চাণক্য বলেছিলেন, “ঋণশেষোহগ্নি শেষশ্চ ব্যাধিশেষস্তথৈব চ। পুনশ্চবর্দ্ধতে যস্মাত্তস্মাৎ শেষঞ্চ কারয়েৎ।।”- ঋণ, ব্যাধি ও অগ্নির শেষ রাখতে নেই- যেকোনো সময় সুযোগ পেলেই এরা আবার জেগে ওঠে এবং মরণকামড় দেয়। ঠিক একইভাবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনেরও শেষ রাখতে নেই, তাকে দড়ি ধরে একেবারে মাটিতে আছড়ে না ফেলতে পারলে সে জেগে উঠবে আবার, সঙ্গে থাকবে তার ধামাধারীরাও।
প্রায় একশ’ দিন আন্দোলন করে রাজপথ থেকে সাময়িক বিরতি নিতে বাধ্য হয়েছিল ডাক্তারেরা- কাজে ফিরতেই হতো যে! তার একমাসের মধ্যেই আন্দোলনটাকেই ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বানিয়ে দিলো সরকার। যত রকমের নোংরা অপপ্রচার চালিয়ে আন্দোলনের গোড়ায় আঘাত হেনেছে সরকার। মমতা বিচক্ষণ নেত্রী, দু’দিনের জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্ব তাঁর নাগালও পাবে না আর তাঁর স্তরে নামতেও পারবে না এটাই স্বাভাবিক। ডাক্তারেরা ভেবেছিল সরকার হয়তো এবার স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে বাধ্য হবে, না ভেবে উপায়ান্তরও ছিল না- গণতন্ত্রে নির্বাচিত সরকারকে এটুকু বেনিফিট অফ ডাউট তো দিতেই হবে!! কিন্তু মমতা তাঁর ক্রিমিনাল বন্ধুদের প্রতি চির অনুগত সে প্রমাণ আগেও পেয়েছি আমরা, আবারও পাচ্ছি।
সব আবার আগের জায়গায় ফিরে গেছে- অভীক, বীরূপাক্ষ ইত্যাদি ইত্যাদি। কাউন্সিলের সব মাথারা যথাস্থানে রয়ে গেছেন। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। সারদা থেকে আরজিকর- তৃণমূলের আপাত ইনোসেন্ট মানুষগুলোর সাথে সিবিআইয়ের কেমিস্ট্রিটা বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়। মাঝখান থেকে এত বড় একটা গণ আন্দোলন নাকি বিরোধীদের চক্রান্ত, টাকার খেলা ইত্যাদি বিভিন্ন কথাবার্তা বাজারে ছড়িয়ে গেল। ডাক্তাররা নাকি সরকারি হাসপাতালে কাজ বন্ধ করে বাইরে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী দেখছে ইত্যাদি নানা কথাবার্তা। মাঝখান থেকে একখান wbjda-র উত্থান হলো কোত্থেকে- যতভাবে খিচুড়ি পাকানো যায় সরকার কোনো স্টেপ বাকি রাখেনি।
মাঝখান থেকে নাটক চলছে কলেজে কলেজে। সিসিটিভির নাটক, অদ্ভুত অদ্ভুত সময়ে গেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার নাটক, পরীক্ষায় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নামিয়ে দেয়ার নাটক। এদিকে ডাক্তারদের, টেকনিশিয়ানদের ব্যাগ থেকে জিনিস চুরি হচ্ছে- সর্ষের মধ্যেই ভুত, এদিকে বাইরের গেট আটকানোর নাটক চলছে! এদিকে এস.আর.দের নামমাত্র টাকায় বন্ড খাটিয়ে এখন সরকার বলছে তাদের বন্ডটা করা হয়নি ঠিক মতো, তারা তাদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রেই রয়ে গেছে বলে। সরকার এতদিন চোখ বন্ধ করে তাদের মাইনে দিচ্ছিল, তাদের হাসপাতালের আধিকারিকরা চোখ বন্ধ করে তাদের পুষে রেখেছিল।
কিছুই হবেনা, এই লোকগুলোকে আবার কোর্টে যেতে হবে, জুতোর সুকতাল ক্ষয়ে ক্ষয়ে তারপর এরা আবার নিজেদের ন্যায্য সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে- নির্লজ্জ সরকার জিভ কেটে বলবে ভুল হয়ে গেছিল এট্টু- হ্যারাসমেন্ট হবে এই আর কি!!
এরকম আরো অনেক কিছু হবে, শঠের ছলের অভাব হয়না, সেই শঠ যদি আবার মমতা হয়, তাহলে তো কথাই নেই। এই প্রতিহিংসাপরায়ণ মহিলা যতদিন থাকবে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের জীবন জ্বালিয়ে শেষ করবে নিঃসন্দেহে।
আর প্রত্যেকবারই গালে গালে চড় মেরে আমরা নিজেদের বলবো, গান্ধীগিরি করে স্বাধীনতা আসেনি, অনশন করে আসেনি- স্বাধীনতা এসেছে সুভাষ বোসের হাত ধরে, সংগ্রামের হাত ধরে। মেডিক্যাল কাউন্সিল, স্বাস্থ্য ভবনে কিছু নেই- আসল ঘুঘুর বাসা ভাঙতে হবে, কালীঘাটে নয় নবান্নে, নইলে আবার অনেক হাঁটা হবে, আর জুতোর বাড়ি খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।