সকাল ৬ঃ০০ টা’য় গিয়ে ডাক্তারবাবুর চেম্বারে নাম লেখাও, ৮ঃ০০ টা’য় টোকেন কালেক্ট কর, ১০ঃ০০ টা’য় ডাক্তারবাবু চেম্বারে আসবেন। দুপুর ৩ঃ০০ টা’য় আপনার ডাক এল। ডাক্তারবাবু সাকুল্যে দেখলেন আপনাকে ২ মিনিট!
এই কার্যকরী ২ মিনিটের জন্য
আপনার সারাদিন নষ্ট,
অফিস কামাই,
মজুরী নষ্ট!
ডাক্তারবাবুর ভিজিট ছাড়াও
রোগীর যাতায়াত খরচা,
খাওয়াদাওয়া খরচা
(আপনার এবং আপনার সাথী-সঙ্গীদের!)
সর্বোপরি সারাদিনের ধকল!
ডাক্তার দেখানোর পর আবার বাড়ী ফেরার ধকল।
কার্যকরী ২ মিনিটের পরামর্শ পেতে
এতটা ঝঞ্জাট, এত কষ্ট !
এটাই সিষ্টেম!
শেরশাহের আমলের সেই সিষ্টেম
আজও বিদ্যমান এই পোষ্ট-আধুনিক মহাকাশ যাত্রার যুগে!
কিউট না?
অথচ আপনার অসুখটা কি ছিল?
তিনমাস ধরে থাইরয়েডের ওষুধটা খাচ্ছিলেন, তিনমাসের পর রিপোর্ট করে দেখা গেল থাইরয়েড রিপোর্ট নরমাল।
ডাক্তারবাবুর কাছে আপনার জিজ্ঞাসা করার ছিল,
“ডাক্তারবাবু, আমার রিপোর্ট তো নরমাল, আমার থাইরয়েড ওষুধ কি চলবে?
ডোজ কি একই থাকবে?
যদি ডোজ কমে তো কত ডোজে ওষুধ চলবে?
আবার কতদিন পরে রিপোর্ট করাব???”
আপনি চেয়েছিলেন এই কথা গুলো যদি ডাক্তারবাবু ফোনে ফোনে বলে দিন।
পরামর্শের জন্য ডাক্তারবাবুর প্রাপ্য দক্ষিণা (ভিজিট) দিতেও আপনি রাজি।
কিন্তু ডাক্তারবাবু জানালেন,
“তিনি অপারগ অনলাইনে পরামর্শ দিতে,
ভারতীয় সংবিধানের আইনকানুন ডাক্তারবাবুকে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে!”
অথচ আপনি রাজি ছিলেন ডাক্তারবাবুর কনসালটেশন বাবদ “ভিজিট” দিয়েই পরামর্শ নিতে।
এতে করে আপনার
১. অফিস কামাই হত না,
২. ছুটি নিতে হত না,
৩. মজুরি নষ্ট হত না,
৪. যাতায়াত খরচা লাগত না,
৫. সঙ্গীদের যাতায়াত -খাওয়াদাওয়া খরচা,
এবং
৬. সর্বোপরি সারাদিনের ধকল পোহাতে হত না!
অফিসে বসেই হয়ত ডাক্তারবাবুর প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেয়ে যেতে পারতেন।
কিন্তু ভারতীয় আইন তা হতে দেয় না!
আপনি অডিও-কল বা ভিডিও-কল,
কোন ভাবেই ডাক্তারবাবু অন-লাইনে ওষুধ সম্পর্কে পরামর্শ পেতে পারেন না। বে-আইনী বলে!!!
এমনকি নন-ইমার্জেন্সি কেস-এর ক্ষেত্রেও।
ডাক্তারবাবুর চেম্বারে সরাসরি গেলে,
ডাক্তারবাবু আপনাকে
@ চাক্ষুষ দেখে তবে ওষুধ দেবেন।
@ প্রেশারটা চেক করে দেবেন।
@ একটু বুকে ষ্টেথো বসিয়ে শরীরের ভিতরের
খোঁজটা নিয়ে নেবেন।
@ ওষুধের সাইড-এফেক্ট সম্পর্কেও খেয়াল রাখবেন।
… এই সব কিছু নিয়ম কানুন আপনারই স্বার্থে।
তাই ডাক্তারবাবু ওষুধ অন-লাইনে প্রেসক্রাইব করতে পারেন না।
অথচ এদেশে “ওষুধ” কিন্তু “অন-লাইনে” বিক্রি হয়।
আপনার কাছে ডাক্তারবাবুর “প্রেসক্রিপশন”
না থাকলেও চলবে।
ওরা আপনাকে অনলাইনে ভার্চুয়াল প্রেসক্রিপশন বানিয়ে দেবে, ভার্চুয়াল ডাক্তার দ্বারা,
যে ডাক্তারবাবুকে আপনি চেনেন না, ডাক্তারবাবুও আপনাকে চেনেন না।
অথচ আপনার পরিচিত ডাক্তারবাবু, তার পরিচিত পেশেন্ট-কে অনলাইনে ওষুধ বলে দিতে পারেন না।
অথচ বিনা প্রেসক্রিপশনে লিনেযোলিড (Libezolid – একটি হাই-গ্রেড অ্যান্টিবায়োটিক) বিক্রি হয়। দু-দিন বন্ধ হয় চাপাচাপিতে, তারপর যে কে সেই!
আজ আমি ডাক্তার! টেবিলের এপাশে।
টেবিলের এপাশ থেকে ওপাশে যেতে এক সেকেণ্ডও সময় লাগে না!
প্রয়োজনের সময় আমাদের প্রত্যেকজন ডাক্তারবাবুকে সাহায্য করার জন্য অন্য ডাক্তারবাবুর দরাজ সাহায্য পাওয়া যায়।
কখনও ফোনে ফোনে, কখনও অন্য ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে মেডিক্যাল এথিক্স মেনে সরাসরি ডাক্তারবাবুর কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়, এবং সময় নষ্ট না করেই বিশেষজ্ঞ সেই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ পাওয়া যায়। ডাক্তার হওয়ার এই এক্সট্রা সুবিধাটা এখনও বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। অন্তত পরিচিত মহলে এবং কখনও কখনও অপরিচিত মহলেও!
কিন্তু এই সাহায্য গুলো (ফোনে বা আগেভাগে দেখিয়ে নেওয়া) যদি না পাওয়া যেত,
তবে হয়ত আমরা (ডাক্তার, ডাক্তার সংগঠন ও মেডিক্যাল কাউন্সিল),
টেবিলের অন্যপ্রান্তে থাকা প্রত্যেকজন রোগীর এই দূর্বিষহ কষ্ট, ধকলের আঁচ-টা পেতাম।
অন-লাইনে ওষুধ যদি বিক্রি হতে পারে (বিনা-প্রেসক্রিপশনে বা কায়দা করে বানিয়ে দেওয়া প্রেসক্রিপশন আপলোড করে),
তাহলে অনলাইনে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ কেন পাওয়া যাবে না (শুধুমাত্র নন-ইমার্জেন্সি ও পুরোনো পেশেন্টদের জন্য)?
ডাক্তারবাবুর ভিজিট ডাক্তারবাবুরা পেতেন,
রোগীর অফিস কামাই হত না, মজুরী নষ্ট হত না, যাতায়াত খরচা, খাওয়া-দাওয়া ও সারাদিনের ধকল বেঁচে যেত!
মাঝখানে কিছু “টার্ম এন্ড কন্ডিশন” Accept করে দু-পক্ষকে কি আরো একটু সুবিধা করে দেওয়া যেত না?
এখন অনেকে বলবেন, “ভুল ডায়গনসিস হবে!”
আমি কিন্তু নতুন রোগীর কথা বলছি না।
পুরোনো পেশেন্টদের কথা বলছি,
যাদের ওষুধের ডোজ, সুগার-প্রেশার-কোলেষ্টেরল, থাইরয়েড চিকিৎসা আগে থেকেই চলছে।
শুধু মাঝে মাঝে টিউনিং দরকার,
সেই সকল পেশেন্ট কেন অনলাইনে ডাক্তারবাবুর একটু পরামর্শ পেতে পারে না?
আর ওষুধ ছাড়াও তো আরো অনেক বিষয় থাকে, যেখানে রোগী তার ডাক্তারবাবুর সাথে একটু কথা বলতে চান,
“কি করব ডাক্তারবাবু?”
” ডাক্তারবাবু, বাবার বুকে প্রচণ্ড ব্যথা-শ্বাসকষ্ট, কোথায় যাব ডাক্তারবাবু?”
“ওষুধ টা ভুলে গেছি ডাক্তারবাবু! এখন খাব?”
“প্রেশারটা খুব কমে গেছে ডাক্তারবাবু!
ওষুধ-টা কি বন্ধ করে দেব?”
“ডাক্তারবাবু, মনে হচ্ছে সুগারটা সকালবেলা ফল করছে ! মাথা ঘুরছে ডাক্তারবাবু! অকারণে ঘাম হচ্ছে। ডাক্তারবাবু, আপনাকে তো সেই মঙ্গলবারের আগে পাবোনা, এই কদিন কি সুগারের ওষুধ-টা হাফ খাব ডাক্তারবাবু?”
…… ইত্যাদি এই সকল পরামর্শ রোগীরা শুনতে চান ডাক্তারবাবুর মুখ থেকে সরাসরি,
তারা শান্তি পান, ভরসা পান!
তারজন্য তারা পেমেন্টও করতে চান।
অথচ সিষ্টেম নেই!
সেই শেরশাহের আমলের সিষ্টেম!
৬ টায় নাম লেখাও, ৮ টায় টোকেন, ১০ টায় চেম্বার শুরু, বিকেল তিনটায় ২ মিনিট ডাক্তারবাবুর ব্যস্ত-দর্শন!
মনে হয় না? এই পোষ্ট-আধুনিক যুগে আরেকটা অন-লাইন অপশন রোগীদের জন্য থাকলে ভালো হত???
কিন্তু হবে না। হবে না।
যাদের হাতের মুঠোয় সব ক্ষমতা,
সেই সিনিয়র-মোষ্ট কর্তাব্যক্তিরা জানেন না, অন-লাইন প্লাটফর্ম-টাকে আধুনিক নবীন ডাক্তারবাবুরা কত ভালোভাবে ব্যবহার করতে জানেন।
হয়ত প্রত্যন্ত গ্রামেও পৌঁছে যেত শহরের বড় ডাক্তারবাবুর পরামর্শ!
এবিষয়ে হয়ত আরো একটু মন খুলে ভাবার সময় এসেছে।
কিছু রিস্ক যদি পেশেন্ট নিতে রাজি হন,
কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে ডাক্তারবাবু যদি রোগীর দু-চারটে প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন, তবে হয়ত আখেরে লাভ-ই হত এসমাজের।
রোগী যদি এভাবে চিকিৎসা নয়,
বরং ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলার “সময়” টুকু “দাম” দিয়ে কিনতে চান, তার কৌতূহল ও প্রয়োজন মেটাতে,
নিজেকে ভালো রাখতে রোগী অন-লাইনে একজন বিশেষজ্ঞের মতামত পেতে চান,
তবে মন হয় সেটা নাগরিকের অধিকারের ভিতরেও পড়ে।
আইনকানুন বদলের সময় এখনও আসে নি?
যে আইন আপনারা বানিয়ে রেখেছেন,
তাতে তো ডাক্তার-রোগীর দূরত্ব বেড়েছে বই কমেনি,
স্বাস্থ্য সচেতনতা তলানিতে, স্বাস্থ্য পরিসংখ্যানের নিরিখে সোনার ভারতবর্ষ বিশ্বে শেষের দিক থেকে প্রথম।
এখনও চলবে সেই শেরশাহ আমলের সিষ্টেম?
অন্তত “এখনকার” এই “কিউট সিষ্টেম”-টাকে একটু আধুনিক বানানোয় যায় না?
কি? যায় না অন-লাইন পরামর্শের প্লাটফর্ম ?
এটাই তো আমারও চাই, অন লাইনে পরামর্শ।
একদম সঠিক ভাবনা। কিছু অসুবিধা তো থাকবেই। আপনাকে স্যালুট জানাই। লেখাটা ছবির মতন। চোখ বন্ধ করলেই সমাজে দেখা যায়।