বিপজ্জনক
আমি পৃথিবীর সব চেয়ে বিপজ্জনক পেশায় আছি,
এই কথা শুনে যদি কি করি, করতে পারো সেটা আন্দাজ
ঠিকঠাক না হলেও যদি বলতে পারো অন্তত কাছাকাছি,
তবে আমি ধরে নেবো আমারই মতন তুমি করো একই কাজ।
না না, LOC তে পদাতিক নই, শত্রু আসেনা চুপিসারে,
কাশ্মীরী পুলিশ নই (মার খাই যখন তখন, সেটুকুই মিল)
নই আমি উলুখাগড়া সি আর পি এফ মাওবাদী বক্সারে,
যদিও দুর্ভাগ্যে আমিও যোদ্ধা, আমার জীবনে রোজ ঘটে কার্গিল।
এই সুবিশাল দেশে আমি চিকিৎসক, গ্রামে গঞ্জে, হাটে বাজারে নগরে,
ভীড়াক্কার আউটডোরে, পাঁচতারা কর্পোরেটে, নিঃসঙ্গ পি এইচ সি- তে,
শুধু এই এক বিদ্যা শিখেছি যৌবন পুড়িয়ে দিয়ে, অস্থিমজ্জা কালি করে,
আর জানো, ঠিক সেই দোষে রোজ হয় জীবনকে গুনাগার দিতে।
তুমি হাসছো, ভাবছো ঠাট্টা করছি। ‘ ওপরওয়ালার পরেই ডাক্তারের স্থান ‘
সে আপ্তবাক্য, মিছে বলবোনা, শুনেছি তা সেরে যাওয়া রোগীদের কাছে,
কিন্তু উল্টো হলে? চেষ্টায় হেরে যাওয়া মানুষকে দোষী করে সবাই চেঁচান,
নির্ঘাত গাফিলতি, তা নইলে মানুষেরা চিরকাল বাঁচে।
এটুকুও সওয়া যেতো। যার গৃহে চলে গেছে লোক, ভগবানও দোষী তার চোখে।
আমরা তো সামান্য মানুষ। কিন্তু এখন শুধুই চিকিৎসা করার অপরাধে.
থানা থেকে এসে যায় জরুরী তলব মৌখিক অপ্রমাণিত অভিযোগে,
আর ব্রেকিং নিউজ পেয়ে মিডিয়াও নামসহ ছবি দেয় পরম আহ্লাদে।
ব্রেকিং নিউজই বটে। ভেঙে যায় , ভেসে যায় , মুছে যায় মান সম্মান,
মিডিয়া ট্রায়াল হয়, গুগলের জ্ঞানে হয় দশক পেরিয়ে শেখা বিদ্যার মাপ,
যা রটে কিছুটা বটে , প্রচলিত ধারনায় চিরচেনা পড়শীরা বেঁকিয়ে তাকান,
ভেঙে যায় তিল তিল করে গড়া পেশাদারী খ্যাতি, নামে অভিশাপ।
ভুল প্রমাণিত হলে খবর হয় না আর সেটা, এই দেশে মিডিয়ার নেই দায়ভার ,
ঠিক হলে অবশ্য আণবিক বিস্ফোরণ নেমে আসে অশ্রুত বীভৎসতায়,
কোর্টের নির্দেশে আজীবন সঞ্চয় উপড়ে পুরাতে হয় লোকসান তার,
আরো মন্দ ভাগ্য হলে, ভুলের মাসুলে তার নাম কাটা যায়।
একটাই ভুল। প্রমাণিত হোক বা না হোক, ছারখার হয়ে যাবে পেশার জীবন।
এতটা বিপদ নিয়ে রোজ জীবিকায় যায়, কোথাও কি দেখেছো এমন?
আর্যতীর্থ