রকম ১– ঠাণ্ডা দেশের পাখিরা শীত খুব বেশি বোধ হলে গরমের দেশে উড়ে উড়ে আসে| মূলত খাদ্য এবং শরীরকে আরাম দেয়ার জন্য| হাজার হাজার মাইল উড়ে আসে তারা| ডানায় শ্রমের ঘাম ঝরে কিনা হাত দিয়ে না ছুঁলেও বুঝি– নিশ্চয় ঝরে| এইসব পাখিদের বলে পরিযায়ী| দেশের শ্রমিক দেশে কাজ না পেয়ে ভিন দেশে ছোটে– নিজের এবং পরিবারের খাদ্যসংগ্রহে| যে দেশে তারা যায় সেখানকার কলকারখানায় দেয় তাদের শ্রম ও মেধা| তাদের ঘাম চোখে দেখি| তারা পরিযায়ী শ্রমিক| বেশ ঠিক আছে| কোনো অসুবিধে নেই|
যাঁদের শ্রমে দেশের উন্নতি তাঁদের নামের আগে পশুপাখির বিশেষণ বসাতে নাই বা কাঁপল চোখের পাতা| কারণ শুরুতেই লেখা– এ এক অন্যরকম গণতন্ত্র!
কিন্তু একটা বিষয় এই অন্যরকম গণতন্ত্রীরও মানতে অসুবিধে হচ্ছে| যে সব উচ্চবিত্ত ভারতীয় সন্তান দেশের পয়সায় বিদ্যে হাঁকিয়ে প্রচুর টাকা রোজগারের ধান্দায় বিদেশে যান এবং মাঝে মাঝে নিজের পাহাড় সাগরে ঘেরা ঘরবাড়ি কিংবা নিজের রান্না করা কিছু আজব খাদ্যের ছবি দিয়ে যান লাগাতার তাঁদের “পরিযায়ী শ্রমিক” বলা হচ্ছে না কেন? বা আমাদের বর্তমানে so called পরিযায়ী শ্রমিকের থেকে আলাদা করা হচ্ছে কেন? তাঁরাও তো অন্যজায়গায় গিয়ে শ্রম ও মেধা লাগিয়ে পয়সা রোজগার করছেন–
ওহ! এইবার বুঝতে পেরেছি| এত গাধা না আমি? অনাবাসী ভারতীয় তো আর কেবল দুমুঠো খাবারের জন্য অন্য দেশে যাচ্ছেন না! তাঁরা যাচ্ছেন ফাটাফাটি সব রেজাল্ট নিয়ে এবং প্রচুর প্রচুর উদ্বৃত্ত অর্থ এবং নিজের পরিবারের স্বাস্থ্যনিরাপত্তার জন্য! যদিও বেশিরভাগই ওই প্রচুরের খুব সামান্যই খরচ করেন স্বদেশের দুর্যোগে তবু তাঁরা কেন পরিযায়ী শ্রমিক হতে যাবেন? মরণ! না না তাঁরা সম্মানিত অতিথি~ কর্মস্থলে রোগ বাঁধিয়ে তাঁরা ঠিকসময়ে, চাই কি বিনা ভাড়ায় প্লেনে চেপে আসবেন|
তাহলে দাঁড়াল কী? পরিযায়ী হল পাখি আর আমাদের “ঠিক করে রাখা শ্রমিকরা”| কোন শ্রমিক?– যাঁদের কেবল শ্রম আছে কিন্তু মেধা নেই –এরকমটা ঠিক করে রেখেছি আমরা| এক একটা হঠাৎ বিগড়ানো মেশিন বা কাঠের ভাঙা জানলা মেরামতিতে একজন শ্রমজীবীর ব্যক্তিগত ও তাৎক্ষণিক মেধা যে কতটা কার্যকরী হয় থিয়েটারের সেট নির্মাণে কিংবা জীবনের বহু বিপদের ক্ষেত্রে খেয়াল করলেও এখন মনে রাখতে বয়েই গেছে আমার!
এখন আমরা কেবল ভাগাভাগি করব| বিলাতফেরত সুটমুট পরা স্লাইট করে দামী গন্ধ মাখা আইসক্রিমকর্মী কিংবা শুঁটকিমাছ বিক্রেতা আবার সেখানকার ডাক্তার ইনজিনিযার একযোগে হবেন সম্মানীয় অতিথি আর দেশের কারখানা সচল রাখা শ্রমজীবী হবেন পরিযায়ী|
আরে কীসের ভাগাভাগি হচ্ছে ভাই? শ্রম না মেধার? অর্থ অনর্থের? নাকি অন্নদাতা আর অন্নছাড়াদের? লক্ষীছাড়ার মত অন্নছাড়া! তাদেরই বিশেষণ তো আপনাদের এই “পরিযায়ী”? আরে ভাগাভাগির exact নিরিখটা তো বলবেন? নাকী নিজেরাই জানেন না!
পাখি আর ভারতীয় শ্রমিক| প্রথম পরিযায়ীও ফিরবে হাজার হাজার মাইল| তবে সে রাজার মত| স্বাধীন চিত্তে| খেয়ে পেটমোটা করে নিজের ডানায় ভর দিয়ে| উড়তে উড়তে নাকি ফের মেদও কমে তাদের!
আর এই দ্বিতীয় পরিযায়ীর তো মেদই নেই| হাড়ে চটকানো পেট| ডানা কাটা| তারা ফেরে ছাগল কিংবা গরু হয়ে| ঘরে থাকো বলে রোগের ভয়টা দেখালেন অথচ ফেরার পথ রাখলেন না| গরুর দল দৌড়োলো| দুপায়ে| মাঠ নদী পেরিয়ে| লাইনের ধারে খেল, ঘুমোল আর মরে গেল| মরার ভয়ের যুক্তি খুঁজতে ব্যস্ত হলেন– কেন গেলি তোরা লাইনের ধারে? বলি — সুরম্য প্রাসাদ কিংবা ভোজনপাত্র সাজিয়ে রেখেছিলেন নাকি কাকারা?– যেখানে ঘটতে পারত তাদের Beauty Death?– শ্রমিকের কাব্যময় মৃত্যু!
এবার আমাদের দ্বারা বিশেষভাবে ভূষিত পরিযায়ীগুলোর বুদ্ধিমান হওয়ার পালা! যদি ধরে ফেলে তারা– শ্রম ও মেধাকে একপিঁড়িতে বসানোর তীব্র অনীহা– মেধাকে খানিক বেশি জৌলুসে ভরানো এবং অর্থবানকে অগ্রে রেখে চলাটাই এই ভাগাভাগির একমাত্র প্রেক্ষিত? যদি বুঝে যায় বাকি সব কটা পেশার লোকদের লকডাউনে রেখে কেবল তাদেরই রোগগ্রস্ত করে ছাড়া হল? Better to say– রোগগ্রস্ত হওয়ার যথেষ্ট ফাউ টাইম পেল তারা! ভাগে বিব্রত হতে হতে এবার যদি একযোগে কেবল নিজের স্বার্থ বুঝতে শুরু করে তারা, ভদ্রলোকের আশ্বাসের ভরসা ছেড়ে প্রবল রাজশক্তির বিরুদ্ধে যদি খেপে ওঠে–? কিংবা ধরুন কুয়ো নয়– কুপিয়ে কুপিয়ে একটা বড় খাদ বানালো তারপর সবকটা তাতে ঝাঁপ মেরে মরল! আজ দেখলাম অবোধ শিশু করোনায় মৃত মায়ের শরীরের চাদর তুলে বারবার মার মুখ দেখছে| বড় হয়ে ওই শিশু যদি ভারসাম্য হারিয়ে নিখুঁত এক খুনি তৈরি হয়? তখন? তখন? –পারবেন তো অনাবাসী বা দিশি মেধাবীদের দিয়ে অর্থনীতি সামাল দিতে? তারা তো একদিন সুন্দরবন টহল মারবে আর সাইডে গিয়ে রুমাল দিয়ে নাক চাপবে| নৌকাটা চালাবে কে রোজ রোজ মাছপচা ভূতগন্ধ কালো জলে?
এই শুনুন না– রামায়ণের জটায়ু কিংবা পুরানের গল্পের পাখিগুলো কিন্তু খুব বুদ্ধিমান| শ্রমিককে পাখির বসন পশুর ভূষণ দেয়ার আগে নিদেনপক্ষে ঈশপের ধুরন্ধর পশুপাখির গপ্পগুলো পড়ুন রে বাবা!
থামব না| দ্বিতীয় ‘রকম’ লিখব– যখন ইচ্ছে হবে তখনই|
Right point. Income inequality and all sorts of inequality is increasing in our country. Classification is increasing.
Sad situation in the country.