ওসব এখন ব্যথাময় স্মৃতি– রঙিন পানীয়ের দাম এখন আকাশছোঁয়া। এখন ডাক্তার ওষুধের ড্রপারে করে মেপে মেপে মদ্যপান করেন। আনাড়ি ডাক্তার গত দুদিন স্টেট ব্যাঙ্কে একটা কাজ করতে ব্যর্থ চেষ্টা করে আজ বাজারের পিএনবির ব্র্যাঞ্চে সেই কাজে এসেছেন।
সুপার ঘূর্ণিঝড়ের সাতদিন পরে আজ বিজলি এসেছে। বিন্দাস চান হবে। কিন্তু পিঠের ঠিক মাঝখানটা কী ভাবে পরিষ্কার হবে সেটা ভাবতে ভাবতে ডাক্তার আকুল– দুটি বৈ হাত মোর নাই রে জাতীয় দুশ্চিন্তা। অন্যমনস্ক ডাক্তার বিন্দাস কাচের দরজা খুলে সোজা কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়াতেই চারপাশে একটা হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে গেল। কেউ বলে বন্দুক আন কেউ বলে হাত ধুইয়ে দে। তারপর থার্মাল গান স্যানিটীজার …. ঈস কোন কথা থেকে কোথায় এসে গেছি।
যাইহোক ডাক্তার বিনয়দাস উর্ফ বিন্দাস ব্যাঙ্ক থেকে বেরিয়েই দেখেন গজুরাম চৌরাস্তার মোড়ে ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছে– মুখখানি শুকনো। লক ডাউনে শুধু ওর ফুচকা বিক্রি বন্ধ হয়নি, ঐ প্রলয় ঝড়ে ওর ভ্যানরিক্শার ছাউনিও উড়ে গেছে।
ডাক্তার ওকে ফিসফিসিয়ে ডাকেন– “গজুরাম তোমার পরিবারের খবর কী? চলছে কিভাবে? টাকা পয়সা আছে? লাগবে কিছু? লজ্জা কোরোনা বলো ….”
গজুরাম হাসলো। ওর হাসিতে ঝমঝমে রোদ্দুর নিভে লক্ষ তারা ঝিকমিকিয়ে উঠলো। “ না ডগদরবাবু হমার দিন গুজরান হয়ে যাচ্ছে …” আবার গালভাঙা মুখে আকাশ জুড়িয়ে দেওয়া হাসি। একটা আঙুল তুলে ওর ভ্যানরিকশাটার দিকে দেখালো। ওর ভ্যানরিকশা কলা আপেল আম লিচুতে ভরে আছে। পিয়ানোর ঝঙ্কারে তারারা হেসে ওঠে। সহস্র বেহালার ছড় সুর তোলে। “আমি সকাল সকাল ফলপট্টি থেকে খরিদ করি আর দিনভর বেচে দিই … হুজুরের কিরপায় চলে যায় …” আশার মাতাল গলা বেজে ওঠে “আও হুজুর তুমকো সিতারোঁমে লে চলুঁ …” করোনা উম্পুনকে হারিয়ে দিলো এক হার না মানা হাসি। গজুরাম ডাক্তার বিন্দাসকে এক আকাশ তারা উপহার দিয়ে ভ্যানরিকশা নিয়ে রোদ্দুর ভেদ করে এগিয়ে চলেছে।
মনটা আনন্দে ভরে উঠলো।